জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ
Published: 8th, August 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির দুই সদস্যসহ তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই ছাত্রীকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
হেনস্তার ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে বিচার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে ক্লাস শেষে ফিন্যান্স বিভাগের সামনের সিঁড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রদলের সদস্য আবদুর রহমান তাঁকে বাজেভাবে উত্ত্যক্ত করেন। তখন তাঁর সঙ্গে থাকা দুই সহপাঠী প্রতিবাদ করলে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা মেয়ে দেখলেই টিটকারি দেব। যা পারেন করেন।’ আবদুর রহমান আরও বলেন, নিজ বিভাগে তিনি যা ইচ্ছা, তা-ই করবেন। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই সহপাঠী তাঁকে সমর্থন করে ইন্ধন দেন।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ‘এমন ঘটনায় আমরা মেয়েরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
হেনস্তার বিষয়ে প্রথম আলোকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘ক্লাস শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মোবাইলে কথা বলছিলাম। তখন আবদুর রহমান খুব বাজেভাবে কথা বলেন। আমার সঙ্গে থাকা দুই বান্ধবী তাঁর কথার প্রতিবাদ করে। তখন তাঁদেরও হেনস্তা করেন আবদুর রহমানের সঙ্গে থাকা আরও দুইজন।’
ওই ছাত্রী বলেন, ‘তারা তখন বলে, “মেয়ে দেখলে টিজ করবই। আমরা বিভাগেও করি, খোঁজ নিয়ে দেখেন! যা পারেন কইরেন।”’
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘আমি ঘটনার সঠিক বিচার চাই। আমরা পরিচয় দেওয়ার পরও সে আমাদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি তাঁর সিনিয়র হয়েও যদি এমন ঘটনার সম্মুখীন হই, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র মেয়েদের কী হবে? আমাদের ক্যাম্পাসে কি নারী শিক্ষার্থীদের কোনো নিরাপত্তা নেই?’
এ ধরনের ভাষা ও আচরণ শুধু অশোভন নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নারীবান্ধব পরিবেশের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি বলে মন্তব্য করেন ওই শিক্ষার্থী।
ঘটনার সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) এক সহপাঠী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি সরাসরি দেখেছি। ক্লাস শেষে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিলাম। আমার বান্ধবী আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখে আবদুর রহমান খারাপ ইঙ্গিত করেন।’
হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তাঁদের মধ্যে আবদুর রহমান ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদারের অনুসারী। অপর দুজনের মধ্যে সৈকত মাহমুদও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। সোহাগ গাজী একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা খবর নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত করা হবে। যদি কারও ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ইভ টিজিংয়ের অভিযোগ খুব গুরুতর। আদালতের নির্দেশনা আছে এসব অভিযোগ পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। আমরা দুইজন সহকারী প্রক্টরকে ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তাঁরা রিপোর্ট প্রদান করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন প রথম আল ক ছ ত রদল র ওই ছ ত র র সদস য আম দ র ঘটন র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
১১৬ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করেছে : শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স (ভারসাম্য) নিশ্চিত করেছে। কেননা, সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি ছাড়া আইন মন্ত্রণালয় কোনো বিচারককে বদলি করতে পারে না।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল এ কথা বলেন।
বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ–সংক্রান্ত শুনানি চলছে। গতকাল শুনানি নিয়ে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ১১ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বিচার বিভাগকে মহিমান্বিত ও সমৃদ্ধ করেছে বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের পর তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এর অবসান ঘটে।
বর্তমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার-কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে থাকেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ, ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত বছরের ২৭ অক্টোবর রুল দেন। রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং এ–সংক্রান্ত ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রগতি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এরপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৪ জানুয়ারি রুলের শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। একই বেঞ্চ গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়াকে মনোনীত করেন। এ বেঞ্চে রুল শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। এর মধ্যে গত ২৫ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি আহমেদ সোহেলের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। বিচারপতি আহমেদ সোহেলের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে গত ২৩ এপ্রিল রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়।