তমজিদ উদ্দিন কথা বলতে পারেন না, শোনেন না কানেও। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবু চমৎকার ছবি আঁকেন, নিখুঁত বিন্যাসে ব্যানার-পোস্টার ও দেয়ালিকা লেখেন। এভাবে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও তমজিদ উদ্দিন কারও বোঝা হতে চাননি। তাঁর দাবি, নিজের চেষ্টায় এই দক্ষতা অর্জন করে দুই যুগ ধরে কাজটি করে যাচ্ছেন।

তমজিদ উদ্দিনের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার বাঁশরী গ্রামে। একই গ্রামের মৃত শামছুল ইসলাম ও শাহেরা আক্তার দম্পতির পঞ্চম সন্তান তিনি। বর্তমানে মদন পৌর শহরের শ্যামলী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সপরিবারে থাকেন তমজিদ। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তমজিদ উদ্দিনের সংসার। তাঁর স্ত্রীও বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। ছয় বছরের বড় মেয়ে তমা আক্তার স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করছে। মেজ মেয়ের বয়স চার আর ছেলের বয়স দুই বছর।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও তমজিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তমজিদ উদ্দিনের বয়স যখন আড়াই বছর, তখন তাঁর একবার টাইফয়েড জ্বর হয়। সেই থেকে তিনি বাক্‌ ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ওই সময় চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে এসব শারীরিক সমস্যা সঙ্গে করেই বেড়ে ওঠেন তিনি। সমবয়সীদের স্কুলে যেতে দেখে তাঁর ইচ্ছা জাগলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্র্যের কারণে পেরে ওঠেননি। মাত্র আট বছর বয়সে স্থানীয় বাজারের একটি চায়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখানে বঞ্চনা সহ্য করতে না পেরে পরে কাঠের আসবাব তৈরির একটি দোকানে কাজে যোগ দেন। কিন্তু সেখানেও প্রতিবন্ধকতার কারণে ক্রেতাদের অবহেলার পাত্র হতে হয়। বছর পাঁচেক পর মনঃকষ্টে সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।

এর মধ্যে অবাক করার মতো একটি ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেন তমজিদের বড় ভাই তৌহিদ মিয়া। তিনি বলেন, তমজিদের বয়স যখন প্রায় ১৫, তখন এক রাতে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এরপর শুরু করেন কান্না। পরদিন সকালে তাঁর প্রতিবেশী এক বন্ধুর কাছ থেকে কাগজ-কলম এনে বাড়িতে বসে ছবি আঁকা শুরু করেন তমজিদ। এর কিছুদিন পর থেকে নিজে নিজেই বাংলা লেখা শুরু করেন। এমন প্রতিভা দেখে পরিবারের লোকজন তাঁকে রংতুলি কিনে দেন। এর পর থেকে তমজিদ দক্ষতার সঙ্গে রংতুলির কাজ করে যাচ্ছেন।

সপরিবারে তমজিদ উদ্দিন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তমজ দ র ন তমজ দ পর ব র র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জে তাজিয়া মিছিল দেখতে সড়কের পাশে মানুষের ভিড়

মানিকগঞ্জে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে জেলা শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছিল মানুষের ভিড়।

আজ রোববার পবিত্র মহররমের তাজিয়া মিছিল দেখতে তাঁরা এই দীর্ঘ পথে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান করেন। সড়কের পাশে ভবনগুলোর ছাদেও মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মানিকগঞ্জে শত বছরের প্রাচীন গড়পাড়া ইমামবাড়ি অন্যান্য বারের মতো এবারও পবিত্র আশুরা পালন করছে। এ উপলক্ষে ১০ দিন ব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।

আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে দেশের অন্যতম বড় তাজিয়া মিছিল বের হয়। হজরত ইমাম হোসেনের শেষ মঞ্জিলের নকশা ‘তাজিয়া’, তাঁর নিজের ব্যবহার করা ঘোড়া ‘দুলদুল’ এবং কারবালা যুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী নিশান নিয়ে হাজার হাজার ইমামভক্তরা এই শোকমিছিলে অংশ নেন। বিগত সময়ের মতো এবারও শোকমিছিলে ‘হায় হোসেন, হায় ইমাম’ শোকধ্বনি গাইবেন ইমামভক্তরা।

এ শোকমিছিল মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে জেলা শহরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিল দেখতে সহস্রাধিক মানুষ সড়কের দুই পাশে ভিড় করেন।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাজিয়া মিছিল দেখতে আসা শামীম হোসেন বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে কারবালার ময়দানে শোকাবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সমবেদনা জানাতে এখানে এসেছি।’

মিছিল শেষে আজ সন্ধ্যায় সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর আশুরার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা সম্পর্কে এক সভা হয়। এতে গড়পাড়া ইমামবাড়ি দরবার শরিফের প্রধান খাদেম এবং বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ভিএসজেএ) সভাপতি শাহ আরিফুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ শোকসভায় কারবালার মহান শহীদদের মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন। আলোচনা সভা শেষে ইসলাম ও বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গড়পাড়া ইমামবাড়ির অন্যতম খাদেম শাহ্ শাহজাদা রহমান বাঁধন এ পর্ব পরিচালনা করেন।

এদিকে শোকমিছিল উপলক্ষে গড়পাড়া ইমামবাড়ি ও জেলা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়। মিছিলে সুশৃঙ্খলা রক্ষায় ইমামবাড়ির স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সেনাসদস্যরা সড়কে টহলের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ির পাশে তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। মেলায় গেরস্তালি বিভিন্ন জিনিসপত্র, মনিহারি, লোহা-তামার জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষজন মেলায় ভিড় করেন।

শাহ আরিফুর রহমান বলেন, ‘মুসলমানদের কাছে ১০ মহররমের দিন অত্যন্ত শোকের। ইয়াজিদ চেয়েছিল রাজতন্ত্র কায়েম করতে। তবে ইসলাম তথা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নীতি ও আদর্শের মধ্যে রাজতন্ত্র ছিল না। ইসলাম উদার ও শান্তির ধর্ম। ইমাম হোসেন ও তাঁর মাতামহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী চলতে বলেছেন। দেখিছেন ইসলাম সত্য ও শান্তির ধর্ম; ইসলাম অসত্য, অন্যায় ও অবিচারের ধর্ম নয়। ইমাম হোসেনের সেই শিক্ষাই আমাদের নেওয়া উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ