দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার ভোটের আগে বৃত্তি পরীক্ষা হয়ে যাবে। ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এর আগে ২০২২ সালে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু শেষমেশ সেটি সম্ভব হয়নি। তখন ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, পুরোনো পদ্ধতির এই বৃত্তি পরীক্ষা চালু হলে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হবে এবং সচ্ছল ও অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের মধ্যকার বৈষম্য আরও বাড়বে।

একটার পর একটা পরীক্ষার বেড়াজালে আটকিয়ে শিক্ষার্থীদের শুধুই পরীক্ষার্থী বানিয়ে কোচিং সেন্টারের খাদ্যে পরিণত করা ঠিক হচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে শিক্ষাবিজ্ঞানী আর সনাতনপন্থী অভিভাবকদের মধ্যে বিস্তর তর্ক আছে। অনেক অভিভাবক বিশ্বাস করেন, শিশুকে চাপের মধ্যে না রাখলে তারা অন্য দিকে মন দেবে। তাদের অনেকেই মনে করেন, এত দিন কোনো বড় পরীক্ষা না থাকায় শিশুরা পড়ার টেবিলে বসার অভ্যাস হারাচ্ছিল। এবার জব্দ হবে। সে তর্ক নিয়ে অন্য একদিন আলাপ করা যাবে।

আরও পড়ুনআবারও কেন বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড়১২ মে ২০২৫

হাজীগঞ্জের শিক্ষার্থী কুসুমের মতো সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা বাজারের শিক্ষার্থী সাগরেরও মন খারাপ। তারা বুঝতে পারছে না কেন তাদের বৃত্তি পরীক্ষায় বসতেই দেওয়া হবে না। পরীক্ষা না হলে অন্য কথা; কিন্তু হলে কেন এই বৈষম্য?

১৭ জুলাই ২০২৫ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আসন্ন এই বৃত্তি পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বলে রাখা ভালো, প্রাথমিক বৃত্তির পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে চতুর্থ–পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার মতো হঠকারী লোকের অভাব এ দেশে নেই। তাই শিশুদের সুরক্ষা আর ন্যায্যতার স্বার্থে এর একটি বিহিত হওয়া উচিত।

আমরা জানি, দেশের ৯৭ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। সেখানে সরকারি-বেসরকারির পর্দা টানতে গেলে মাত্র ৩ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরকারকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সেটি কেমন বৃত্তি পরীক্ষা হবে? আসন্ন প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে প্রাথমিক শিক্ষার হর্তাকর্তারা যেটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি যে বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার নামান্তর, তা কে কাকে বোঝাবে?

যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র পাঠদানের অনুমোদন দিয়েছে, বিনা মূল্যের বই দিচ্ছে, যারা সরকারি সিলেবাস–কারিকুলাম অনুসরণ করছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোন যুক্তিতে আপনি বৃত্তি পরীক্ষার বাইরে রাখবেন?

যে বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে ফেলার জন্য এত রক্তপাত, এত প্রাণদান আবার সেই বৈষম্যের ভিত কেন?  অন্তর্বর্তী সরকারকে আরেকটা হ্যাপার মধ্যে ফেলার এ কোন কৌশল? এসবের কি এটাই মোক্ষম সময়?  

বৃত্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচনের মানদণ্ডের মধ্যেও বৈষম্যের গন্ধ প্রখর। সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা যাবে।

অর্থাৎ কোনো বিদ্যালয়ে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকলে সর্বোচ্চ ৪০ জন এবং ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে ২০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলে যারা প্রথম দিকে আছে, সেই মেধাক্রম অনুযায়ী ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাছাই করে নিতে হবে। তাদের রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।

আরও পড়ুনআবারও কেন বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড়১২ মে ২০২৫

এ নিয়মে শিক্ষার্থী বাছাই করে সেই তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। নিয়মের বাইরে গেলে শ্রেণিশিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। প্রথম সাময়িকীকে বেঞ্চমার্ক না ধরে বাছাই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত। এবার অনেক স্কুলে সব বই পৌঁছাতে প্রথম সাময়িকীর ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল।

অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও মূল্যায়নের একটি স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এটাই কি সেই ব্যবস্থা? 

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা ও জেলায় সংগঠিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মানববন্ধন, প্রতিবাদলিপি সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত থাকলেও ক্রমে তাদের স্বর চড়ছে। গত ২৩ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশের ৫০ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন এই বৈষম্য বরদাশত করবে না। প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ অবস্থায় দেশের বড় অংশের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবে যুক্তিসংগত নয়।

পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে চতুর্থ–পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার মতো হঠকারী লোকের অভাব এ দেশে নেই। তাই শিশুদের সুরক্ষা আর ন্যায্যতার স্বার্থে এর একটি বিহিত হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের অনুমোদিত কারিকুলাম অনুসরণ করে বোর্ডের ছাপা বই দিয়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমোদন নিয়ে কাজ করছে, তাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। সব নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে দিলে বৈষম্য কমবে।

গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক

[email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় ব পর ক ষ র ব সরক র ব যবস থ র জন য র একট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পেঁয়াজের দাম প্রতিবছর বাড়ে কেন?

বাঙালির রান্নাঘরের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো পেঁয়াজ। কিন্তু প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই পেঁয়াজের ঝাঁঝে পুড়তে হয়। বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি বার্ষিক আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এই অস্থিরতার কারণ কী? 

সাধারণ সরবরাহের ঘাটতি, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে রছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সংঘবদ্ধ কারসাজি? কেন সরকার শত চেষ্টা করেও এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এইসব প্রশ্নের উত্তরে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে।

উৎপাদন ও সরবরাহের সমস্যা:
দেশে সাধারণত শীতকালে (রবি মৌসুম) পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এবং তা সংরক্ষণ করে সারা বছরের চাহিদা মেটানো হয়। গ্রীষ্মকালে দেশি পেঁয়াজ প্রায় শেষ হয়ে এলে বাজারে সরবরাহ কমে যায়। নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) বাজারে আসার আগ পর্যন্ত একটি সংকটকাল তৈরি হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনের বীজ, সার এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে বলে দাবি করছে বিক্রেতারা।

এছাড়া দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে উৎপাদনের পর প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয়ে যায়। এই বিপুল পরিমাণ নষ্ট হওয়া সরবরাহকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। 

মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি:
বাজারে অতি মুনাফার লোভে এক শ্রেণির মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি করে প্রতি বছর মৌসুমের শেষে যখন সরবরাহ কমতে শুরু করে তখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজ গুদামজাত করে রাখেন এবং বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেন। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে।

সাধারণ খুচরা বিক্রেতারা বলছে, পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক নিয়মে হয় না বরং একটি পরিকল্পিত সিন্ডিকেট এর পেছনে কাজ করে। যারা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দ্রুত বিপুল মুনাফা লুটতে চায়। এর সাথে জড়িত বড় বড় কোম্পানির আমদানিকারক। এছাড়া সরকারকে চাপে রাখতে অনেক সময় এই ধরনের সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে সরকারকে আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে থাকে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে আমদানির অনুমতি দেয়।

আমদানি নির্ভরতা ও ভারতের রপ্তানি নীতি:
দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরোপুরি মেটানোর মতো পর্যাপ্ত ও দীর্ঘস্থায়ী মজুত না থাকায় বাংলাদেশকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। মূলত, প্রতিবেশী দেশ ভারতের উপর এই নির্ভরতা অনেক বেশি।

এই সুযোগে ভারতে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে বা উৎপাদন কম হয়, তখন সেখানকার সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করে আবার কখনো কখনো পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে, কারণ আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ে এবং দাম লাফিয়ে বাড়ে। 

এছাড়া দেশি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক সময় সরকার নির্দিষ্ট সময়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে দেরি করে। এই বিলম্বও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয় অতি মুনাফার লোভী ব্যবসায়ীরা।

সংরক্ষণে দুর্বলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ও আধুনিক অবকাঠামো নেই। ফলে কৃষকের ঘরে বা সাধারণ গুদামে দীর্ঘ সময় রাখলে আর্দ্রতা ও অন্যান্য কারণে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়। বিক্রেতারা বলছে যদি পেঁয়াজ সংরক্ষণে জন্য আধুনিক হিমাগার তৈরি করা হয় তাহলে কিছু বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকলে প্রতিবছর পেঁয়াজ দাম বাড়ার প্রবণতা কমে আসবে।

এছাড়া অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা বা বৈরী আবহাওয়ার জন্য পেঁয়াজের ফলনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। আবার, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত মজুত করা পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার হার অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে।

কৃষক ও ক্রেতাদের মনোভাব:
বেশি লাভের আশায় অনেক সময় কৃষক তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ মজুত করে রাখে। আবার এই মজুত করা পেঁয়াজ বৈরী আবহাওয়ার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা যায়। যাতে দাম বেড়ে যায়।

আবার এক শ্রেণির ক্রেতা আছে যারা দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হলেই আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনে মজুত করা শুরু করেন। যা বাজারে বিদ্যমান সংকটকে আরো অস্থির করে তোলে। এই ধরনের ক্রেতাদের জন্য বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে যা বেড়েছে ৪৪.৮৩ শতাংশ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন। এ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টন। চলতি মৌসুমে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন প্রত্যাশিত মাত্রার কাছাকাছি হয়েছে। এবার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টন। 

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে যানা যায়, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২২৫ টাকা। বিক্রেতারা আশঙ্কা করছে সামনের দিনগুলোতে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শফিক বেপারির কাছে হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এটা তো আর নতুন কথা নয়! প্রতিবছর এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে, এই মুহূর্তে আমদানি অনুমতি যাতে দেওয়া হয় সেজন্য বড় বড় ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা এসে তাদের ক্ষোভ আমাদের উপর প্রকাশ করে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই।”

রাজধানীর নিউমার্কেটের আরেক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নাজমুল সিকদার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এ সপ্তাহে আমাদের কিনতে হয়েছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। পরিবহন, লেবার, দোকান ভাড়া ও কর্মচারী খরচ দিয়ে ১২০ টাকা বিক্রি করলে আমাদের লস হয়। তারপরও ১২০ টাকা বিক্রি করতে হয়। পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি। আমরাও চাহিদা তুলনায় কম নিয়েছি। কিন্তু এক শ্রেণির ক্রেতা আছে যারা দাম বাড়বে শুনে বেশি করে কিনে রাখে। তাদের জন্য এই সমস্যাটা বেশি সৃষ্টি হয়। কারন যারা কম কেনে তখন তারা এসে আর নিতে পারে না। পাইকারি বিক্রেতারা আমাদেরকে জানিয়েছে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। তাই খুচরা ব্যবসায়ীরা যে যার মত করে পারছে নিয়ে রাখছে।”

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতারা শাহিন হাওলাদার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “যদি সরবরাহ বাড়ে অথবা সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানের অনুমতি দেয় তাহলে সামনের দাম কমতে পারে। অন্যথায় দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। দেশে এখন পেঁয়াজের মজুত সেইভাবে নেই। আর এবার বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রথমদিকে অনেকের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত দাম বলে আশঙ্কা করছি।”

রাজধানীর নিউমার্কেটে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী কাকলী আক্তার বলেন, “বাংলাদেশ সবকিছু সম্ভবের দেশ। যে যার মত করে পারছে সে সেভাবে কামিয়ে নিচ্ছে। এদেশের সাধারণ মানুষের কথা কেউ কখনো ভাবেনি। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ কিনেছি ৮০ টাকায়, এ সপ্তাহের পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়! এর থেকে দুঃখের বিষয় কি আছে! এখানে সাধারণ মানুষের কথার কোন মূল্য নেই। আমাদের তো আয় ইনকাম বাড়ে না, কিন্তু দিনকে দিন সবকিছু দাম বাড়তে থাকে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ