বিএনপি সংস্কারবিরোধী, এটা একটি মহলের পরিকল্পিত অপপ্রচার: ফখরুল
Published: 6th, July 2025 GMT
বিএনপি সংস্কারবিরোধী—এটা একটি মহলের পরিকল্পিত অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু একটি মহল, একটি চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আজ রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে মিডিয়ার কিছু অংশ এবং কিছু ব্যক্তিত্ব বিএনপির সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম কথা বলছে—যেগুলো সঠিক নয়। বিএনপির কমিটমেন্ট টু রিফর্মস, এটা নিয়ে কোশ্চেন করার কোনো সুযোগ নেই।’
নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র দেখছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সে কথা আমি এই মুহূর্তে বলব না। তবে নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করতে চায়, তারা নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা নিশ্চয়ই জুলাই–আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের শক্তি নয়।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।বিএনপি কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে বা অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে নয়; নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য বিএনপি ১৫ বছর লড়াই–সংগ্রাম করেছে। এর প্রাথমিক বিষয় ভোটের অধিকার, বাক্স্বাধীনতা, ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছে বিএনপি। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে, তার বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে সংস্কার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে আন্তরিক—এটা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ২০১৬ সালে বিএনপি ঘোষিত ভিশন ২০৩০, ২০২০ ও ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং তারপরে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কারের কর্মসূচির কথা জানান। একই সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে সংস্কারপ্রক্রিয়ায়ও বিএনপি সহযোগিতা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত ও ৫টিতে ভিন্ন মত দিয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।তবে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কিছু কিছু প্রস্তাবে দ্বিমত বা ভিন্নমতও দিয়েছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ, নির্বাচিত সরকার তথা রাষ্ট্রকাঠামোকে দুর্বল ও অকার্যকর করার কোনো প্রস্তাবের যুক্তিসংগত বিরোধিতা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি।’ তাঁর মতে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য কোনো সরকারকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় দুর্বল ও অকার্যকর করা অবশ্যই সংস্কারের মূল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে এমন কোনো প্রয়াসে সমর্থন জানানো সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এমন সমর্থন থেকে বিরত থাকার অর্থ সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা নয়, বরং এই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান।
কত প্রস্তাবে বিএনপি সম্মত, জানালেন মহাসচিব
এ সময় বিএনপির মহাসচিব ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তাঁর দলের আলোচনা এবং এ পর্যন্ত কতগুলো প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে, তার একটা বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতে বিএনপি সম্মত হয়েছে। কেবল ২৯ নম্বর সুপারিশে আইনের মাধ্যমে করার পরিবর্তে আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার কথা বলেছে বিএনপি। এটা না হলে দুদকের কার্যক্রমকে অহেতুক বিলম্বিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত ও ৫টিতে ভিন্ন মত দিয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘১১টি প্রস্তাবে আমরা একমত হতে পারিনি। যেগুলো দেশে প্রদেশ সৃষ্টি, পদোন্নতি প্রশাসনিক অসংগতির বিষয় উল্লেখযোগ্য যে পদোন্নতির বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় কার্যকর রয়েছে।’
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টি সুপারিশে একমত ও ৯টিতে আংশিক একমত হওয়ার কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৮টি প্রস্তাবে ভিন্নমত পোষণ করে যুক্তিসহ পরামর্শ দিয়েছি। উল্লেখযোগ্য যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাবিষয়ক সব প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। তবে এর কিছু বিষয়ে নির্বাচিত সংসদে আইন প্রণয়ন কিংবা ইতিমধ্যে কোনো অধ্যাদেশ হলে তা সংসদে রেটিফাই ও সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন হবে।’
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি সুপারিশে আমরা দফাওয়ারি মতামত দিয়েছি। অধিকাংশ সুপারিশে একমত হয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ—দুই বিষয়ে আমরা ছাড় দিয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিধান বিশ্বের কোথাও না থাকার পরেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা সম্মত হয়েছি।মির্জা ফখরুলনির্বাচনী ব্যবস্থাবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশে মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ৬৪টিতে ভিন্নমতসহ একমত হয়েছেন বলে জানান বিএনপির মহাসচিব। ভিন্নমতসহ একমত হওয়ার ব্যাখ্যায় বলেছেন, এসব বিষয়ে পরিবর্তনে একমত হয়ে বিভিন্ন আইনে ও বিধিতে সংশোধনী অধিকতর কার্যকর হবে, সেটা প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৪টি বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাসংক্রান্ত ১২টি আইন ও ৬টি নীতিমালা আছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও নির্দিষ্ট বিধান আছে। এসব প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে স্পষ্টতই বাধা সৃষ্টি করে তাদের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি সুপারিশে আমরা দফাওয়ারি মতামত দিয়েছি। অধিকাংশ সুপারিশে একমত হয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ—দুই বিষয়ে আমরা ছাড় দিয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিধান বিশ্বের কোথাও না থাকার পরেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা সম্মত হয়েছি।’
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়েও বিএনপি তাদের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় সংসদে সংসদ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটিসহ আসনসংখ্যার অনুপাতে সভাপতির পদ দিতেও আমরা সম্মত হয়েছি। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসংক্রান্ত আর্টিকেল ৪৯ পরিবর্তনে আমরা সম্মত হওয়ায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, ন্যায়পাল আইন যুগোপযোগী করা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানাবিন্যাসে সংস্কার আনার জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধন ও আইনের মাধ্যমে বিশেষায়িত কমিটি গঠনেও বিএনপি একমত হয়েছে বলে জানান দলের মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশনের বিষয়ে এখনো আলোচনায় আসেনি। তবে ওই কমিশনে আমাদের দলের প্রতিনিধিবৃন্দের কাছে আমরা যতটুকু জেনেছি, তাতে র্যাব বিলুপ্তিসহ প্রায় সব বিষয়েই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে সম্পৃক্ত না করে তাদের প্রতিনিধিত্ব কিংবা প্রত্যাশার ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন করার অধিকার কোনো ব্যক্তি, দল কিংবা কমিশনের আছে কি না—তা বিবেচনায় নিতে হবে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি বলে আমরা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে অধিক ক্ষমতা দিলে যেমন ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়, ঠিক তেমনি নির্বাচিত সরকার এবং সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে রাষ্ট্র দুর্বল, ভঙ্গুর ও অকার্যকর হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব র মত দ য় ছ ল ইসল ম ন ব এনপ ক র যকর ব যবস থ উল ল খ সরক র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
সময়ক্ষেপণ ও নতুন বিতর্ক কাম্য নয়
আমাদের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু আমাদের শাসকেরা এই নীতি মান্য করেননি বলেই বাংলাদেশ বারবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে যে সমঝোতা ও সহিষ্ণুতা প্রত্যাশিত ছিল, তা তাঁরা কতটা প্রতিপালন করেছেন, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংস্কারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া, যার অংশ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে; যার সাফল্যের ওপরই ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামো অনেকটা নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আন্তরিক হলেই হবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকেও সমঝোতার মনোভাব পোষণ করতে হবে।
প্রত্যাশা ছিল, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবসের আগেই জাতীয় সনদের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে। দিনটি এ কারণে স্মরণীয় যে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়, যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে জুলাইয়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে কমিটি গঠন ইত্যাদি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হয়েছে। কিন্তু উচ্চকক্ষ ও নারী আসনের ভোটপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকেই গেছে।
বহুদলীয় গণতন্ত্রে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, নীতি ও আদর্শের ফারাক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। গণতন্ত্র মানে হলো একসঙ্গে চলা। সেখানে কাউকে যেমন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না, তেমনি ‘সালিস মানি, তালগাছ আমার’ মনোভাবও পরিত্যাগ করতে হবে।
বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে মোটামুটি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে, সেসব বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। সবকিছু আবার গোড়া থেকে শুরু করলে জটিলতা আরও বাড়বে। সম্প্রতি কোনো কোনো দল সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা বলেছে।
ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন ও এখনো পরীক্ষিত নয়। সে ক্ষেত্রে উভয় কক্ষে এই পদ্ধতি এখনই ব্যবহার না করে উচ্চকক্ষের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে। নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদে যদি প্রত্যক্ষ ভোটে নারী সদস্যরা নির্বাচিত হতে পারেন, এখন কেন পারবেন না? কেন তাঁদের দলীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে?
আমরা যদি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, তাহলে বিভেদ ভুলে ঐক্যের ওপরই জোর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, সমাজের কোনো অংশকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না। নারী-পুরুষ-ধর্ম-জাতিনির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মদানকে যদি আমরা অসম্মান না করতে চাই, তাহলে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে আসতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।