জয়পুরহাটে রিমান্ডে নিয়ে আসামিকে নির্যাতন, এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার
Published: 8th, August 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পুলিশি হেফাজতে (রিমান্ড) নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসক দিয়ে আসামির শরীর পরীক্ষা করে আঘাতসংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং সিভিল সার্জনকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন।
আক্কেলপুর থানার উপপরির্দশক (এসআই) গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের আদেশের পর গোলাম রব্বানীকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আক্কেলপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখায় গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে পৃথক আটটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। তাঁরা হলেন এজেন্ট শাখার মালিক জাহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক রিজওয়ানা ফারজানা ও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। তিন আসামি কারাগারে ছিলেন। ৪ আগস্ট তিন আসামিকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আসামি সোহেল রানা পুলিশি হেফাজতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম রব্বানী গতকাল আদালতে মাসুদ রানাকে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রের্কডের আবেদন করেন এবং আরও পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতের নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তবে আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে একটি আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি জাহিদুল ইসলাম ও রিজওয়ানা ফারজানাকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন বলে দোষ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। অপর আসামি মাসুদ রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ৪ আগস্ট তাঁকে পুলিশি হেফাজতে এনে এসআই গোলাম রব্বানী জানালার সঙ্গে হাতকড়া লটকায়ে বেধড়ক মারপিট করেছেন। তাঁর শরীরের ক্ষতচিহ্ন আদালতের পরীলক্ষিত হয়। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক নন। এ ছাড়া পুলিশি হেফাজতে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করায় তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আইনগত সুযোগ নেই।
আদালত একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দিয়ে মাসুদ রানার দেহ পরীক্ষা করে শরীরের আঘাতসংক্রান্ত প্রতিবেদন জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আগামী ১০ আগস্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি মাসুদ রানার জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসামির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ না করেই পুলিশের কথা শুনে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এটি দায়িত্বের চরম অবহেলা। ঘটনাটি তদন্ত করে ১৭ আগস্ট সিভিল সার্জনকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এসআই গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিনজন আসামির কাউকেই পুলিশি হোফাজতে নির্যাতন করিনি। আসামি মাসুদ রানা টাকা আত্মসাতের কথা গ্রাহকদের সামনে স্বীকার করেছেন। এখন মামলাগুলো অভিযোগপত্র প্রস্তুতের পর্যায়ে রয়েছে। মাসুদ রানা মামলা থেকে বাঁচতে কৌশল খুঁজছেন।’
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এসআই গোলাম রব্বানী পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেছেন। এ কারণে তাঁকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম কিবরিয়া খান। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বাড্ডা থানায় কর্মরত।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি করেছিলেন এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ ঘটনার ভিডিও তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তারিকুল তখন রামপুরা থানায় আর চঞ্চল রামপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই খিলগাঁও অঞ্চলের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি সভা হয়। সেই সভায় ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই ভিডিওটি দেখে এসআই তারিকুল ও এএসআই চঞ্চলকে শনাক্ত করেন।
পরে জানা যায়, ওই তরুণের নাম আমির হোসেন। তিনি তখন আফতাবনগরে একটি দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর পায়ে ছয়টি গুলি লেগেছিল। তিনি বেঁচে আছেন।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি থানায় ছিলেন। তখন থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারেন হাবিবুর রহমান (ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার) আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে (হাঁটু গেড়ে বসে) গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে থানার বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান বেতার বার্তার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তখন ওসি বিটিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি (তৎকালীন) রাশেদুল ইসলাম ও ওসি (তৎকালীন) মশিউর রহমান বিজিবির এপিসি নিয়ে সোয়া দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের (রাশেদুল ও মশিউর) নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে বনশ্রী জামে মসজিদের পাশে নাদিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামের একজন নিহত এবং মুসা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারেন।
গত বছরের ২১ জুলাই কিংবা ২২ জুলাই তৎকালীন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রামপুরা থানায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ওসিকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন গোলাম কিবরিয়া।
পুলিশের আরেক সদস্য কনস্টেবল (এখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত) আবু বকর সিদ্দিকও এ মামলায় আজ জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসআই তারিকুল, এএসআই চঞ্চলসহ পাঁচজন আসামি।
এ মামলায় আজ কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক নামের আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলাটির পাঁচ আসামি হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এর মধ্যে চঞ্চল কারাগারে। বাকি চারজন পলাতক।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।