নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গাজার পক্ষে নরওয়ে কাঁপিয়ে দিল ব্যান্ডটি
Published: 10th, August 2025 GMT
অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা কেমন হতে পারে—তা আবারও বিশ্ববাসীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল আইরিশ হিপহপ ব্যান্ড নিক্যাপ। গত শুক্রবার নরওয়ের অসলোর মঞ্চে ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে ব্যান্ডটি। শুধু অবস্থান জানিয়েই থেমে থাকেনি, ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়াই নরওয়ের মাটিতেই দেশটির সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে নিক্যাপ।
শুক্রবারের শো শুরুর আগে পর্দায় ভেসে ওঠে একটি বার্তা, যেখানে নরওয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। বার্তায় বলা হয়, দেশটির সরকার সার্বভৌম তহবিল ‘ওয়েল পেনশন ফান্ড’ বিনিয়োগের মাধ্যমে গণহত্যাকে সরাসরি সহায়তা করছে।
বার্তায় আরও বলা হয়, ‘২১ মাসে ইসরায়েল ৮০ হাজারের বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।’ উপস্থিত দর্শকেরা তখন করতালি ও উল্লাসে ব্যান্ডটির সঙ্গে সংহতি জানান।
গত মাসে ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগে নিক্যাপকে তিন বছরের জন্য হাঙ্গেরিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। আগামীকাল ১১ আগস্ট দেশটির সিগেট ফেস্টিভ্যালে ব্যান্ডটির পারফর্ম করার কথা থাকলেও এর বিরোধিতা করে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করে দেশটির ১৫০ জনের বেশি শিল্পী ও সংগীতশিল্পী।
এক বিবৃতিতে নিক্যাপ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদকারীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার আরও একটি চেষ্টা।’ উৎসবের আয়োজকেরা জানিয়েছে, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ‘অপ্রয়োজনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক’। কারণ, ব্যান্ডটি তাদের আশ্বস্ত করেছিল যে তাদের পারফরম্যান্স ‘সিগেটের মূল্যবোধ বা হাঙ্গেরির আইন লঙ্ঘন করবে না’।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য ন ডট দ শট র স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গণহত্যা বন্ধে আরও পদক্ষেপ জরুরি
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের একই দিনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। শতাধিক দেশ বহু আগে থেকেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে; তবে এই পশ্চিমা শক্তিগুলোর পদক্ষেপ কেবল সংখ্যাত্মক নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের দিক থেকে অতুলনীয় গুরুত্ব বহন করে। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বৈশ্বিক কূটনীতির মঞ্চে প্রভাবশালী এই দেশগুলো যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তখন এটি কেবল কাগজে লেখা ঘোষণা নয়—এটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ধারণাকে নতুন প্রাণশক্তি দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতীকী হলেও তা গভীর অর্থ বহন করে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই স্বীকৃতি কি ফিলিস্তিনি মানুষের দৈনন্দিন যন্ত্রণার সীমারেখা অতিক্রম করতে পারবে? গাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা মা, যিনি তাঁর সন্তান হারিয়েছেন অথবা পশ্চিম তীরে দখলদার সৈন্যদের হাতে প্রাণ হারানো কিশোর—তাদের জন্য এই ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রভাব আসলে কতটা? যখন মৃত্যুর মিছিল, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও মানবিক সংকট অব্যাহত, তখন এই প্রতীকী পদক্ষেপ বাস্তব জীবনকে রক্ষা করতে পারছে না।
স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণার দিনেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে লন্ডনে অভ্যর্থনা জানায় আর গাজায় নিরীহ জনপদে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতেও তাদের অস্ত্র (যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ) ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে যদি ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে এ ধরনের স্বীকৃতি বাস্তবে আসলে কী ফল দেবে।
কূটনীতির মসৃণ ভাষণে মানবাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিধ্বনি শোনা গেলেও বাস্তব নীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে কৌশলগত স্বার্থ, সামরিক ব্যবসা ও ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিকে শুধু প্রতীকী পদক্ষেপে সীমাবদ্ধ করে।
গাজার মাটি আজও লাল রঙে রাঙানো। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ৬৪ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত, লাখো মানুষ গৃহহীন, অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত। হাসপাতাল ও চিকিৎসাব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত, খাদ্য ও পানির সরবরাহ ব্যাহত, শিশুরা অনাহারে মৃত্যুর মুখোমুখি। এই ভয়াবহ মানবিক বাস্তবতায় কেবল প্রতীকী স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়। এখন জরুরি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন অবরোধ প্রত্যাহার, আগ্রাসন বন্ধ, পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ।
বিশ্বরাজনীতির জটিল হিসাব-নিকাশ, বাণিজ্য স্বার্থ এবং নানা বৈপরীত্য সত্ত্বেও চারটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের এই স্বীকৃতি রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের অস্তিত্বকে অস্বীকারের ইসরায়েলি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে পুনরায় জাগ্রত করে। এটি কেবল কূটনীতির মঞ্চে নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মানচিত্রেও ফিলিস্তিনকে দৃঢ় অবস্থানে রাখে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখনো জীবন্ত—এ বার্তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট।
কিন্তু এই স্বীকৃতির প্রকৃত মূল্য তখনই প্রতিফলিত হবে, যখন স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলো বাস্তব পদক্ষেপে প্রবল ও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে। গণহত্যা বন্ধ, দখলনীতি স্থায়ীভাবে ত্যাগ, গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং মানবিক সহায়তায় সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া এই স্বীকৃতি শূন্য প্রতীক হয়ে থাকবে। ফিলিস্তিনিদের অবিচ্ছেদ্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার শুধু ঘোষণায় নয়, বাস্তব সহায়তায় নিশ্চিত করতে হবে।
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এটি কেবল সূচনালগ্ন। এখন প্রয়োজন দৃঢ় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। প্রয়োজন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে দ্রুত অগ্রগতি, যাতে প্রতীকী স্বীকৃতি ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত মাটিতে তার বাস্তব প্রতিফলন খুঁজে পায়। এই প্রতিফলনই হবে মানবিক ন্যায়ের জয়, যা কূটনীতির নীরবতার আবরণ ভেঙে দিয়ে স্বাধীনতার দীপ্তিকে চিরন্তন করে তুলবে।