সতর্কবার্তার অভাবে বর্ষায় ভয়ে থাকে নদীপাড়ের মানুষ
Published: 6th, July 2025 GMT
শেরপুর জেলা দেশের উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্ত ঘেষা পাহাড়ি জনপদ। গারো পাহাড়ের এ জেলায় রয়েছে পাঁচটি নদ-নদী। ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতি বছর বর্ষায় জেলার নদীগুলোর পানি হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন নদীতীরের বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয়রা তখন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
অথচ জেলার গুরুত্বপূর্ণ দুই নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীতে নেই পানি পরিমাপের যন্ত্র, স্কেল বা স্বয়ংক্রিয় সতর্কবার্তা। তবে অন্য তিন নদীতে এই সুবিধা থাকায় নদীপাড়ের বাসিন্দারা প্রস্তুতি নিতে পারেন।
স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা আর অনুমানের ওপর ভিত্তি করে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি পরিমাপ করা হয়। এই দুই নদীর তীরে বসবাসকারী লোকজন আগাম সতর্কবার্তা না পাওয়ায় প্রতি বছর ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হন। মূল্যবান অনেক সম্পদ তাদের নদীর পানিতে খোয়াতে হয়।
আরো পড়ুন:
শীতলক্ষ্যায় গোসলে নেমে শিশুর মৃত্যু
হালদার পাড়ে তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে: ফরিদা আখতার
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নদী দুটিতে পানিপ্রবাহ পরিমাপের যন্ত্র বসাতে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পাঁচটি নদ-নদীর মধ্যে জেলা সদরে রয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী ও ভোগাই নদী, ঝিনাইগাতীতে মহারশি এবং শ্রীবরদী উপজেলায় সোমেশ্বরী নদী। এগুলোর মধ্যে মহারশি ও সোমেশ্বরীতে পানি পরিমাপের ব্যবস্থা নেই। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা এলাকা থেকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদি গ্রামের মধ্য দিয়ে নেমে এসেছে মহারশি। আর শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদী বালিজুড়ির খাড়ামোরা গ্রাম হয়ে উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে। বর্ষায় এই দুই নদীই ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামোরা এলাকার বাসিন্দা হুসাইন হাবিব বলেন, “বর্ষায় হুট করে পানি চলে আসে। আগেরদিন সন্ধ্যায় দেখি নদীতে পানি নাই, পরেরদিন দেখি পানি বাড়ির উঠানে। নদীর সঙ্গেই আমাদের বাড়ি। কেউ কিছু জানে না, কখন পানি আসবে। যদি আগে ভাগে পানির তথ্য পেতাম, তাহলে আমাদের অনেক সুবিধা হত।”
একই এলাকার বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, “নালিতাবাড়ীতে পানি এলে আগে থেকেই জানা যায়। কিন্তু আমাদের এই নদীতে জানা যায় না। তাই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এখন সরকার যদি এই নদীতে মেশিন বসিয়ে দেয়, তাহলে পানি এলে আমরা বুঝতে পারব। অনুমান করে কতদিন এভাবে চলবে?”
ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বাসিন্দা আলমাছ বলেন, “প্রতি বছর আমাদের এই এলাকায় পানি উঠে। নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। পানি বাড়ছে না কমছে তা দেখার জন্য বাঁশ পুঁতে রাখি। কেউ আমাদের বলে না পানি কি অবস্থা আছে। পানি মাপার মেশিন (যন্ত্র) থাকলে ভালো হত। মূলত আগাম সতর্কতা আমাদের খুব দরকার।”
দিঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, “মহারশি নদী এখানে বেশি ভাঙে। এরপর পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু প্রস্তুতি না থাকায় ঘর-বাড়ি থেকে কোনো কিছু বের করতে পারি না। জানলে তো ঘর-বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেত।”
একই এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক মিয়া বলেন, “টিভির মধ্যে দেখি কোন নদীতে কতটুকু পানি। কখন বাড়ি-ঘরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। কিন্তু সোমেশ্বরী নদীর কোনো আপডেট দেখি না। আমরা অনুমান করে যা পাই, তা-ই। অনুমান ছাড়া পানি কতটুকু আছে জানার কোনো উপায় নেই।”
সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, “কখন যে ঢলের পানি আসে, সেটার জন্য আতঙ্কে থাকতে হয়। তাছাড়া নদীতে পানি মাপার কোনো যন্ত্র নেই। আমাদের অনুমান করে সাধারণ মানুষদের বলতে হয়। যদি পানি মাপার যন্ত্র থাকত, তাহলে মানুষের ক্ষতি কম হত। আমরাও মানুষের সর্তক করতে পারতাম।”
ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, “মহারশি নদীতে পানি মাপার যন্ত্র বসানো খুবই দরকার। কারণ, একটু বৃষ্টি হলেই এই নদীর পানি উপচে যায়। পানি বেড়ে গেলেই বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ে। এছাড়া নদীর পাশেই ঝিনাইগাতী সদর বাজার। ঢলের পানি এলেই বাজারে ঢুকে পড়ে। তখন বাজারে যাওয়া যায় না। যদি নদীতে পানি মাপার যন্ত্র থাকতো তাহলে খুব ভালো হত।”
শেরপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
ঢাকা/তারিকুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ এল ক র ব স ন দ ও স ম শ বর উপজ ল র আম দ র নদ র প পর ম প অন ম ন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।