বছরের পর বছর ধরে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিপরীতে যখন একটি সাহসী সংস্কার পরিকল্পনা সামনে আসে, তখন তা আশা জাগায়। কিন্তু সেই আশাই এখন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে হতাশায়।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গত ৫ মে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৩২ দফা সুপারিশসহ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। 

সরকারি হাসপাতালের সেবা সময় বাড়ানো, বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতসহ একাধিক কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাব করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

আরো পড়ুন:

মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম

কিশোরগঞ্জে আনন্দ মিছিলে বিএনপি নেতার মৃত্যু, অসুস্থ ৩

কিন্তু সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তিন মাস পরও কোনো বৈঠক হয়নি। গঠিত হয়নি টাস্কফোর্স বা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও। ফলে কমিশনের সদস্যরা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংস্কার উদ্যোগ কেবল কাগজে আটকে থাকলে স্বাস্থ্য খাতের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনোই সম্ভব নয়।

বিলম্বিত উদ্যোগ, নেই বাস্তবায়নের কাঠামো
৬আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সমন্বয় সভা হয়। এটি এই বিষয়ে প্রথম বৈঠক। এতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএআইএমএ) অংশীদার সংস্থাগুলোকে ডাকা হয়। 

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা.

সায়েদুর রহমান। সেখানে একটি প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়।

কিছু প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব
কমিশনের মতে, সব সুপারিশ বাস্তবায়নে সময় লাগতে পারে ১৮ থেকে ২৪ মাস। তবে অন্তত ১০টি সুপারিশ তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে নিজেদের সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনা।

কমিশনের প্রধান ডা. এ কে আজাদ খান সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে একটি জাতীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা জরুরি, যা সরাসরি সরকারকে রিপোর্ট দেবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ তদারকি করবে।

তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অপরিহার্য। এটি কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক দায়িত্ব নয়, এটি একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

সমন্বয়ের ঘাটতি স্পষ্ট
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনটি একটি দিকনির্দেশক দলিল। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে গতি প্রত্যাশিত, তা অনুপস্থিত। সাতটি স্তম্ভে সংস্কারের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তার প্রতিফলন নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফিদা মেহরান বলেন, “আমরা চাই না সংস্কার পরিকল্পনাটি রাজনৈতিক বক্তব্যে আটকে থাকুক। এখনই দরকার একটি ট্রানজিশন প্ল্যান, যা বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ করবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার কেবল প্রযুক্তি কিংবা নতুন অবকাঠামোর প্রশ্ন নয়। এটি নেতৃত্ব, জবাবদিহি ও জনগণের সম্পৃক্ততার সঙ্গে যুক্ত।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. সাইদুর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব শাখা ও সংস্থার প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কমিশনের সুপারিশ ছাড়াও আমরা স্বাস্থ্যখাতকে এগিয়ে নিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ান, জনবল কাঠামোতে শৃঙ্খলা আনা ইত্যাদি।”

বিএআইএমএর প্রস্তুতি
বিএআইএমএ সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান বলেন, “ওষুধের কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের জন্য আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছি। প্রস্তাবনা জমা দেব।”

যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বিকাল ৫টা পর্যন্ত করা; বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ করা; ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত করা; অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন  করা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা।

কমিশনের এক সদস্য বলেন, “আমরা এক বছর সময় চেয়েছিলাম বাস্তবায়নের রোডম্যাপ দেখতে। কিন্তু তিন মাসেও একটা বৈঠক না হলে সেটাকে উদাসীনতা না বলে কী বলব।”

“জনগণের প্রত্যাশা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাস্তবতা- এই ব্যবধান কমাতে হলে এখনই গতি আনতে হবে উদ্যোগে। নয়তো সুপারিশগুলো শুধু আরেকটি প্রতিবেদন হিসেবেই ইতিহাসে জায়গা করে নেবে, পরিবর্তন নয়,” যোগ করেন তিনি।

ঢাকা/এএএম/রাসেল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পেঁয়াজের দাম প্রতিবছর বাড়ে কেন?

বাঙালির রান্নাঘরের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো পেঁয়াজ। কিন্তু প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই পেঁয়াজের ঝাঁঝে পুড়তে হয়। বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি বার্ষিক আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এই অস্থিরতার কারণ কী? 

সাধারণ সরবরাহের ঘাটতি, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে রছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সংঘবদ্ধ কারসাজি? কেন সরকার শত চেষ্টা করেও এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এইসব প্রশ্নের উত্তরে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে।

উৎপাদন ও সরবরাহের সমস্যা:
দেশে সাধারণত শীতকালে (রবি মৌসুম) পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এবং তা সংরক্ষণ করে সারা বছরের চাহিদা মেটানো হয়। গ্রীষ্মকালে দেশি পেঁয়াজ প্রায় শেষ হয়ে এলে বাজারে সরবরাহ কমে যায়। নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) বাজারে আসার আগ পর্যন্ত একটি সংকটকাল তৈরি হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনের বীজ, সার এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে বলে দাবি করছে বিক্রেতারা।

এছাড়া দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে উৎপাদনের পর প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয়ে যায়। এই বিপুল পরিমাণ নষ্ট হওয়া সরবরাহকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। 

মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি:
বাজারে অতি মুনাফার লোভে এক শ্রেণির মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি করে প্রতি বছর মৌসুমের শেষে যখন সরবরাহ কমতে শুরু করে তখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজ গুদামজাত করে রাখেন এবং বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেন। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে।

সাধারণ খুচরা বিক্রেতারা বলছে, পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক নিয়মে হয় না বরং একটি পরিকল্পিত সিন্ডিকেট এর পেছনে কাজ করে। যারা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দ্রুত বিপুল মুনাফা লুটতে চায়। এর সাথে জড়িত বড় বড় কোম্পানির আমদানিকারক। এছাড়া সরকারকে চাপে রাখতে অনেক সময় এই ধরনের সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে সরকারকে আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে থাকে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে আমদানির অনুমতি দেয়।

আমদানি নির্ভরতা ও ভারতের রপ্তানি নীতি:
দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরোপুরি মেটানোর মতো পর্যাপ্ত ও দীর্ঘস্থায়ী মজুত না থাকায় বাংলাদেশকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। মূলত, প্রতিবেশী দেশ ভারতের উপর এই নির্ভরতা অনেক বেশি।

এই সুযোগে ভারতে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে বা উৎপাদন কম হয়, তখন সেখানকার সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করে আবার কখনো কখনো পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে, কারণ আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ে এবং দাম লাফিয়ে বাড়ে। 

এছাড়া দেশি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক সময় সরকার নির্দিষ্ট সময়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে দেরি করে। এই বিলম্বও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয় অতি মুনাফার লোভী ব্যবসায়ীরা।

সংরক্ষণে দুর্বলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ও আধুনিক অবকাঠামো নেই। ফলে কৃষকের ঘরে বা সাধারণ গুদামে দীর্ঘ সময় রাখলে আর্দ্রতা ও অন্যান্য কারণে অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়। বিক্রেতারা বলছে যদি পেঁয়াজ সংরক্ষণে জন্য আধুনিক হিমাগার তৈরি করা হয় তাহলে কিছু বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকলে প্রতিবছর পেঁয়াজ দাম বাড়ার প্রবণতা কমে আসবে।

এছাড়া অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা বা বৈরী আবহাওয়ার জন্য পেঁয়াজের ফলনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। আবার, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত মজুত করা পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার হার অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে।

কৃষক ও ক্রেতাদের মনোভাব:
বেশি লাভের আশায় অনেক সময় কৃষক তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ মজুত করে রাখে। আবার এই মজুত করা পেঁয়াজ বৈরী আবহাওয়ার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা যায়। যাতে দাম বেড়ে যায়।

আবার এক শ্রেণির ক্রেতা আছে যারা দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হলেই আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনে মজুত করা শুরু করেন। যা বাজারে বিদ্যমান সংকটকে আরো অস্থির করে তোলে। এই ধরনের ক্রেতাদের জন্য বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে যা বেড়েছে ৪৪.৮৩ শতাংশ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন। এ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টন। চলতি মৌসুমে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন প্রত্যাশিত মাত্রার কাছাকাছি হয়েছে। এবার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টন। 

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে যানা যায়, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২২৫ টাকা। বিক্রেতারা আশঙ্কা করছে সামনের দিনগুলোতে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শফিক বেপারির কাছে হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এটা তো আর নতুন কথা নয়! প্রতিবছর এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিনের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে, এই মুহূর্তে আমদানি অনুমতি যাতে দেওয়া হয় সেজন্য বড় বড় ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা এসে তাদের ক্ষোভ আমাদের উপর প্রকাশ করে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই।”

রাজধানীর নিউমার্কেটের আরেক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নাজমুল সিকদার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এ সপ্তাহে আমাদের কিনতে হয়েছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। পরিবহন, লেবার, দোকান ভাড়া ও কর্মচারী খরচ দিয়ে ১২০ টাকা বিক্রি করলে আমাদের লস হয়। তারপরও ১২০ টাকা বিক্রি করতে হয়। পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি। আমরাও চাহিদা তুলনায় কম নিয়েছি। কিন্তু এক শ্রেণির ক্রেতা আছে যারা দাম বাড়বে শুনে বেশি করে কিনে রাখে। তাদের জন্য এই সমস্যাটা বেশি সৃষ্টি হয়। কারন যারা কম কেনে তখন তারা এসে আর নিতে পারে না। পাইকারি বিক্রেতারা আমাদেরকে জানিয়েছে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। তাই খুচরা ব্যবসায়ীরা যে যার মত করে পারছে নিয়ে রাখছে।”

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতারা শাহিন হাওলাদার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “যদি সরবরাহ বাড়ে অথবা সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানের অনুমতি দেয় তাহলে সামনের দাম কমতে পারে। অন্যথায় দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। দেশে এখন পেঁয়াজের মজুত সেইভাবে নেই। আর এবার বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রথমদিকে অনেকের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত দাম বলে আশঙ্কা করছি।”

রাজধানীর নিউমার্কেটে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী কাকলী আক্তার বলেন, “বাংলাদেশ সবকিছু সম্ভবের দেশ। যে যার মত করে পারছে সে সেভাবে কামিয়ে নিচ্ছে। এদেশের সাধারণ মানুষের কথা কেউ কখনো ভাবেনি। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ কিনেছি ৮০ টাকায়, এ সপ্তাহের পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়! এর থেকে দুঃখের বিষয় কি আছে! এখানে সাধারণ মানুষের কথার কোন মূল্য নেই। আমাদের তো আয় ইনকাম বাড়ে না, কিন্তু দিনকে দিন সবকিছু দাম বাড়তে থাকে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ