ধীরে চলছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার, সুপারিশ বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি
Published: 8th, August 2025 GMT
বছরের পর বছর ধরে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিপরীতে যখন একটি সাহসী সংস্কার পরিকল্পনা সামনে আসে, তখন তা আশা জাগায়। কিন্তু সেই আশাই এখন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে হতাশায়।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গত ৫ মে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৩২ দফা সুপারিশসহ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
সরকারি হাসপাতালের সেবা সময় বাড়ানো, বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতসহ একাধিক কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাব করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
আরো পড়ুন:
মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম
কিশোরগঞ্জে আনন্দ মিছিলে বিএনপি নেতার মৃত্যু, অসুস্থ ৩
কিন্তু সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তিন মাস পরও কোনো বৈঠক হয়নি। গঠিত হয়নি টাস্কফোর্স বা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও। ফলে কমিশনের সদস্যরা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংস্কার উদ্যোগ কেবল কাগজে আটকে থাকলে স্বাস্থ্য খাতের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনোই সম্ভব নয়।
বিলম্বিত উদ্যোগ, নেই বাস্তবায়নের কাঠামো
৬আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সমন্বয় সভা হয়। এটি এই বিষয়ে প্রথম বৈঠক। এতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএআইএমএ) অংশীদার সংস্থাগুলোকে ডাকা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা.
কিছু প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব
কমিশনের মতে, সব সুপারিশ বাস্তবায়নে সময় লাগতে পারে ১৮ থেকে ২৪ মাস। তবে অন্তত ১০টি সুপারিশ তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে নিজেদের সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনা।
কমিশনের প্রধান ডা. এ কে আজাদ খান সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে একটি জাতীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা জরুরি, যা সরাসরি সরকারকে রিপোর্ট দেবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ তদারকি করবে।
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অপরিহার্য। এটি কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক দায়িত্ব নয়, এটি একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সমন্বয়ের ঘাটতি স্পষ্ট
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনটি একটি দিকনির্দেশক দলিল। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে গতি প্রত্যাশিত, তা অনুপস্থিত। সাতটি স্তম্ভে সংস্কারের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তার প্রতিফলন নেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফিদা মেহরান বলেন, “আমরা চাই না সংস্কার পরিকল্পনাটি রাজনৈতিক বক্তব্যে আটকে থাকুক। এখনই দরকার একটি ট্রানজিশন প্ল্যান, যা বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ করবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার কেবল প্রযুক্তি কিংবা নতুন অবকাঠামোর প্রশ্ন নয়। এটি নেতৃত্ব, জবাবদিহি ও জনগণের সম্পৃক্ততার সঙ্গে যুক্ত।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. সাইদুর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব শাখা ও সংস্থার প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কমিশনের সুপারিশ ছাড়াও আমরা স্বাস্থ্যখাতকে এগিয়ে নিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ান, জনবল কাঠামোতে শৃঙ্খলা আনা ইত্যাদি।”
বিএআইএমএর প্রস্তুতি
বিএআইএমএ সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান বলেন, “ওষুধের কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের জন্য আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছি। প্রস্তাবনা জমা দেব।”
যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বিকাল ৫টা পর্যন্ত করা; বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ করা; ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত করা; অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা।
কমিশনের এক সদস্য বলেন, “আমরা এক বছর সময় চেয়েছিলাম বাস্তবায়নের রোডম্যাপ দেখতে। কিন্তু তিন মাসেও একটা বৈঠক না হলে সেটাকে উদাসীনতা না বলে কী বলব।”
“জনগণের প্রত্যাশা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাস্তবতা- এই ব্যবধান কমাতে হলে এখনই গতি আনতে হবে উদ্যোগে। নয়তো সুপারিশগুলো শুধু আরেকটি প্রতিবেদন হিসেবেই ইতিহাসে জায়গা করে নেবে, পরিবর্তন নয়,” যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/এএএম/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কমল হাসানের পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন শাহরুখ: লিলিপুট
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। দর্শকদের মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়ালেও ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কখনো পাননি। এ নিয়ে চাপা আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরস্কার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে। ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা প্রকাশের পর থেকে নানা ধরনের সমালোচনা চলছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেকে শাহরুখ খানকে আক্রমণ করেও মন্তব্য করেছেন। এবার শাহরুখ খানকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বলিউড অভিনেতা লিলিপুট। কেবল তাই নয়, কমল হাসানের সঙ্গে তুলনা করে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন ৭৪ বছরের এই অভিনেতা।
কয়েক দিন আগে একটি পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন লিলিপুট। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “যে অন্ধ নয়, সে অন্ধের অভিনয় করতে পারে। কিন্তু যে বামন নয়, সে কীভাবে একজন বামনের চরিত্রে অভিনয় করবে? কারণ বামনরাও স্বাভাবিক—তাদের হাতের নাড়াচড়া স্বাভাবিক, তারা হাসে, ভাবে—সব কিছু স্বাভাবিক মানুষের মতোই, শুধু তাদের চেহারাটা আলাদা। তাহলে আপনি এতে কীভাবে অভিনয় করবেন? আপনাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছোট করে দেখাতে হবে।”
আরো পড়ুন:
হুমা কুরেশির ভাই খুন
বলিউডের নয়া ‘ক্রাশ’ অনীত
শাহরুখ খানের সমালোচনা করে লিলিপুট বলেন, “আমরা জানি আপনি সুদর্শন, চমৎকার দেখতে—সেখানেই আমাদের ধারণা থমকে যায়। আমরা একজন বামনকে দেখছি না, বরং এমন একজন হিরোকে দেখছি যাকে ভিএফএক্স দিয়ে ছোট করে দেখানো হয়েছে। আপনার চিত্রনাট্য কী বলার চেষ্টা করছে?”
তামিল ভাষার ‘অপ্পু রাজা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন কমল হাসান। বরেণ্য এই অভিনেতার সঙ্গে শাহরুখ খানের ‘জিরো’ সিনেমার তুলনা করেন লিলিপুট। এ সিনেমায় শাহরুখ একজন বামনের চরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি শাহরুখ খান যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেননি বলেও দাবি তার।
এ বিষয়ে লিলিপুট বলেন, “আপনি ‘অপ্পু রাজা’ এর বুদ্ধিমত্তা দেখেন। কমল হাসান একজন বামন ব্যক্তির শারীরিক বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বামনদের শরীর কিছুটা বিকৃত থাকে, তাদের আঙুল ছোট হয়, একটু মোটা হয়, হাত, মুখ ও পা অন্যরকম হয়—তাহলে আপনি যখন সেই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারছেন না, তখন কেন এমন একটা কাজ করলেন? কীভাবে ভাবলেন আপনি এর মাধ্যমে প্রভাব ফেলতে পারবেন?”
কমল হাসানকে অনুকরণ করেছেন শাহরুখ খান। এ দাবি করে লিলিপুট বলেন, “আপনি কমলজির অনুকরণ করেছেন। কিন্তু আপনি তার পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন।”
আনন্দ এল রাই নির্মিত ‘জিরো’ সিনেমা ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পান। ২০০ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা বক্স অফিসে আয় করেছিল ১৯১.৪৩ কোটি রুপি। এ ব্যর্থতার পরই শাহরুখ খান আড়ালে চলে যান। দীর্ঘ বিরতিতে নিজেকে প্রস্তুত করেন। ২০২৩ সালে ‘পাঠান’ দিয়ে তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হয়।
‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ খান। এ সিনেমা ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করেন দক্ষিণী সিনেমার লেডি সুপারস্টার নয়নতারা। এটি পরিচালনা করেন অ্যাটলি কুমার। বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছিল এটি।
ঢাকা/শান্ত