ভারত শাসিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে মাসব্যাপী হিন্দু তীর্থযাত্রা শুরু হয়েছে। গত এপ্রিলে বন্দুকধারীদের হামলায় যেই এলাকায় ২০ জনের বেশি পর্যটক নিহত হয়েছিলেন, সেখান থেকে বৃহস্পতিবার অনেক তীর্থযাত্রী যাত্রা শুরু করেছেন।

ওই হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এই পরিস্থিতিতে পারমাণবিক শক্তিধর চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ নিজেদের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।

গত বছর কাশ্মীরের ওই অমরনাথ তীর্থযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ লাখ ভক্ত। এটি একটি পবিত্র বরফ স্তম্ভ, যা পেহেলগাম শহরের ওপরের বন ঘেরা হিমালয় পাহাড়ে একটি গুহায় অবস্থিত। পেহেলগামেই গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা হিন্দু পর্যটক।

নয়াদিল্লির দাবি, এপ্রিলের হামলাকারীদের পাকিস্তান পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামাবাদ তা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। দুই দেশই পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নেয়। উত্তেজনা প্রশমনে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়।

কিন্তু ৭ মে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও তাৎক্ষণিক এ হামলা প্রতিরোধ করে। চার দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ শেষ হয়। সংঘাতে উভয় পক্ষে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

উচ্চপ্রযুক্তির নজরদারি ব্যবস্থা

আল জাজিরার সাংবাদিক উমর মেহরাজ জানান, ‘তীর্থযাত্রীরা প্রথমে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে, এখন তাঁরা আশ্বস্ত। কারণ বর্তমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী।’ তিনি বলেন, ‘এবারের তীর্থযাত্রা আরও বেশি সতর্কব্যবস্থা ও প্রযুক্তিনির্ভর। প্রায় ৬০০ অতিরিক্ত আধাসামরিক ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে। এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা-বেষ্টিত যাত্রা।’

উত্তর প্রদেশ থেকে আগত মুনেশ্বর দাস শাস্ত্রী বলেন, ‘কোনো ভয় নেই। আমাদের সেনাবাহিনী পাহারা দিচ্ছে। কেউ আমাদের দিকে চোখ তুলেও তাকাতে পারবে না।’

তীর্থযাত্রা উপলক্ষে ভারত সরকার এবার ৪৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে, যারা উচ্চপ্রযুক্তির নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করছেন।

কাশ্মীর পুলিশের প্রধান ভি কে বার্দি বলেন, ‘তীর্থযাত্রা যেন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা বহুস্তরবিশিষ্ট ও সুসংগঠিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

নিরাপত্তা জোরদারে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি), চেহারা শনাক্তকরণ যন্ত্র (ফেসিয়াল রিকগনিশন), তল্লাশি চৌকি এবং প্রতি ১০০ মিটার পরপর একটি করে আধাসামরিক ক্যাম্প বসানো হয়েছে।

নিবন্ধন বাধ্যতামূলক

তীর্থযাত্রীদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাঁরা সশস্ত্র নিরাপত্তা বহরের সঙ্গে গাড়িতে যাত্রা করেন এবং পরে পায়ে হাঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। বনাঞ্চলে সড়ক ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী বাংকার। ভক্তদের কাছে রয়েছে রেডিও কার্ড, যা তাদের অবস্থান জানাতে সাহায্য করে।

পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে তীর্থযাত্রীদের গুহায় পৌঁছাতে কয়েক দিন লেগে যায়। শেষ যেখান পর্যন্ত গাড়ি যায়, সেখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উঁচু পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। গুহাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ মিটার (১২ হাজার ৮০০ ফুট) উঁচু, দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।

উত্তর প্রদেশ থেকে আসা ২৯ বছর বয়সী উজ্জ্বল যাদব বলেন, ‘এখানে যা কিছু ঘটেছে, তাতে আমি ভয় পাইনি। আমি বাবার (বরফের গঠন) দর্শন পেতেই এসেছি। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কেউ চাইলেও কিছু করতে পারবে না।’

কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত জম্মু-কাশ্মীরে শীর্ষ প্রশাসক মনোজ সিনহা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরছে।’ তবে, চলতি বছর তীর্থযাত্রী নিবন্ধন ১০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

একসময় স্থানীয় কয়েক হাজার ভক্তের অংশগ্রহণে সীমিত ছিল এই তীর্থযাত্রা। কিন্তু ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে তা ধীরে ধীরে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহের পর থেকে ভারত সরকার এই বার্ষিক তীর্থযাত্রাটিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে আসছে। এবারের যাত্রা চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত।

বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তীর্থযাত্রা তাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু এটি হিন্দু আধিপত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হলে, তারা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

এপ্রিলের হামলাকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। গত ২২ জুন ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা জানায়, পেহেলগাম এলাকা থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে, যারা হামলাকারীদের খাবার, আশ্রয় ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছিল।

ভারতীয় পুলিশ তিনজন হামলাকারীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে, যাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানের নাগরিক বলে দাবি করা হয়েছে।

২০১৭ সালে সন্দেহভাজন বিদ্রোহীরা এক তীর্থযাত্রী বাসে হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সাইপ্রাসে কি ‘মিনি ইসরায়েল’ গড়ে উঠছে

গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীরা যেভাবে বাড়ি-জমি কিনছেন, তা নিয়ে সে দেশের জনমনে এবং রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে লারনাকা ও লিমাসল এলাকায় ইসরায়েলিদের জায়গা–জমি কেনার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।

বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরায়েল যেন ধীরে ধীরে সাইপ্রাসে তাদের একধরনের ‘অঘোষিত উপস্থিতি’ তৈরি করে ফেলছে।

এখন গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ফলে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাসের স্বঘোষিত তুর্কি প্রজাতন্ত্রের (টিআরএনসি) দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

‘নতুন ইসরায়েল’—এ কথা এখন গ্রিক সাইপ্রাসের রাজনীতিতে জোরালোভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল একেলের নেতা স্টেফানোস স্টেফানু এই পরিস্থিতিকে ‘পরিকল্পিত বসতি স্থাপন কৌশল’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, গ্রিক সাইপ্রাস যেন ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

জনসভায় দেওয়া বক্তৃতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একেলের নেতারা গ্রিক সাইপ্রাসকে এখন ‘ইসরায়েলের দখলে নতুন দেশ’ বলেও আখ্যায়িত করছেন। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ইসরায়েলি উপস্থিতি নিয়ে সেখানে একটি গুরুতর রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

স্টেফানু দাবি করেছেন, ইসরায়েলি নাগরিকেরা সেখানে যে বসতি গড়ে তুলছেন, তা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয়। এর মধ্যে রয়েছে শুধু ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য আবাসন প্রকল্প, তাঁদের নিজস্ব শিক্ষা, খাবার, উপাসনালয় ও নিরাপত্তাব্যবস্থা। স্থানীয় সমাজের সঙ্গে মেলামেশার পরিবর্তে নিজেদের আলাদা করে রাখার মতো জায়গা বানাচ্ছেন তাঁরা। এর ফলে এই বসতির বাসিন্দারা স্থানীয় সংস্কৃতি বা সমাজে মিশে যাচ্ছেন না, বরং নিজেদের আলাদা একটি ‘মিনি ইসরায়েল’ বানিয়ে নিচ্ছেন।

এই বসতি স্থাপনের পেছনে সক্রিয় সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ছাবাদ’। এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় অতিরক্ষণশীল ইহুদি ধর্মীয় আন্দোলন। ছাবাদ ইতিমধ্যে গ্রিক সাইপ্রাসে সিনাগগ (ইহুদি উপাসনালয়), কিন্ডারগার্টেন (শিশু শিক্ষাকেন্দ্র), কোশার খাবারের দোকান এবং কবরস্থানের মতো কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিশ্লেষকদের মত হলো, ইসরায়েলি সম্প্রদায় শুধু পর্যটক বা অস্থায়ী বাসিন্দা নন, তাঁরা গ্রিক সাইপ্রাসে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত উপস্থিতি গড়ে তুলছেন। তাঁরা বলছেন, সিনাগগ, কবরস্থান, কোশার খাবারের দোকান, কিন্ডারগার্টেন ইত্যাদি অবকাঠামো স্থাপন আসলে একটি স্থায়ী প্রভাব বিস্তারের অংশ, যা ভবিষ্যতের কোনো সংকটকালে সামাজিক প্রভাব বা গোপন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে।

তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাস এই পরিস্থিতিকে বহুস্তরবিশিষ্ট ঝুঁকি হিসেবে দেখছে। তুরস্কের দৈনিক পত্রিকা মিল্লিয়েত-এর এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষকেরা বলছেন, গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে কেবল জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নয়, বরং একটি জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবেও দেখা উচিত।

আঙ্কারার সোশ্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এমেতে গোজুগোজেল্লি সেখানকার সংবাদমাধ্যম মিল্লিয়েত-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি কেবল জমি কেনাবেচার বিষয় নয়—এটি নিরাপত্তা, গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, এমন ধর্মীয় গোষ্ঠী, যারা শক্তিশালী মতাদর্শিক নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করে, তারা নজরদারি, প্রচার এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মতো কাজও করতে পারে।

তিনি বিশেষভাবে ছাবাদ সংগঠনের কার্যক্রমের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ, এই সংগঠনের প্রভাব এরই মধ্যে তুর্কি সাইপ্রাস পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাহ্যিকভাবে নিরীহ দেখালেও এই ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অনেকে বৃহত্তর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে দেখছেন। এর মধ্যে অনেকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা ডিপ্লোম্যাসি, গোপন গোয়েন্দা কার্যক্রম বা সমাজে মতাদর্শগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা আছে বলে মনে করছেন।

গোজুগোজেল্লি সতর্ক করে বলেন, এই গোষ্ঠীগুলো ‘সফট পাওয়ার’ (নরম কৌশলগত শক্তি) হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তারা এমন বিকল্প জনসমষ্টি তৈরি করতে পারে, যারা ইসরায়েলের নীতির প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। এর ফলে গ্রিক ও তুর্কি সাইপ্রাস উভয়ের রাজনৈতিক অখণ্ডতা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ভূরাজনৈতিক প্রভাব

এ ঘটনাগুলো এমন সময়ে ঘটছে, যখন তুরস্ক পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামুদ্রিক সীমা নিয়ে নানা জটিল বিরোধের মুখে রয়েছে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস ও গ্রিক সাইপ্রাস নিয়ে গঠিত একটি কৌশলগত জোটকে বিশ্লেষকেরা তুরস্কের আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিরোধে গঠিত প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে দেখছেন। এই জোট মূলত গ্যাস অনুসন্ধান, যৌথ সামরিক মহড়া ও প্রতিরক্ষা সমন্বয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি তুরস্ককে সামুদ্রিকভাবে কার্যত ঘিরে ফেলেছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, গ্রিক সাইপ্রাসে নতুন ইসরায়েলি বসতিগুলো এই বৃহত্তর কৌশলগত নেটওয়ার্কের অংশ হতে পারে। যদি লারনাকা ও লিমাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সামরিক পর্যায়ের নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়, তাহলে তা তুরস্কের নৌ ও বিমান কার্যক্রম নজরদারির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

নাগরিক নাকি গোয়েন্দা

পর্যবেক্ষকদের মতে, গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের আগমনকে শুধু সাধারণ অভিবাসন ভেবে ভুল করা যাবে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো গোপনে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, মানচিত্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ বা ভবিষ্যতের সংঘাতকালীন তৎপরতার জন্য প্রস্তুত আছেন।

আইনবিশেষজ্ঞ এমেতে গোজুগোজেল্লি বলেন, ‘এটি নিরীহ অভিবাসনের ঢেউ নয়।’ তিনি নীতিনির্ধারকদের সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের আদর্শিকভাবে সংযুক্ত ও সংগঠিত জনসংখ্যা শুধু নিরাপত্তাজনিত ভারসাম্যই নয়, দ্বীপের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত করতে পারে।

ইসরায়েলিদের জমি কেনা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ

ইসরায়েলিদের জমি কেনার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে তা এখন মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে যদি কোনো শান্তিচুক্তি হয়, তাহলে এসব জনসংখ্যাগত ও অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ব্যবহার করে নতুন সীমানা দাবি বা রাজনৈতিক শর্ত হাজির করা হতে পারে।

তাঁরা এটিও বলছেন, গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যেসব একতরফা প্রতিরক্ষা ও বসতি স্থাপন চুক্তি হচ্ছে, সেগুলো ১৯৬০ সালের ‘ট্রিটি অব গ্যারান্টি’ বা ‘গ্যারান্টি চুক্তি’ লঙ্ঘন করতে পারে। এই চুক্তি অনুযায়ী তুরস্ক, গ্রিস ও যুক্তরাজ্য সাইপ্রাসের নিরাপত্তার গ্যারান্টর (নিশ্চয়তাদানকারী) দেশ। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে এই একতরফা চুক্তিগুলো দ্বীপের শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

তুরস্কের জন্য নজরদারি ও প্রতিরোধ বাড়ানোর আহ্বান

গোজুগোজেল্লি পরামর্শ দিয়েছেন, তুরস্ক এবং উত্তর সাইপ্রাসকে পূর্ব উপকূল বরাবর নজরদারি এবং প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সীমান্তের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ড্রোন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো উচিত। ছাবাদের মতো সংগঠনের উপস্থিতি কূটনৈতিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিকে দক্ষিণে দখল হয়ে থাকা তুর্কি সম্পত্তির অনিরসনকৃত ইস্যুর সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে হবে। এতে আইনি ও রাজনৈতিক বৈপরীত্যগুলোও স্পষ্ট হবে।

*তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টার্কি টুডে থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাইপ্রাসে কি ‘মিনি ইসরায়েল’ গড়ে উঠছে
  • হালদায় মা মাছ রক্ষায় এবার ড্রোন দিয়ে নজরদারি