ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে খুনিদের, তবু ধরছে না পুলিশ—ক্ষোভ রূপলালের স্ত্রীর
Published: 15th, August 2025 GMT
যাঁরা তাঁর স্বামীকে মেরেছে, তাদের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের এখনো ধরা হয়নি। পুলিশের উচিত তাদের ধরা। মামলা কতজনের নামে হয়েছে, তিনি জানেন না। থানায় তিনি যাননি, পুলিশ বাড়িতে এসে স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে, তারাই তাঁর স্বামীকে মেরেছে।
আজ শুক্রবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন ভারতী রানী। গত শনিবার রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাটে গণপিটুনিতে নিহত হন তাঁর স্বামী কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস। একই ঘটনায় নিহত হন তাঁর আত্মীয় মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন ও প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
প্রকাশ্যে জনসমক্ষে পিটিয়ে হত্যার এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও চিহ্নিতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। ভারতী রানী বলেন, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে হত্যাকারীদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের নাম-পরিচয়ও সবার জানা। তিনি চান আসল অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার, তবে নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, ঘটনার দেড় কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বুড়িরহাট, পাইকারপাড়া, বালাপুর ও রহিমাপুর গ্রামের প্রায় ২০-২৫ জন মারধরে অংশ নিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও তাঁদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অথচ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭০০ জনকে।
রূপলালের ছেলে জয় দাস বলেন, ‘আসামি কতজন করেছে, জানি না। কিন্তু ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে, তাদের তো ধরা উচিত। চারজনকে ধরে বসে আছে। বাকিদের কেন ধরা হচ্ছে না? কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। তাহলে আমরা বিচার পাব কি পাব না?’
এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তারের আতঙ্কে অনেক গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
তারাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘গুটিকয় লোক—২০ থেকে ২৫ জন—ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এত লোক নয়। ৭০০ জনের নামে মামলা ব্যবসার জন্য করা হয়েছে।’
কুর্শা ইউনিয়নের সাবেক সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘রূপলাল খুব নিরীহ ও ভালো মানুষ ছিলেন। অথচ তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করার পর পুলিশ কয়েকজনকে ধরেছে, এরপর আর কিছু করছে না। ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে, তাদের কাউকে ধরছে না।’
আরও পড়ুনচরম বর্বরতা দেখিয়ে, উল্লাস করে রূপলাল ও প্রদীপকে হত্যা করা হয়১৩ আগস্ট ২০২৫তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ‘আসামি ধরতে অভিযান চালাচ্ছি না, এ অভিযোগ ঠিক নয়। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তারা এলাকার বাইরে পালিয়ে গেছে। তাই গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি।’ ৭০০ জনের নামে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাদী অভিযোগ দিয়েছে, মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না।’
নিহত রূপলালের পরিবার জানায়, রূপলাল দাসের মেয়ে নূপুর রানীর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুরের শ্যামপুর এলাকার এক যুবকের সঙ্গে। গত রোববার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে রূপলালের ভাগনির স্বামী প্রদীপ লাল আগের দিন শনিবার ঘনিরামপুর গ্রামে রূপলালের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ কাজীরহাট এলাকায় এসে রূপলালকে ফোন করেন। সেখানে রূপলাল গিয়ে দুজন ভ্যানে চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন।
পরিবার আরও জানায়, রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন যুবক তাঁদের আটকে দেন। প্রদীপ লালের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে কয়েকটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করা হয়। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে লোক জমতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তাঁদের চোর বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তখন উপস্থিত এক ব্যক্তি বোতলের গন্ধ শুঁকে নাটকীয় ভঙ্গিতে পড়ে যান। এরপর দুজন তাঁকে সরিয়ে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। শতাধিক লোক জড়ো হয়ে রূপলাল ও প্রদীপ লালকে মারতে শুরু করেন। তাঁদের বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও উদ্ধার না করে চলে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাঁদের উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে নেওয়ার আগে একজনের মৃত্যু হয়; অন্যজন কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান।
আরও পড়ুনহাত জোড় করে বাঁচার আকুতি, তবু শেষ রক্ষা হয়নি রূপলাল ও প্রদীপের১১ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পল ল র
এছাড়াও পড়ুন:
হালুয়াঘাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করতে পারেনি।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়েটি উপজেলার একটি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার দুপুরে সে তার বন্ধুর সঙ্গে একটি পার্কে বেড়াতে যায়। বিকেলের দিকে সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে কিশোরীকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেয় বন্ধু। এ সময় অটোরিকশাচালক হালুয়াঘাট উপজেলা শহরে পূজামণ্ডপ দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। একপর্যায়ে মেয়েটিকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে গামারীতলা এলাকায় মেয়েটিকে নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশাচালক চলে যায়। এরপর মেয়েটিকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে পুলিশ সোমবার রাতেই অভিযুক্ত আবুল বাশারের (২৫) বাড়িতে যায়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় পুলিশ তাঁর অটোরিকশাটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানায় অভিযোগ দিতে যায় মেয়েটির পরিবার। এ বিষয়ে রাতে হালুয়াঘাট থানার ওসি হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেদের কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে মেয়েটির মা বাদী হয়ে অভিযোগ দিচ্ছেন। অভিযোগ হাতে পেলেই আমরা রাতেই মামলা হিসেবে গ্রহণ করব। অভিযুক্তকেও আমরা ধরে ফেলব।’