আগামী নির্বাচন হবে মাইনাস আওয়ামী লীগ: অলি আহমদ
Published: 12th, August 2025 GMT
আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাইনাস আওয়ামী লীগ হবে। এখন একমাত্র লক্ষ্য হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, নট ইনক্লুসিভ। দেশদ্রোহীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। ইনক্লুসিভ মানে হলো দেশদ্রোহীদেরও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারের এলডিপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অলি আহমদ।
বর্তমান সরকার সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের মতো কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, নিগৃহীত নেতা–কর্মীরা বিগত এক বছরে যেসব মামলা করেছেন, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে নীরব ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এভাবে একটা সরকার চলতে পারে না। এটা হলো আবু হোসেন সরকার। ১৯৫৮ সালে আবু হোসেন সরকারে সকালে একজন প্রধানমন্ত্রী, বিকেলে একজন প্রধানমন্ত্রী হতো। বর্তমান সরকারও আবু হোসেন সরকারের মতো কাজ করছে, এভাবে না থেকে জনগণের সরকারের মতো কাজ করুন।
অলি আহমদ বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা এখনো পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি। আইন উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমগ্র দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, কিছু কিছু মন্ত্রণালয় দেউলিয়াপনায় ভুগছে। কারণ, এখনো স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে আছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে দেশদ্রোহীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার ও শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, অন্যথায় কখনো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, শেখ হাসিনা ভারতে বসে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।
নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বদলি করার প্রসঙ্গে অলি আহমদ বলেন, মনে হয় অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। বদলির জন্য লটারি কোনো সমাধান হতে পারে না। বরং বদলি করা হবে নির্দিষ্ট এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে। লক্ষ্য হওয়া উচিত অস্ত্রধারী এবং গুন্ডারা যেন নির্বাচন প্রভাবিত করতে না পারেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে দুর্নীতিবাজ ও দেশদ্রোহীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা স্বৈরাচারদের সাহায্য করবে, তারা পরাজিত হবে এবং ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ফার্মেসিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের জরুরি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, দেশে সঠিক চিকিৎসাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের অবস্থা কী হবে, কোথায় যাবেন তাঁরা? এর সমাধান বা কোথায়? এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, নেয়ামুল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, হামিদুর রহমান খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ন সরক র সরক র র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।