থমকে গেছে জুলাই যোদ্ধা মিশনের জীবন
Published: 9th, August 2025 GMT
সাহাদাত হোসেন মিশন (৩০), মাদারীপুর জেলার শিবচরের শিরুয়াইল ইউনিয়নের পূর্বকাকৈর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক হুমায়ুন কবির খানের বড় ছেলে। কাজ করতেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের। থাকতে ঢাকার শাহজাদপুরের খিলবাড়ির টেক।
জুলাই আন্দোলন শুরু হলে নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি তিনি। ১৯ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে প্রথম দিনই রাবার বুলেটে আহত হন। এরপর ৪ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় গুলির আঘাতে ভেঙে যায় পা। দীর্ঘ ১০ মাস ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
তবে আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না তার; থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবন, থেমে গেছে উপার্জনের চাকাও। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান তিনি। সরকার যেন তার মতো অসংখ্য আহত জুলাই যোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে শীঘ্রই- এমনটাই দাবি এই জুলাই যোদ্ধার।
আরো পড়ুন:
৭১-এর মতো ২৪-এ বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হাফিজ
জুলাইয়ের ভয়াবহতা: সরকার প্রধানের কণ্ঠে হত্যার নির্দেশ
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির পাশের রাস্তায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছেন তিনি। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বসে থাকতে ভালো না লাগায় মাঝে মধ্যেই বাড়ির বাইরে বের হন। তারা দুই ভাই এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ছোট ভাই আর মা, বাবাকেই নিয়ে মিশনের সংসার। এখনো বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি মিশন।
মিশন জানান, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে হয় তাকে। ক্র্যাচে ভর দিলে সেই গতি কিছুটা বাড়ে। খুব দরকার না হলে বাড়ির বাইরে খুব একটা বের হন না। কখনো ক্র্যাচে ভর দিয়ে আবার কখনো ক্র্যাচ ছাড়া বাড়ির আঙিনা, পাশের রাস্তায় হেঁটে বেড়ান এই জুলাই যোদ্ধা। তিনি অপেক্ষা করছেন, সুস্থ্যতার, স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে পারার। তবে জানেন না, আদৌ স্বাভাবিক হতে পারবেন কি না।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আহত সাহাদাত হোসেন মিশন বলেন, “১৮ জুলাই কাজের জন্য আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। ঢাকার অবস্থা ফেসবুকে দেখি। তখনো ইন্টারনেট ছিল। আন্দোলনের শুরু থেকেই আমি স্বৈরাচার হটানোর পক্ষে ছিলাম। মনে মনে প্রার্থনা করতাম, স্বৈরাচারের অবসান হোক এ দেশ থেকে। এরপর আন্দোলন যখন বেগবান হচ্ছে, তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “ওই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। ১৯ জুলাই ঢাকায় ফিরে সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেই। তখন আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাই। ছাত্রদের সঙ্গে মিশে যাই আন্দোলনে। তুমুল আন্দোলন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। তাদের সঙ্গে রামপুরার দিকে যখন যাই, তখনই পুলিশের গুলি বর্ষণ শুরু হয়। রাবার বুলেট লাগে ডান পায়ে। বাসায় ফিরে যাই ওই অবস্থায়।”
তিনি আরো বলেন, “চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ্য হয়ে কাজ শুরু করি। কাজ শেষে আন্দোলনে যাই, খোঁজ-খবর রাখি নিয়মিত। এরপর ৪ আগস্ট আন্দোলন যখন তুমুল পর্যায়ে। তখন বন্ধুদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি, যোগ দেই আন্দোলনে। প্রথমে শাহবাগ পিজি হাসপাতালের ওখানে যাই। সেখান থেকে আমরা বিকেল ৫টার দিকে তেজগাঁও-কারওয়ান বাজারের মাঝামাঝি স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলাম।”
মিশন বলেন, “স্বৈরাচার হটানোর স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ তখন উত্তাল। মনে হচ্ছে জয়ের দ্বার প্রান্তে আমরা। ওই মূহুর্তে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ-বিজিবির মুহুর্মুহ গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। এরই মধ্যে পরপর দুটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় বাম পায়ে। মুহূর্তেই ভেঙে টুকরো হয়ে যায় বাম পা। সেই থেকে ১০ মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কাজ করতে পারি না।”
মিশন আরো বলেন, “জুলাই ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অনুদান পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মতো আহতদের স্থায়ী কর্মসংস্থান দরকার। বর্তমান সরকারের কাছে এই দাবি জানাচ্ছি। যাতে করে, আমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারি।”
মিশনের বাবা মো.
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। সরকার তার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই গণঅভ য ত থ ন আহত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গম পাহাড়ে হরকাবানে তিন দিন আটকা ছিলেন, খাবারও ছিল না, এরপর কী করলেন একদল পর্যটক?
ছবি: মিঠুন আচার্যের সৌজন্যে