জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি কমেনি নোয়াখালীতে
Published: 13th, July 2025 GMT
টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে রবিবার (১৩ জুলাই) সকাল পর্যন্ত নোয়াখালীতে বৃষ্টি না হওয়ায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে। একই সাথে ঝলমলে রোদে স্বস্তি ফিরে এলেও সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানি ধীর গতিতে নামায় ভোগ করছে ভোগান্তি।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় জনমনে মোটামুটি একটি স্বস্তি দেখতে পাচ্ছি। বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও কমতে পারে বলে জানান তিনি।
বৃষ্টিপাত কমলেও এখনো জেলার নিন্মাঞ্চল ও শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখনো পানি জমে রয়েছে। পানি ধীর গতিতে নামায় জনদুর্ভোগ তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অতিবৃষ্টির ফলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছিলো। জলাবদ্ধতায় ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ২ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭টি বসতঘর।
সরেজমিনে জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয় সড়ক, পুলিশ সুপার কার্যালয়, গণপূর্ত কার্যালয়, শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়, স্থানীয় সরকার কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়, সড়ক ও জনপথ অফিস, নোয়াখালী প্রেসক্লাব সড়ক, জেলা জজ কোর্ট সড়ক, জর্জ কোর্ট ভবন, মাইজদী স্টেশন সড়ক, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার, আল ফারুক একাডেমি সড়ক, হরিজন পল্লী, পূর্ব লক্ষীনারায়ণপুর, জেল রোড, নোয়াখালী সরকারী কলেজ রোড, খন্দকার পাড়া, ষ্টেডিয়াম পাড়া, পূর্ব মাইজদী সড়ক, দেবালয় পাড়াসহ শহরের প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে এখনো পানি রয়েছে।
এসব এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের বাসাবাড়িতেও পানি রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতার পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে শহরের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছে।
জেলা শহরের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, “জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, পুকুর সবই পানিতে সয়লাভ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অলিগলিতে যানবাহন আসতে চায় না।”
মাইজদী হাউজিং এলাকার আজাদ রহমান বলেন, “বাজারে যাওয়ার জন্য বাসার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি প্রায় এক ঘণ্টার উপরে। রিকশা পাচ্ছি না। সড়কে পানি, তার উপর ভাঙ্গা। চালকরা আসতে চায় না।”
মোশারফ হোসেন নামে আরেকজন বলেন, “শহরের পানি প্রবাহের পথগুলো বন্ধ। খাল-নালা অবৈধ দখলে। দখলমুক্ত করতে হবে এগুলো। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত পুরোনো। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিক করতে হবে।”
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো.
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। গত দুইদিন বৃষ্টি না হয় পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। যেখানে যেখানে এখনো জলবদ্ধতা রয়েছে সেখানে আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি চলাচলের পথগুলো সচল করতে কাজ করছেন। উপজেলাগুলোতে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।”
ঢাকা/সুজন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বস ত ন বল ন উপজ ল শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর অংশ চার লেন করার দাবিতে মানববন্ধন
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশ চার লেন করার কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মুজিব সড়কে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘ভাঙ্গা-ফরিদপুর চার লেন দ্রুত বাস্তবায়ন’ কমিটি। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে ফরিদপুরের ২৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে সংহতি জানান জেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির নেতারা। বক্তব্য দেন ফরিদপুরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ আলতাফ হোসেন, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া, জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য আবদুত তাওয়াব, ড্যাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ, ভাঙ্গা-ফরিদপুর চার লেন দ্রুত বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আবরাব নাদিম প্রমুখ।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, একটি জেলার উন্নয়নের চাবিকাঠি যোগাযোগব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর মহাসড়কটি অবহেলায় পড়ে আছে। বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। সড়কটি চার লেন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজও দৃশ্যমান কোনো কাজ করা হয়নি। এমনকি ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা এলেও এখন পর্যন্ত ১ শতাংশ জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি।
কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে ভাঙ্গা-ফরিদপুর চার লেন দ্রুত বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলে ২৩ জুলাই সড়কটি অবরোধ করা হবে। ওই দিন মানুষের ভোগান্তি হলে জেলা প্রশাসক ও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ভার নিতে হবে।
জেলা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কটির ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশে ৩২ কিলোমিটার সড়ক আছে। পদ্মা সেতুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০টি জেলার মানুষ চলাচল করে। এ লক্ষ্যে মহাসড়কটি চার লেন করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে ৫০০ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনকে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে টাকা দেওয়া হয়েছে। নানা জটিলতার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু না হলে প্রকল্প থেকে এ অংশ বাদ যেতে পারে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল জানান, আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করা হবে।