চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় ‘স্পেশাল মেনশন’ পেয়ে ইতিহাস গড়েছে ‘আলী’। সেই জয়ের রেশ না কাটতেই এবার এই বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পাড়ি জমাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব–এমআইএফএফে। আদনান আল রাজীব পরিচালিত ১৫ মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা উৎসবটির অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা করে নিয়েছে। 

জানা গেছে, আগামী ৮ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মেলবোর্ন শহরের এসিএমআই টু হলে হবে ‘আলী’র অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ার। এরপর ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে কিনো ওয়ান প্রেক্ষাগৃহে। 

মেলবোর্নে নির্বাচিত হওয়ার খবর সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে নির্মাতা আদনান আল রাজীব লিখেছেন, “কানে অসাধারণ যাত্রার পর মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘আলী’-কে অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ারের জন্য নির্বাচিত করায় আমরা সম্মানিত। বাংলাদেশের এই গল্পকে আরেকটি বৈশ্বিক মঞ্চে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।”

সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক তানভীর হোসেন জানিয়েছেন, এই দুটি প্রদর্শনী হবে উৎসবের আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। 

‘আলী’র গল্প আবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশের উপকূলীয় শহরের এক কিশোরকে ঘিরে; যেখানে নারীর গান গাওয়ার অনুমতি নেই। এমন এক পরিবেশে বেড়ে ওঠা কিশোর ‘আলী’ গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। তার গলায় রয়েছে এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য। সে একসঙ্গে পুরুষ ও নারীকণ্ঠে গান গাইতে পারে! 

এই বিশেষ ক্ষমতা তার স্বপ্নকে যেমন ডানা দেয়, তেমনি সমাজের চোখরাঙানিতে বিপন্নও করে তোলে। সমাজ ও আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে এক মানবিক সংকটে। নোয়াখালীর ছেলে আল আমিন অভিনয় করেছে শিরোনাম চরিত্র ‘আলী’র ভূমিকায়। 

ছোট শহরের সহজ-সরল এক কিশোরের ভূমিকায় তার নিপুণ ও হৃদয়গ্রাহী অভিনয় সিনেমার আবেগকে স্পর্শযোগ্য করে তোলে। আলীর মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রানী সোমা; যার সংলাপ ও অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে এক বঞ্চিত নারীর অসহায়তা, সন্তানকে আগলে রাখার যন্ত্রণাদায়ক প্রচেষ্টা। 

সিনেমার চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু ক্যামেরার চোখে তুলে ধরেছেন উপকূলীয় নিসর্গ ও নিঃসঙ্গতাকে মোহনীয় আলোর বিন্যাসে। ‘আলী’র চিত্রনাট্য লিখেছেন ফিলিপাইনের নির্মাতা আরভিন বেলারমিনো ও কাইলা রোমেরো। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির আরেক প্রযোজক ক্রিস্টিন ডি লিয়ন। ‘আলী’র মূল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ক্যাটালগ’। এটি আদনান আল রাজীব, তানভীর হোসেন, ক্রিস্টিন ডি লিওন ও ফিলিপাইনের আরভিন বেলারমিনোর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। সিনেমাটি ইতোমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক উৎসবে পাঠানো হয়েছে। 

বিষয়বস্তু, নির্মাণ ভাষা ও সামাজিক বার্তা মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এক পরিপূর্ণ গ্লোবাল সিনেমা। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ‘আলী’ এখন প্রস্তুত বিশ্বের দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে। এর আগে ২০২১ সালে কানের আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে প্রথমবার বাংলাদেশের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। 

তারও আগে প্রয়াত তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ২০০২ সালে ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’ বিভাগে জিতে নিয়েছিল ফিপরেসি পুরস্কার। তবে কানের অফিসিয়াল সিলেকশনের স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব এবারই প্রথম আদনানের ‘আলী’র হাত ধরে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র আদন ন

এছাড়াও পড়ুন:

সুনামগঞ্জে শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন, কলেজ কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত জেলার প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। এদিকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

আজ মানববন্ধনে সুনামগঞ্জের লেখক-গবেষক সুখেন্দু সেন, সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল হক, পঙ্কজ কান্তি দে, মুহাম্মদ মুনাজ্জির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মুজাহিদুল ইসলাম, সালেহীন চৌধুরী, মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, নাসিম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা স্মারকস্তম্ভ কলেজের অন্য কোনো জায়গায় নির্মাণ এবং শহীদ মিনারের ভাঙা অংশ সংস্কারের দাবি জানান। পরে অধ্যক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ মুনাজ্জির হোসেন বলেন, ‘এটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার, ইতিহাসের অংশ। এটি ভাঙা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কথা বলার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। তাঁরা স্মারকস্তম্ভ কলেজের অন্য জায়গায় নির্মাণ ও শহীদ মিনার যেভাবে ছিল, সেভাবে আবার সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন।’

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সাবেক ছাত্রনেতারা আমাদের কাছে এসে তাঁদের দাবির বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি এখানে নতুন। আমি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর সঙ্গে দ্রুত কথা বলে সমস্যার সমাধান করব।’

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি সুনামগঞ্জে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার। প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে কলেজের ৭৫ বছর পূর্তির একটি স্মারকস্তম্ভ।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় ১৯৪৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। সরকারীকরণ করা হয় ১৯৮০ সালে। কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসব হয়। এই উৎসবের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তখন ক্যাম্পাসে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মাসখানেক আগে ওই স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ কোথায় এটি নির্মাণ করা হবে, সেই স্থানটি নির্ধারণ করেছে। স্থান নির্ধারণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই।

আরও পড়ুনসুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ, সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শরৎ উৎসব উদ্‌যাপন
  • আওয়ামী দোসররা দাবি আদায়ের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে: শিক্ষক–কর্মচারী ঐক্যজোট
  • রাকসুর ভোটে ক্যাম্পাসে আনন্দ–উৎসব
  • রাকসু নির্বাচন: ভোটের আগের রাতে গান–স্লোগানে মেতেছেন শিক্ষার্থীরা
  • সুনামগঞ্জে শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন, কলেজ কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ
  • ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচনে উৎসব
  • চাকসু নির্বাচনে উৎসবের আমেজ
  • ভারতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বলায় কেন মুসলিমদের ওপর দমন–পীড়ন চলছে
  • এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিন: জিএম কাদের
  • কালীগঞ্জে শখের মাছ শিকারিদের উৎসব