বৃত্তি পরীক্ষার নামে বৈষম্য বাড়াতে কেন এত উৎসাহ
Published: 7th, August 2025 GMT
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার ভোটের আগে বৃত্তি পরীক্ষা হয়ে যাবে। ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এর আগে ২০২২ সালে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু শেষমেশ সেটি সম্ভব হয়নি। তখন ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, পুরোনো পদ্ধতির এই বৃত্তি পরীক্ষা চালু হলে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হবে এবং সচ্ছল ও অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের মধ্যকার বৈষম্য আরও বাড়বে।
একটার পর একটা পরীক্ষার বেড়াজালে আটকিয়ে শিক্ষার্থীদের শুধুই পরীক্ষার্থী বানিয়ে কোচিং সেন্টারের খাদ্যে পরিণত করা ঠিক হচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে শিক্ষাবিজ্ঞানী আর সনাতনপন্থী অভিভাবকদের মধ্যে বিস্তর তর্ক আছে। অনেক অভিভাবক বিশ্বাস করেন, শিশুকে চাপের মধ্যে না রাখলে তারা অন্য দিকে মন দেবে। তাদের অনেকেই মনে করেন, এত দিন কোনো বড় পরীক্ষা না থাকায় শিশুরা পড়ার টেবিলে বসার অভ্যাস হারাচ্ছিল। এবার জব্দ হবে। সে তর্ক নিয়ে অন্য একদিন আলাপ করা যাবে।
আরও পড়ুনআবারও কেন বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড়১২ মে ২০২৫হাজীগঞ্জের শিক্ষার্থী কুসুমের মতো সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা বাজারের শিক্ষার্থী সাগরেরও মন খারাপ। তারা বুঝতে পারছে না কেন তাদের বৃত্তি পরীক্ষায় বসতেই দেওয়া হবে না। পরীক্ষা না হলে অন্য কথা; কিন্তু হলে কেন এই বৈষম্য?
১৭ জুলাই ২০২৫ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আসন্ন এই বৃত্তি পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বলে রাখা ভালো, প্রাথমিক বৃত্তির পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে চতুর্থ–পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার মতো হঠকারী লোকের অভাব এ দেশে নেই। তাই শিশুদের সুরক্ষা আর ন্যায্যতার স্বার্থে এর একটি বিহিত হওয়া উচিত।আমরা জানি, দেশের ৯৭ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। সেখানে সরকারি-বেসরকারির পর্দা টানতে গেলে মাত্র ৩ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরকারকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সেটি কেমন বৃত্তি পরীক্ষা হবে? আসন্ন প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে প্রাথমিক শিক্ষার হর্তাকর্তারা যেটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি যে বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার নামান্তর, তা কে কাকে বোঝাবে?
যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র পাঠদানের অনুমোদন দিয়েছে, বিনা মূল্যের বই দিচ্ছে, যারা সরকারি সিলেবাস–কারিকুলাম অনুসরণ করছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোন যুক্তিতে আপনি বৃত্তি পরীক্ষার বাইরে রাখবেন?
যে বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে ফেলার জন্য এত রক্তপাত, এত প্রাণদান আবার সেই বৈষম্যের ভিত কেন? অন্তর্বর্তী সরকারকে আরেকটা হ্যাপার মধ্যে ফেলার এ কোন কৌশল? এসবের কি এটাই মোক্ষম সময়?
বৃত্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচনের মানদণ্ডের মধ্যেও বৈষম্যের গন্ধ প্রখর। সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা যাবে।
অর্থাৎ কোনো বিদ্যালয়ে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকলে সর্বোচ্চ ৪০ জন এবং ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে ২০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলে যারা প্রথম দিকে আছে, সেই মেধাক্রম অনুযায়ী ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাছাই করে নিতে হবে। তাদের রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।
আরও পড়ুনআবারও কেন বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড়১২ মে ২০২৫এ নিয়মে শিক্ষার্থী বাছাই করে সেই তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। নিয়মের বাইরে গেলে শ্রেণিশিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। প্রথম সাময়িকীকে বেঞ্চমার্ক না ধরে বাছাই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত। এবার অনেক স্কুলে সব বই পৌঁছাতে প্রথম সাময়িকীর ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল।
অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও মূল্যায়নের একটি স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এটাই কি সেই ব্যবস্থা?
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা ও জেলায় সংগঠিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মানববন্ধন, প্রতিবাদলিপি সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত থাকলেও ক্রমে তাদের স্বর চড়ছে। গত ২৩ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশের ৫০ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন এই বৈষম্য বরদাশত করবে না। প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ অবস্থায় দেশের বড় অংশের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবে যুক্তিসংগত নয়।
পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে চতুর্থ–পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার মতো হঠকারী লোকের অভাব এ দেশে নেই। তাই শিশুদের সুরক্ষা আর ন্যায্যতার স্বার্থে এর একটি বিহিত হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের অনুমোদিত কারিকুলাম অনুসরণ করে বোর্ডের ছাপা বই দিয়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমোদন নিয়ে কাজ করছে, তাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। সব নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে দিলে বৈষম্য কমবে।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক
[email protected]
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় ব পর ক ষ র ব সরক র ব যবস থ র জন য র একট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সের ব্যাটিং ঝলক আর বোলারদের দাপটে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়
ডাবলিনের মালাহাইড ভিলেজে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নিল ইংল্যান্ড। ম্যাচের নায়ক জর্ডান কক্স করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। সঙ্গে লিয়াম ডসন, জেমি ওভারটন ও আদিল রশিদের বোলিং জাদুতেই ধরা খেল স্বাগতিকরা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৪ রান তুলেছিল আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের মূল ভরসা ছিলেন গ্যারেথ ডেলানি। শেষদিকে তার ঝড়ো ২৯ বলে অপরাজিত ৪৮ রানে ভর করে লড়াকু সংগ্রহ পায় দল। ইনিংসে ছিল ৪টি চার আর ৩টি বিশাল ছক্কা। ওপেনার রস অ্যাডায়ার ২৩ বলে ৩৩ এবং তিন নম্বরে নামা হ্যারি টেক্টর ২৭ বলে ২৮ রান যোগ করেন। তবে অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে দ্রুত ফেরান ডসন। পরে টেক্টরকেও আউট করে ২ ওভারে ৯ রানে ২ উইকেটের বোলিং ফিগার দাঁড় করান তিনি।
আরো পড়ুন:
ভারতকে ১৭২ রানের টার্গেট ছুড়ল পাকিস্তান
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে ভারত
জেমি ওভারটন তার চার ওভারে লরকান টাকার ও কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফিরিয়ে আয়ারল্যান্ডের মিডল অর্ডারে আঘাত হানেন। সবচেয়ে কার্যকরী ছিলেন লেগস্পিনার আদিল রশিদ। ইনিংসের শেষভাগে ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ২৯ রানে ৩ উইকেট।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ওভারেই সিনিয়র ব্যাটার জস বাটলারকে শূন্য রানে ফেরান ব্যারি ম্যাককার্থি। অধিনায়ক জেকব বেথেলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, করেন মাত্র ১৫ রান।
তবে একপ্রান্ত আগলে ব্যাট চালান ফিল সল্ট। ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসে দুই চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে গড়েন কক্সের সঙ্গে ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। সেখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। কক্স খেলেন ৩৭ বলে ৫৫ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। যেখানে ছিল নিয়ন্ত্রিত শটের ছড়াছড়ি। শেষ পর্যন্ত বেন হোয়াইট তাকে বোল্ড করলেও তখন জয় প্রায় নিশ্চিত।
বাকি কাজটা সেরে দেন টম ব্যান্টন ও রেহান আহমেদ। ব্যান্টনের ২৬ বলে অপরাজিত ৩৭ রানে ভর করে ১৭.১ ওভারেই ৪ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতল ইংল্যান্ড।
ঢাকা/আমিনুল