মানিকগঞ্জে দল গোছানো ও নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি, সক্রিয় জামায়াতও
Published: 13th, July 2025 GMT
একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল মানিকগঞ্জ জেলা। শুরু থেকে ২০০৮ সালের আগপর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জের সব কটি আসনই ধরে রেখেছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব কটি আসনে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
বছরখানেক আগে নানা চাপে ছোট পরিসরে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন মামলায় জর্জরিত জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতির মাঠে চাঙা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণায় প্রতিটি আসনে জানান দিচ্ছেন দলটির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আসন ফিরে পেতে ইতিমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন তাঁরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। গত ৫ আগস্টের পর দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি দলটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে জামায়াত জেলার তিনটি আসনেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।
খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে খেলাফত মজলিস প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে জেলায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতাদের নির্বাচনী তৎপরতা এখনো চোখে পড়েনি।
আওয়ামী লীগের আমলে জেলা শহরে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা ছিল কঠিন বিষয়। কারণ, দলীয় শত শত নেতা-কর্মী ‘গায়েবি’ মামলার আসামি ছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে দলের নেতাদের অনেকেই বাড়ি বাইরে থাকতেন। পুলিশি হয়রানির কারণে দলীয় কার্যালয়েও বসতে পারতেন না নেতা-কর্মীরা। এরপরও পুলিশের বাধা ও হয়রানি উপেক্ষা করে শহরের আশপাশে দলীয় কর্মসূচি পালন করতেন নেতা-কর্মীরা। তবে এখন দিন পাল্টেছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী অংশ নিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে দলীয় কার্যালয়ও এখন সরব।
সম্প্রতি ৬১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে বর্ধিত সভাও করেছে। সভায় ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর জেলার নির্বাচনী মাঠে দলটি নেতা-কর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
মানিকগঞ্জ-১
মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) আসনে দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত প্রচার-প্রচারণা ও জনসংযোগ করে আসছেন জেলা বিএনপির ১ নম্বর সদস্য এস এ জিন্নাহ কবীর। তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকার ২২টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩১ দফার প্রচারণা সভা ও উঠান বৈঠক করেছেন তিনি। দুটি উপজেলায় সমাবেশ করেছেন। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তিনি ভোটারদের কাছে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন।
এ আসনে দলের প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খোন্দকার আকবর হোসেন ওরফে বাবলুও প্রচার চালাচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সম্প্রতি দল থেকে বহিষ্কৃত) তোজাম্মেল হকও ভোটারদের আস্থা অর্জনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ইউরো বাংলা হার্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক। এ আসনে খেলাফত মজলিসের জেলা কমিটির সহসভাপতি মুফতি আশরাফুল আলম এবং দলটির শিবালয় উপজেলা কমিটির সভাপতি মুফতি শরিফুল ইসলামের মধ্যে একজনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা রয়েছে।
তবে এ আসনে জাতীয় পার্টি, এনসিপি, সিপিবির পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়নি। তাঁদের রাজনৈতিক তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
মানিকগঞ্জ-২
মানিকগঞ্জ-২ (হরিরামপুর, সিঙ্গাইর ও জেলা সদরের একাংশ) আসনে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক নেতাকে তৎপর দেখা গেছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মঈনুল ইসলাম খান এবং সিঙ্গাইর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবিদুর রহমান খান দলের মনোনয়নদৌড়ে আছেন।
এ আসনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মো.
মানিকগঞ্জ-৩
সাটুরিয়া উপজেলা ও জেলা সদরের সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-৩ আসন। এ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নূরতাজ আলম বাহার বলেন, জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আফরোজা খানম। মামলা, হামলা ও হয়রানির শিকার নেতা-কর্মীদের পাশে আছেন তিনি। জেলায় যত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে, মূলত আফরোজা খানমের নেতৃত্বেই হয়েছে। নির্বাচনী আসনের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সভা, উঠান বৈঠক করছেন তিনি।
এ আসনে বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামিলুর রশিদ খান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতাউর রহমান এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোতালেব হোসেনও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরাও তাঁদের মতো করে প্রচার শুরু করেছেন।
জামায়াত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তরাঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা দেলোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে। তা ছাড়া এ আসনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক খন্দকার তাওহিদুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুকের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া হবে।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ক কমিটি গঠন করেছে এনসিপি। এ কমিটির এক নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী এ এইচ এম মাহফুজ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা এখনো চিন্তা করছি না। আমাদের (এনসিপি) এখন নিবন্ধন জরুরি। আমরা নিবন্ধন ও প্রতীক পাওয়ার পর জনগণ যদি বলে নির্বাচনে প্রার্থী দেন, তখন আমরা নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যাপারে আলোচনা করব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক কম ট র সদস য ম ন কগঞ জ কর ম দ র কম ট র স ল ইসল ম দল য় ক কর ছ ন কর ম র এ আসন উপজ ল এনস প গঠন ক আফর জ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতি বুঝি না, করিও না: অপু বিশ্বাস
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস।
আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন অপু বিশ্বাস। শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
আজ আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন অপু বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আমি একজন অভিনয়শিল্পী, অভিনয় আমার মূল কাজ। অভিনয়ের জন্য আমি অনেক কিছু করেছি। আমি রাজনীতি বুঝি না, করিও না। আমার আইনজীবীরা আইনের বিষয়ে আরও যত্নশীল। তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন।’
এর আগে গত ১০ জুলাই অপু বিশ্বাস সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জামিননামা দাখিল করেন। এ তথ্য উল্লেখ করে অপু বিশ্বাসের আইনজীবী আবুল বাশার কামরুল বলেন, ‘গত ২ জুন উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পান অপু বিশ্বাস। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অপু বিশ্বাস স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।’
এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় একজন ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে। এই মামলায় অপু বিশ্বাস ছাড়াও আরো ১৬ জন শিল্পীর নাম রয়েছে এজাহারে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা সরকারি দলের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
একই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার করা হয় চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে। দুইদিনের মাথায় জামিন পান এই অভিনেত্রী।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। এসময় এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা তিনশ’-চারশ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন এনামুল হক। এই মামলায় ২০৮ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি অপু বিশ্বাস।
মামলায় অপু বিশ্বাস ছাড়াও আশনা হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে আসামি করা হয়েছে।