অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের যে ভূমিকা হওয়ার কথা ছিল, সেটি থেকে আমরা বিচ্যুত হয়েছি। আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক বিশ্বাস ও রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকবে। কিন্তু ওই রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক প্রভাবগুলো আমরা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ফেলতে পারি না। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, এখানে আমরা মেধার বিকাশ ঘটাতে এসেছি। রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক প্রভাব যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে।’

আজ রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘অবশ্যই তোমরা বিশাল কিছু অর্জন করেছ। কিন্ত তোমাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ, শ্রমজীবী মানুষ তাঁরাও এই অর্জনে ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের সমর্থন ছাড়া তোমরা এটা করতে পারতে না। তোমাদের এই সংগ্রামে বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী এগিয়ে এসেছিল। শিক্ষকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনো কাজ তোমাদের করা যাবে না। তোমাদের হতাশা থাকতে পারে, তোমাদের কিছু দাবিদাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু তার জন্য জনদুর্ভোগকারী কোনো কাজ তোমরা কোরো না।’

অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ অধ্যাপক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী সংস্কার। কিন্তু রাতারাতি এটি সম্ভব নয়। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে এম আজহারুল ইসলাম।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। আরও বক্তব্য দেন সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান প্রমুখ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারকপত্রের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা আয়োজন ছিল। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন-১ চত্বরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা, বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। এর পর একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক উপদ ষ ট আম দ র আবর র

এছাড়াও পড়ুন:

ছেঁউড়িয়ায় লালন স্মরণোৎসব শুরু শুক্রবার

কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর ১৩৫তম তিরোধান স্মরণে তিনদিনের স্মরণোৎসব। এবারই প্রথম এ আয়োজন হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। এ নিয়ে খুশি সাধু-ভক্ত ও লালন অনুষারীরা।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে এ আয়োজনের শুভ উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধু-ভক্তরা ছুঁটে এসেছেন লালন আঁখড়াবাড়ি ও মাজার প্রাঙ্গণে।

আরো পড়ুন:

পটুয়াখালীতে চলছে প্রবারণা উৎসব

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হিন্দু মহাজোট নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা বিনিময়

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এবারে বড় আকারে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে লালন স্মরণোৎসব, এ উপলক্ষ্যে তিনদিনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনদিনের এ স্মরণোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী থাকবেন বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার সাধুদের রীতিতে অনুষ্ঠান শুরু হলেও গ্রামীণ মেলা চলবে তিনদিন ধরে। সেই সাথে আলোচনা সভা ও বসবে গভীর রাত অবধি লালনের গানের আসর। মেলা শেষ হবে ১৯ অক্টোবর রোববার।

সাধু ভক্তরা জানান, তোকাল পরে এসে আধ্যাত্মিক চিন্তার দার্শনিক মহামতি লালনের সংগীত ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে মুক্ত চিন্তক গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যদিও এর আগে কার্যত বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবদ্দশা থেকে চলে আসা দোল উৎসব এবং তিরোধান দিবস স্মরণে তার ভক্ত অনুসারীরা একেবারেই নিজস্ব ঘরানার রীতিতে আচার অনুষ্ঠানে পালন করতে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভক্তদের আগমনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাঁইজির তীর্থধাম।

দর্শনাথী জেরিন বলেন, “প্রতি বছরই আমি এখানে আসি। এবারে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়ায় দর্শনার্থীরা আগেই আশা শুরু করেছে। প্রতি বছরের তুলনায় আরো বেশি মানুষের সমাগম হবে এবার।”

লালন শাহের ১৩৫তম স্মরণোৎসব ঘিরে লালন একাডেমী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।

লালন মেলাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। সেই সঙ্গে বিদের্শী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষকে গুরুর দিক্ষা দিতেই মানবতার পথ প্রদর্শক হিসেবে লালন শাহ এর আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়া কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্য-ভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। লালন সাঁইয়ের সৃষ্টির কৃর্তি বিশ্বে সর্বাজনীন হয়ে উঠেছে, তাকে নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা।

লালন সাঁই জাত-ধর্মের সিমাবদ্ধতার বাইরে মানুষকে সবার উপর তুলে ধরেছেন। লালন শাহ’র অমরত্বের জন্যই কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া এখন বিশ্ব মরমীর তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তার গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তার গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য আমরণ কাজ করেছেন এই মরমী সাধক।

ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লালনের আখড়াবাড়িতে মানুষের ভিড়ে মুঠোফোন চুরি, আটক ৬
  • নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • ছেঁউড়িয়ায় লালন স্মরণোৎসব শুরু শুক্রবার