শেরপুর জেলা দেশের উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্ত ঘেষা পাহাড়ি জনপদ। গারো পাহাড়ের এ জেলায় রয়েছে পাঁচটি নদ-নদী। ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতি বছর বর্ষায় জেলার নদীগুলোর পানি হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন নদীতীরের বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয়রা তখন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

অথচ জেলার গুরুত্বপূর্ণ দুই নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীতে নেই পানি পরিমাপের যন্ত্র, স্কেল বা স্বয়ংক্রিয় সতর্কবার্তা। তবে অন্য তিন নদীতে এই সুবিধা থাকায় নদীপাড়ের বাসিন্দারা প্রস্তুতি নিতে পারেন।

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা আর অনুমানের ওপর ভিত্তি করে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি পরিমাপ করা হয়। এই দুই নদীর তীরে বসবাসকারী লোকজন আগাম সতর্কবার্তা না পাওয়ায় প্রতি বছর ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হন। মূল্যবান অনেক সম্পদ তাদের নদীর পানিতে খোয়াতে হয়। 

আরো পড়ুন:

শীতলক্ষ্যায় গোসলে নেমে শিশুর মৃত্যু

হালদার পাড়ে তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে: ফরিদা আখতার

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নদী দুটিতে পানিপ্রবাহ পরিমাপের যন্ত্র বসাতে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পাঁচটি নদ-নদীর মধ্যে জেলা সদরে রয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী ও ভোগাই নদী, ঝিনাইগাতীতে মহারশি এবং শ্রীবরদী উপজেলায় সোমেশ্বরী নদী। এগুলোর মধ্যে মহারশি ও সোমেশ্বরীতে পানি পরিমাপের ব্যবস্থা নেই। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা এলাকা থেকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদি গ্রামের মধ্য দিয়ে নেমে এসেছে মহারশি। আর শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদী বালিজুড়ির খাড়ামোরা গ্রাম হয়ে উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে। বর্ষায় এই দুই নদীই ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামোরা এলাকার বাসিন্দা হুসাইন হাবিব বলেন, “বর্ষায় হুট করে পানি চলে আসে। আগেরদিন সন্ধ্যায় দেখি নদীতে পানি নাই, পরেরদিন দেখি পানি বাড়ির উঠানে। নদীর সঙ্গেই আমাদের বাড়ি। কেউ কিছু জানে না, কখন পানি আসবে। যদি আগে ভাগে পানির তথ্য পেতাম, তাহলে আমাদের অনেক সুবিধা হত।”

একই এলাকার বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, “নালিতাবাড়ীতে পানি এলে আগে থেকেই জানা যায়। কিন্তু আমাদের এই নদীতে জানা যায় না। তাই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এখন সরকার যদি এই নদীতে মেশিন বসিয়ে দেয়, তাহলে পানি এলে আমরা বুঝতে পারব। অনুমান করে কতদিন এভাবে চলবে?”

ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বাসিন্দা আলমাছ বলেন, “প্রতি বছর আমাদের এই এলাকায় পানি উঠে। নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। পানি বাড়ছে না কমছে তা দেখার জন্য বাঁশ পুঁতে রাখি। কেউ আমাদের বলে না পানি কি অবস্থা আছে। পানি মাপার মেশিন (যন্ত্র) থাকলে ভালো হত। মূলত আগাম সতর্কতা আমাদের খুব দরকার।”

দিঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, “মহারশি নদী এখানে বেশি ভাঙে। এরপর পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু প্রস্তুতি না থাকায় ঘর-বাড়ি থেকে কোনো কিছু বের করতে পারি না। জানলে তো ঘর-বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেত।”

একই এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক মিয়া বলেন, “টিভির মধ্যে দেখি কোন নদীতে কতটুকু পানি। কখন বাড়ি-ঘরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। কিন্তু সোমেশ্বরী নদীর কোনো আপডেট দেখি না। আমরা অনুমান করে যা পাই, তা-ই। অনুমান ছাড়া পানি কতটুকু আছে জানার কোনো উপায় নেই।”

সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, “কখন যে ঢলের পানি আসে, সেটার জন্য আতঙ্কে থাকতে হয়। তাছাড়া নদীতে পানি মাপার কোনো যন্ত্র নেই। আমাদের অনুমান করে সাধারণ মানুষদের বলতে হয়। যদি পানি মাপার যন্ত্র থাকত, তাহলে মানুষের ক্ষতি কম হত। আমরাও মানুষের সর্তক করতে পারতাম।”

ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, “মহারশি নদীতে পানি মাপার যন্ত্র বসানো খুবই দরকার। কারণ, একটু বৃষ্টি হলেই এই নদীর পানি উপচে যায়। পানি বেড়ে গেলেই বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ে। এছাড়া নদীর পাশেই ঝিনাইগাতী সদর বাজার। ঢলের পানি এলেই বাজারে ঢুকে পড়ে। তখন বাজারে যাওয়া যায় না। যদি নদীতে পানি মাপার যন্ত্র থাকতো তাহলে খুব ভালো হত।”

শেরপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আখিনুজ্জামান বলেন, “মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীতে পানি পরিমাপক যন্ত্র বসানো খুবই জরুরি। আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় পানি পরিমাপ করি, যা সময় সাপেক্ষ। আসলে পূর্বাভাস না দিলে তো ক্ষতি মোকাবেলা করা কষ্টসাধ্যই। তবে স্কেল বসানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, দ্রুত নদী দুটিতে স্কেল বসানো যাবে।”

ঢাকা/তারিকুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ এল ক র ব স ন দ ও স ম শ বর উপজ ল র আম দ র নদ র প পর ম প অন ম ন

এছাড়াও পড়ুন:

নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরো পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

সোমবার (৩ নভেম্বর) নোবিপ্রবির রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের  রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদেশে গমন করেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ২(চ) অনুযায়ী ‘পলায়ন’ ।

এছাড়া একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করায় ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০১’ এর ধারা ৪৭(৫) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। 

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ মে  আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সেটির জবাব যথাযথ হয়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি আপনাকে পুনরায় ৭ জুলাই বিজ্ঞ আইনজীবীর মতামত এবং ৩১ জুলাই প্রেরিত নোটিশের জবাব না দেয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭ তম সভার আলোচ্যসূচি-১৮ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪৭(৮) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (গ) অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী পরিচালক (সামরিক বরখাস্ত) পদ থেকে চূড়ান্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন এই কর্মকর্তা।

ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ