আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাইনাস আওয়ামী লীগ হবে। এখন একমাত্র লক্ষ্য হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, নট ইনক্লুসিভ। দেশদ্রোহীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। ইনক্লুসিভ মানে হলো দেশদ্রোহীদেরও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারের এলডিপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অলি আহমদ।

বর্তমান সরকার সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের মতো কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, নিগৃহীত নেতা–কর্মীরা বিগত এক বছরে যেসব মামলা করেছেন, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে নীরব ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এভাবে একটা সরকার চলতে পারে না। এটা হলো আবু হোসেন সরকার। ১৯৫৮ সালে আবু হোসেন সরকারে সকালে একজন প্রধানমন্ত্রী, বিকেলে একজন প্রধানমন্ত্রী হতো। বর্তমান সরকারও আবু হোসেন সরকারের মতো কাজ করছে, এভাবে না থেকে জনগণের সরকারের মতো কাজ করুন।

অলি আহমদ বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা এখনো পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি। আইন উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সমগ্র দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, কিছু কিছু মন্ত্রণালয় দেউলিয়াপনায় ভুগছে। কারণ, এখনো স্বৈরাচারী সরকারের মদদপুষ্ট অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে বসে আছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে দেশদ্রোহীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার ও শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, অন্যথায় কখনো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, শেখ হাসিনা ভারতে বসে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।

নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বদলি করার প্রসঙ্গে অলি আহমদ বলেন, মনে হয় অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। বদলির জন্য লটারি কোনো সমাধান হতে পারে না। বরং বদলি করা হবে নির্দিষ্ট এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে। লক্ষ্য হওয়া উচিত অস্ত্রধারী এবং গুন্ডারা যেন নির্বাচন প্রভাবিত করতে না পারেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে দুর্নীতিবাজ ও দেশদ্রোহীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যারা স্বৈরাচারদের সাহায্য করবে, তারা পরাজিত হবে এবং ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ফার্মেসিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের জরুরি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, দেশে সঠিক চিকিৎসাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের অবস্থা কী হবে, কোথায় যাবেন তাঁরা? এর সমাধান বা কোথায়? এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, নেয়ামুল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, হামিদুর রহমান খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ স ন সরক র সরক র র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।

নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।

পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।

সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসু

নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’

সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য

চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।

সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’

চাকসু ভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক মারা গেছেন
  • ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই
  • গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক
  • পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল