ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা, মরদেহে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন
Published: 11th, August 2025 GMT
গাজীপুরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে ওই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তির গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান।
নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভিডিও করার সময় চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ থেকে শনাক্ত করে এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত শনিবার গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এন এম আল মামুন বলেন, নিহত তুহিনের গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে সৃষ্ট গুরুতর ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আঘাতগুলো আকারে ছোট-বড় হলেও প্রতিটিই সমান, গুরুতর ও গভীর ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে গেছি। আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতে আজ সোমবার তোলা হবে। তাঁদের সবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এর আগে ওই হত্যাকাণ্ডে ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে আসার পর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডসহ সারা দেশে সাংবাদিক হত্যা, গুম, খুন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবিতে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুপুরে সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটি ও গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী, গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এম কাজল খান, সাংবাদিক রাজু আহম্মেদ, আবু সালেহ, পলাশ সরকার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ফয়েজুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
আরও পড়ুনসিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত, স্বামী-স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৪০৮ আগস্ট ২০২৫সাংবাদিক হত্যাকান্ডে পুলিশের অবহেলা রয়েছে
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে সরকারের ব্যর্থতা, পুলিশ প্রশাসনের অবহেলা ও শক্তিশালী গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ বেলা ১১টায় গাজীপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও সরকার তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। শুধু ভিডিও ধারণ করার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেনি; এর পেছনে আরও বড় কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে। আমরা জানতে পেরেছি, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া কেউ গাজীপুরের বাসিন্দা নয়, তাহলে এই খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা কারা ছিল? তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে।’
আতাউর রহমান আরও বলেন, গাজীপুরে কারা এই সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করছেন, যাঁরা হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। গাজীপুরে প্রতিনিয়ত খুন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা এখানে আশ্রয় নিচ্ছেন, অথচ তাঁদের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক হত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া সতর্ক করে বলা হয়, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন গাজীপুর মহানগরের সভাপতি ফয়জ উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন মহানগর শাখার সহসভাপতি হাবিবুর রহমান মিয়াজী, এম এ হানিফ সরকার, অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম, মুফতি হোসাইন আহমদ প্রমুখ।
আরও পড়ুনশুক্রবারই মায়ের কাছে এলেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে০৮ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ ক আস দ জ জ ম ন ত হ ন ময়ন তদন ত হত য ক ণ ড ব দ ক হত য ন তদন ত র র রহম ন গ র তর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।