যশোরের শার্শা উপজেলায় জোরপূর্বক একটি পেট্রলপাম্প দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে তনিমা তাসনুমা আজ রোববার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন।

ওই নেতার নাম আনোয়ার হোসেন। তিনি বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তনিমা তাসনুমা বলেন, আনোয়ার হোসেন জালিয়াতি করে কাগজপত্র বানিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাদের পাম্পটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর বাবা গোলাম কিবরিয়া ১৯৯৫ সালে বাগআঁচড়া মৌজার ১৭ শতক জমি কিনে ‘মেসার্স গোলাম কিবরিয়া ফিলিং স্টেশন’ নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২০২২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর ২০২৩ সাল থেকে আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা জাল দলিল তৈরি করে বারবার পাম্পটি দখলের চেষ্টা করেন।

তনিমার অভিযোগ, সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে আনোয়ার হোসেন ফিলিং স্টেশনে প্রবেশ করে চাবিসহ সব কাগজপত্র নিয়ে যান এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে বের করে দেন। পুলিশকে জানালে তাঁরা সরে যান। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পাম্প দখলের হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। এ পরিস্থিতিতে সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

তবে আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংবাদ সম্মেলনকারী তনিমা তাসনুমার বাবা গোলাম কিবরিয়ার কাছ থেকে তিনি ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা দিয়ে জমিসহ ফিলিং স্টেশন কিনেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ফিলিং স্টেশনটি তাঁর দখলে ছিল এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এটি পরিচালনা করেছেন। কিন্তু কিবরিয়ার স্ত্রী-সন্তানেরা দলিল ও চুক্তিনামা মানছেন না। তাঁরা পেট্রলপাম্প মালিক সমিতি ও পুলিশকে দিয়ে পাম্পটি দখল করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আগেই আমাদের কাছে উভয় পক্ষ নালিশ করেছে। অভিযোগকারী তনিমার বাবা গোলাম কিবরিয়াও বিএনপির রাজনীতি করতেন। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এই ফিলিং স্টেশনের সব কাগজপত্র আমি দেখেছি। জাল জালিয়াতের একটি অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিলে জানা যাবে।’

হাসান জহির বলেন, আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া। ওই টাকার বিনিময়ে তিনি জমি ও ফিলিং স্টেশন আনোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইয়ের নামে দলিল করে দেন। গোলাম কিবরিয়ার পরিবারের লোকজনের পেট্রলপাম্পের ব্যবসা আছে। পেট্রলপাম্প সমিতির প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা আগেই আনোয়ারের দখলে থাকা ফিলিং স্টেশনটি দখল করেছেন। আনোয়ার হোসেন তাঁর সম্পত্তি ফিরে পেতে চান। কারণ, জমি ও লাইসেন্স তাঁর নামে রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক প্রভাবের কোনো বিষয় নেই।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আলিম বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম ক বর য় প ট রলপ ম প ব এনপ র কর ছ ন র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পাসপোর্ট-এনআইডি থাকার বিষয়ে কী বলছেন টিউলিপ, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া কী

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে ‘ভুয়া’ পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টিউলিপের এই অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়। টিউলিপের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে প্রথম আলো ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস যৌথ অনুসন্ধান করে। এই যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টিউলিপের নামে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। তিনি এখানকার ভোটার। বাংলাদেশি পাসপোর্টও করেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন।

দ্য টেলিগ্রাফ যেসব নথিপত্র দেখেছে, তাতে দেখা যায়, সাবেক লেবার মন্ত্রী টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে, যা তাঁর আগের দাবির সঙ্গে মেলে না।

তবে গতকাল টিউলিপ জোর দিয়ে বলেন, তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে এসব কাগজপত্র জাল করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের এই এমপির একজন মুখপাত্র দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর ধরে টিউলিপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে।

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ) টিউলিপের আইনজীবী দলের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তারা তাদের ভিত্তিহীন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি। এবার তারা এমন কাগজপত্র জাল করেছে, যা পুরোপুরি ভুয়া এবং জাল করার সব লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

টিউলিপের মুখপাত্র বলেন, এসব কাগজপত্রের সত্যতা নিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০০১ সালে ১৯ বছর বয়সে টিউলিপ বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছিলেন। আর ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেয়েছিলেন।

নথিপত্র আরও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ে টিউলিপ পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন।

তবে টিউলিপের সহযোগীরা নথিপত্রে নানা ‘অসংগতি ও অনিয়ম’ তুলে ধরেছেন, যা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

যেমন নথিপত্রে টিউলিপের ঠিকানা হিসেবে ঢাকার একটি বাড়ির কথা উল্লেখ আছে, যা তাঁর খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালিকানাধীন।

টিউলিপের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জোর দিয়ে বলেছে, তিনি কোনো দিন ঢাকায় থাকেননি। টিউলিপ কখনো বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন—এটাও তাঁরা স্পষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, তিনি শুধু ছোটবেলায় একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনের ‘উপহার’, লন্ডনে মিলল টিউলিপের আরও একটি ফ্ল্যাট০৫ জানুয়ারি ২০২৫যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিদেশে সম্পদের নথি খুঁজতে দুদকের অভিযান, ২৩ বস্তা কাগজপত্র জব্দ
  • রাজশাহীতে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
  • বাংলাদেশি পাসপোর্ট-এনআইডি থাকার বিষয়ে কী বলছেন টিউলিপ, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া কী