যাঁদের টানে দেশে ফিরলেন, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার
Published: 7th, August 2025 GMT
ওমানপ্রবাসী আবদুল বাহার স্বজনদের সঙ্গে ফিরছিলেন বাড়িতে। মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানি, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের মেয়ে সবাই ছিলেন সঙ্গে। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে অনেক হাসিঠাট্টা, খুনসুটি চলছিল। কিন্তু কে জানত মুহূর্তেই এই আনন্দের পরিবেশ পরিণত হবে বিষাদে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে এসে পৌঁছায় বাহারের নানি ফয়জুন নেসা (৮০), মা খুরশিদা বেগম (৫৫), স্ত্রী কবিতা বেগম (৩০), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমি আক্তার (১০), ভাবি লাবনী বেগম (৩০) এবং লাবনীর মেয়ে লামিয়া আক্তারের (৯) মরদেহ।
ওমান থেকে দেশে ফেরা আবদুল বাহারকে আনতে ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেশে ফেরা আনন্দে শেষতক নেমে এল মৃত্যুর ছায়া। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর এলাকায় বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি একটি খালে পড়ে। বাহার ছাড়া পরিবারের কেউই ফিরে আসেননি।
গতকাল সকালে বাহারদের বাড়ির ছোট উঠানজুড়ে সারি সারি সাতটি লাশ এনে রাখা হয়। খবর পেয়ে সকালেই লোকজন জড়ো হয়েছেন। শেষযাত্রার কিছু আয়োজনও সম্পন্ন হয়েছে। এক পাশে গোসলের জন্য টানানো হয়েছে শামিয়ানা। উঠানে পাতা হয়েছে চেয়ার। সবকিছুর মধ্যে নিদারুণ এক শোকের বার্তা।
যাঁদের জন্য প্রবাস থেকে ফেরা, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার। দুই বছরের মেয়ে মীমকে ভালো করে একটু বুকে জড়িয়ে আদরও করা হলো না। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একসঙ্গে জানাজা হয় ছয়জনের। বাহারের নানি ফয়জুন নেসার লাশ নেওয়া হয় পাশের ইউনিয়ন হাজির পাড়ায়। বাকিদের দাফন হয় জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে।
পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে দুটো কবর, সামান্য দূরেই চারটি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানেই একে একে মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীমসহ নিহত স্বজনদের শুয়ে দেন বাহার।
চৌপল্লী গ্রামে মানুষের ভিড়। এত মৃত্যু একসঙ্গে আর দেখেনি কেউ। শোকে স্তব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা। গতকাল বিকেলে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরপারে ভালো থেকো জুবিন: সোহম চক্রবর্তী
ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গ। একাধারে গায়ক, সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত প্রযোজক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সিঙ্গাপুরে স্কুবা ড্রাইভিং করতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শোবিজ অঙ্গন। ভারতীয় বাংলা সিনেমার বেশ কিছু শ্রোতাপ্রিয় গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন জুবিন। তার গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন সোহম চক্রবর্তী। প্রিয় গায়ক, বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন এই নায়ক—
জুবিন গার্গ নেই! খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারছি না। সামনে পূজা। উৎসবের আগে এমন অন্ধকার নেমে আসবে, কল্পনাও করতে পারেনি। সকাল থেকেই মনটা বেশ খারাপ। ভাবিনি এমন দুঃসংবাদ শুনতে হবে। জুবিনের সঙ্গে আমার তো কম স্মৃতি নেই। খুব মজার মানুষ ছিলেন। ভীষণ খোলামেলা। যখনই দেখা হতো, কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যেত, বুঝতেই পারতাম না।
আরো পড়ুন:
সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গ মারা গেছেন
ফের মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ বিজয়ী মিথিলা
‘প্রেম আমার’ আমার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা। সেই সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘বোঝে না সে বোঝে না’। জুবিনের গলায় সেই গান আজও সমান জনপ্রিয়। জুবিনের ‘ইয়া আলি’ আমার ভীষণ পছন্দের একটি গান। যখনই এই গানটা শুনতাম, মনে হতো কবে জুবিনের গাওয়া গানে লিপ দেব। ম্যানিফেস্ট করতাম, আমার জন্য অন্তত একটি গান জুবিন গায়। ঈশ্বর আমার কথা শুনেছেন।
যখন জানতে পারলাম ‘প্রেম আমার’ সিনেমায় জুবিনের গাওয়া গানে লিপ দেব, ভীষণ আনন্দ হয়েছিল। খুব খুশি হয়েছিলাম। তারপর তো জুবিনের সঙ্গে আলাপ হলো, বন্ধুত্ব হলো। তারপর আমার বেশ কয়েকটি সিনেমায় জুবিন গান গাইলেন। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গাঢ় হলো।
একসঙ্গে প্রচুর স্টেজ শো করেছি। যখনই আমরা একসঙ্গে স্টেজে উঠতাম, দর্শক ‘বোঝে না সে বোঝে না’ শুনতে চেয়েছেন। আর জুবিন আমাকে মাইকটা এগিয়ে দিতেন। আমার তো তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। জুবিনের সামনে গান গাইতে গিয়ে তো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত।
আসামে যখনই বেড়াতে গিয়েছি, জুবিন বাড়িতে থাকলে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। আসামে শো করতে গেলে, যেকোনো সমস্যায় জুবিনকে একটা ফোন করলেই ও সবরকমভাবে সাহায্য করেছে। তবে সম্পর্কের গায়েও তো ধুলো পড়ে। মাঝের বেশ কিছু বছর ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। তবে ওর কাজ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতাম।
আমার সবচেয়ে বড় আফসোস কি জানেন? আমার আগামী একটি বাংলা সিনেমায় জুবিন গান গেয়েছেন। সেই সিনেমাটা মুক্তির অপেক্ষায়। ভেবেছিলাম হয়তো দেখা হবে। সেটা আর হলো না। আমি ওর বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি। তুমি পরপারে ভালো থেকো জুবিন।
ঢাকা/শান্ত