একাত্তর না চব্বিশ—এই বিতর্ক অনাহূত
Published: 8th, August 2025 GMT
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চব্বিশের জুলাইয়ের আন্দোলনের বিরোধ নেই। তবে অনেক মূল্য দিয়ে অর্জিত চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পর মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব বিষয়ে সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল, তা করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’ শিরোনামে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য উঠে আসে। সাধারণ সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীসমাজের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘চব্বিশ একাত্তর বাহান্ন, হারতে দেব না কখনো’।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো.
এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জুলাই ঘোষণাপত্র কার্যকর নিয়ে সংশয়ের কথা। জুলাই আন্দোলনে মুখের অবয়ব হারানো খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে গঠিত এই সরকার। আহতদের সুচিকিৎসার ও পুনর্বাসন ছিল তাদের দায়িত্ব; কিন্তু তা হচ্ছে না। এখনই যদি আমাদের অবস্থা এমন হয়, তাহলে পরবর্তী সরকারের কাছে আমরা কী প্রত্যাশা করব।’
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, একশ্রেণির মানুষ একাত্তর আর চব্বিশের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করছে। এটি সম্পূর্ণ অনাহূত ও অশ্রদ্ধার প্রদর্শন। তিনি বলেন, এই সংগ্রামকে ধারণ করতে গিয়ে বিগত সংগ্রামকে ভুলে গেলে ভবিষ্যতের সংগ্রাম ২৪–এর সংগ্রামকে ভুলে যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ সময় আগের বক্তাদের ক্ষোভের সূত্র ধরে বলেন, ‘এক বছর পর এমন হতাশার কথা শুনতে হবে, তা ভাবিনি।’ গত এক বছরে পুলিশ কোনো গায়েবি মামলা করেনি বা গুমের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, শেখ হাসিনার আমলের ১৬ বছরে দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পরিণত হয়েছিল ক্যাডারদের সংগঠনে। তাঁরা দখলের রাজনীতি করেছেন। দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছেন। সেই সব সংস্কৃতিকর্মীই জুলাই আন্দোলনের সময় হতাহত মানুষের পক্ষ না নিয়ে সরকারকে সমর্থন করে গেছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল সমবেত আবৃত্তি। শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’র তিন উদ্যোক্তা আঞ্জুমান লায়না নওশিন, ফাহমিদা সূচনা ও অনন্যা মাহমুদ। গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো লাল জুলাইয়ের কবিতা মঞ্চস্থ করার সময়ের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন তাঁরা।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার এই আয়োজন শুরু হয়। এরপর মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন এক বছর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ ও ভারতের জন্য বাংলাদেশে একটা দাঙ্গা প্রয়োজন: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
আওয়ামী লীগ ও ভারতের জন্য বাংলাদেশে একটা দাঙ্গা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, তাহলে রাজনৈতিক মোড়টা ঘুরতে পারে, নির্বাচন বানচাল হতে পারে। সে জন্যই জাতীয় স্বার্থে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সনাতনীদের নিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শেখ মুজিব বিহারি-বাঙালি দাঙ্গা লাগিয়ে, বিহারি-বাঙালি আলাদা করে ১৯৭০–এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিলেন এই অঞ্চলের লোকদের বাঙালি বানিয়ে। এ ধরনের ঘটনা ঘটানোরও পেছনে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পটু। দরকার হলে নিজের ঘরে আগুন দিয়ে দেবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা আরও বলেন, সাম্প্রদায়িকতার মাঝে একটা রাজনীতি আছে। এ ভারতবর্ষে, এ উপমহাদেশে অনেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। কিছু গুজবের কারণে। ভারতে এসব দাঙ্গা এখনো চলমান। রাজনৈতিক কুটিলতার মধ্যে এ সাম্প্রদায়িকতা এখন না, হাজার বছর আগে থেকে আছে।
কোনো মানুষ কিংবা ধর্ম সাম্প্রদায়িক নয় উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কখনো কোনো কিছু মোকাবিলা করার জন্য দাঙ্গা-ফ্যাসাদ করাতে হয়। যাতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আরেক দিকে চলে যায়। এইচ এম এরশাদও ’৮৮ সালে এ কাজটা করেছিলেন। বাংলাদেশে মুসলমান নয়, হিন্দুরাই হিন্দুদের শত্রু, হিন্দুরাই হিন্দুদের ক্ষতি করে।
গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘আমি হিন্দু–মুসলমানের ব্যবধান বুঝি না। আমি খারাপ আর ভালো লোকের ব্যবধান বুঝি। সৎ লোক–প্রতারকের ব্যবধান বুঝি। আমি সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করি না, অসাম্প্রদায়িক জীবন যাপন করতে পছন্দ করি।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘হিন্দু-মুসলমান আমরা একটা বৃহত্তর সংস্কৃতির অংশ। এখানে কোনো প্রভেদ ছিল না, কোনো বিভেদ ছিল না। এটাকে শেখ হাসিনা ভাঙতে চেয়েছেন।
দেখাতে চেয়েছেন এই দেশ বিভেদ–বিভাজনে ভরপুর। সুতরাং আমাকে সমর্থন করো। অন্য বিরোধী দল কাউকে সমর্থন করবে না। এ কারণে তিনি জোর করে জনসমর্থন ব্যতিরেকে দিনের ভোট রাতে করে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে না দিয়ে নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভোট করেছেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করেছেন।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের সভাপতি অপর্ণা রায় দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যুগ্ম মহাসচিব মীর সরাফত আলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী এবং জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক।