সিপিএলের প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে ব্যর্থ সাকিব, হারে শুরু অ্যান্টি
Published: 15th, August 2025 GMT
দুই মৌসুম পর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ফিরলেও প্রত্যাশিত সূচনা হলো না সাকিব আল হাসানের। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকার পর ইংল্যান্ডে এক সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়েও তিনি অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে প্রথম ম্যাচে ব্যাট ও বলে ছিলেন নিষ্প্রভ।
ওয়ার্নার পার্কে উদ্বোধনী ম্যাচে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের কাছে ৬ উইকেটে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে অ্যান্টিগা। টস হেরে আগে ব্যাট করে দলটি গুটিয়ে যায় মাত্র ১২১ রানে। যুক্তরাষ্ট্রের অলরাউন্ডার কারিমা গোরে একাই করেন দলের অর্ধেকের বেশি রান, ৩৪ বলে ৬১। বাকিদের মধ্যে কেউ ১২ রানের বেশি করতে পারেননি।
ছয়ে নেমে সাকিব খেলেন ১৬ বল, করেন মাত্র ১১ রান, কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই। টাইমিংয়ে ভুগে শেষ পর্যন্ত ছক্কার চেষ্টায় ওয়াকার সালামখেইলের হাতে ক্যাচ দেন লং-অফে। বল হাতে পান মাত্র এক ওভার, দেন ৬ রান, পাননি কোনো উইকেট।
আরো পড়ুন:
সাকিব আলো ছড়ালেও হতাশার দিন কাটলো মায়ামি ব্লেজের
সাকিবের দরজা সবসময় খোলা: বিসিবি পরিচালক
অ্যান্টিগার বিপর্যয়ে শুরুটা হয় নবাগত জুয়েল অ্যান্ড্রুর প্রথম ওভারে উইকেট হারিয়ে। এরপর রাকিম কর্নওয়াল, বেভন জ্যাকবস, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন দ্রুত ফেরেন সাজঘরে। অধিনায়ক ইমাদ ওয়াসিম ও ওডিন স্মিথও দলের হাল ধরতে ব্যর্থ হন।
বোলিংয়ে আফগানিস্তানের বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সালামখেইল ছিলেন অনবদ্য। ৪ উইকেট নেন মাত্র ২২ রানে। ফাজল হক ফারুকি ও নাসিম শাহ নেন ২টি করে উইকেট।
রান তাড়ায় সেন্ট কিটসকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। এভিন লুইস ঝড় তোলেন ১৩ বলে ২৫ রান করে। যদিও রাইলি রুশো শূন্য এবং কাইল মেয়ার্স ১৫ রানে ফিরেন। এরপর আলিক আথানেজের অপরাজিত ৩৭ ও জেসন হোল্ডারের ১৮ রানে সহজ জয় নিশ্চিত হয়।
অ্যান্টিগার হয়ে কর্নওয়াল নেন ২ উইকেট। ওবেড ম্যাককয় ও আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফার পান একটি করে। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে সাকিবের প্রভাব ছিল নগণ্য। ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময় আগামী রোববার ভোর ৫টায় সাকিবদের পরবর্তী ম্যাচ বার্বাডোস রয়্যালসের বিপক্ষে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ব আল হ স ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’