বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
Published: 14th, August 2025 GMT
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ দিন ধরে চলমান আন্দোলন এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে গত কয়েকদিন ধরে চলা অনশনকারীদের ওপর হামলা ও ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের আয়োজনে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যহত করার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের পরপরই আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সংসদের নেতৃত্বে জাহিন-রাফি
রাকসু ফান্ডে জমা ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, হল সংসদের ফান্ড অস্পষ্ট
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
তিনি বলেন, “১৩ আগস্ট বরিশালে সফরে এসে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সেই পুরনো সিন্ডিকেট দালাল চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনশনরত শিক্ষার্থীসহ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আমরা ১৮ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্ব-শরীরে বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেবেন। কারণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরবর্তী যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।”
রনি বলেন, “যে কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো উপদেষ্টার কাছে বলতে চেয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা না এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বরিশালে পাঠিয়েছেন। মহাপরিচালক বরিশালে মতবিনিময় সভা করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কোনো প্রতিনিধি না রেখে বরং অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এ কারণেই হাসপাতালের স্টাফরা আন্দোলনকারী ও অনশনরতদের ওপর হামলা চালাতে সাহস দেখিয়েছেন। আমারা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করব।”
অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্ররা আমাদের কটূক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এ সময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।”
এর আগে, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল থেকে শহরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা আহত হন এবং আন্দোলনরত কয়েকজনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা/পলাশ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল স ব স থ য উপদ ষ ট র বর শ ল শ র ই ব ছ ত র জনত
এছাড়াও পড়ুন:
সাদা পাথর রক্ষায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ৩ দাবি
সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দেশের পর্যটন খাত ধ্বংসের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে তারা এ মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা অবিলম্বে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা ‘আমার সোনার বাংলায়, পাথর খেকো ঠাঁই নাই’, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো, পাথর খেকো সাইজ কর’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘লাল জুলাইয়ের বাংলায়, পাথর খেকো খায় নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
৩ দফা দাবিতে শাবিপ্রবি প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ডাকসুতে প্রথম দিনে মনোনয়নপত্র নিলেন ছাত্রীসহ ৭ জন
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সিলেটের সাদা পাথর এলাকায় এখন শুধু ‘সাদা’ আছে, পাথর নেই। এখানকার সব পাথরখেকোরা পাথর খেয়ে জায়গাটি মরুভূমিতে পরিণত করেছে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, তিনি এটা আটকাতে পারছেন না। প্রশ্ন হলো—তাদের কী এত ক্ষমতা যে প্রশাসনের সামনেই সব পাথর খেয়ে ফেলছে? আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আপনারা দ্রুত তাদের আটকান, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন এবং পর্যটন কেন্দ্রকে রক্ষা করুন।
ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আশা তালুকদার বলেন, “সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকার সব পাথর উত্তোলন করে এলাকা সম্পূর্ণ ফাঁকা করে ফেলা হয়েছে। আমরা যদি এগুলো রক্ষা করতে না পারি, তবে বাংলাদেশের অস্তিত্বই কোথায় থাকবে? প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি—এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেন।”
রুবেল আহমেদ রাহী বলেন, “কিছুদিন আগেও পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ান হাসান সিলেট থেকে ঘুরে এসে বলেছিলেন, আর পাথর উত্তোলন হবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রশাসনের নাকের ডগা থেকে দিনের আলোতেই পাথর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব দেখেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশ উপদেষ্টাকে বলতে চাই—আপনি উপদেষ্টার চেয়ারে বসে কী আঙুল চুষছেন? সাদা পাথরের সব পাথর শেষ, বালি শেষ—এখন নৌকা নষ্ট করে কী করবেন? পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দেখতে চাই। অবিলম্বে এসব চোর-অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনুন।”
এ সময় শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; পরিবেশ রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে; পাথরখেকোদের সঙ্গে প্রশাসনকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী