মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বর্ডার জার’ (সীমান্ত ও অভিবাসনবিষয়ক উপদেষ্টা) টম হোম্যান সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছিলেন। গত বছর কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআই-এর এক গোপন অভিযানে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছিল। গতকাল রোববার এ ঘটনার বিষয়ে জানাশোনা থাকা দুটি সূত্রের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এফবিআই-এর এক সদস্য একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেজে হোম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তাঁকে ৫০ হাজার ডলার ভর্তি একটি ব্যাগ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ হোম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষের তদন্ত শুরু করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে এই গোপন তদন্তের বিষয়ে কথা বলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘুষ নেওয়ার বিনিময়ে হোম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর অভিবাসন-সংক্রান্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেবেন।

একটি সূত্র বলেছে, এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল তদন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে হোম্যানের বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।

গতকাল সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে এই গোপন তদন্তের বিষয়ে কথা বলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘুষ নেওয়ার বিনিময়ে হোম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর অভিবাসন-সংক্রান্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেবেন।

গতকাল রোববার কাশ প্যাটেল এবং উপ-অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্লাঞ্চ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ব্যাপারটি মূলত আগের প্রশাসনের সময়ে শুরু হয়েছিল এবং এফবিআইয়ের কর্মী ও বিচার বিভাগের প্রসিকিউটররা এটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন। এটাকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বলে বিবেচনা করার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাননি তাঁরা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মার্কিন জনগণের প্রতি প্রকৃত হুমকির দিকে বিচার বিভাগের অবশ্যই মনোযোগী থাকা উচিত, ভিত্তিহীন তদন্তে নয়। তাই এই তদন্ত বন্ধ করা হয়েছে।’

রয়টার্সকে একটি সূত্র বলেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে হোম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। মূলত জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত অন্য একটি তদন্ত করতে গিয়ে এ তদন্তটি শুরু হয়।

সূত্র বলেছে, সেই পৃথক তদন্তে মূল অভিযুক্ত বারবার হোম্যানের নাম উল্লেখ করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ভবিষ্যতে সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ নিচ্ছেন হোম্যান।

এফবিআই হোম্যানের অভিযোগ তদন্তে গোপনে অভিযান চালিয়েছিল। তাদের ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কাভা রেস্তোরাঁ থেকে হোম্যান ৫০ হাজার ডলারের ঘুষ ভর্তি একটি ব্যাগ সংগ্রহ করছেন।

এরপর এফবিআই হোম্যানের অভিযোগ তদন্তে গোপনে অভিযান চালায়। তাদের ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কাভা রেস্তোরাঁ থেকে হোম্যান ৫০ হাজার ডলারের ঘুষ ভর্তি একটি ব্যাগ সংগ্রহ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী মানুষদের বিতাড়িত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের চালানো অভিযান দেখভাল করেন হোম্যান। হোয়াইট হাউসের দাবি, হোম্যান কাউকে কোনো সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার কাজে জড়িত নন।

হোয়াইট হাউসের উপপ্রেস সেক্রেটারি অ্যাবিগেল জ্যাকসন এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি একজন পেশাদার আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং জীবনভর সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও দেশের জন্য অসাধারণ কাজ করছেন।

আরও পড়ুনবিরোধী টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স ‘বাতিল’ করা উচিত: ট্রাম্প১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সূত্র বলছে, জানুয়ারিতে ট্রাম্প যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তখন টেক্সাসের ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে হোম্যানের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরির তদন্ত তখনো প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল।

একটি সূত্র বলেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে (বর্তমানে ফেডারেল বিচারক) এ মামলার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এটিকে ‘ডিপ স্টেট’ অভিযানের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, অনির্বাচিত কর্মকর্তারা গোপনে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্যাটেল ও ব্লাঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই তদন্ত ‘স্পষ্টত রাজনৈতিক’ ছিল এবং বাইডেন প্রশাসনের বিচার বিভাগ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহযোগীদের নিশানা করতে তাঁদের সক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়াদকালে হোম্যান মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এর কার্যনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

মাঝের যে চার বছর ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন হোম্যান একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তাঁর ওই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোম্পানিকে অভিবাসন-সংক্রান্ত সরকারি চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ত র বল ছ কর ছ ল ন রয়ট র স গতক ল তদন ত করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আফসোস নিয়েও বিশ্বকাপে আরও বেশি ম্যাচ জিততে চান নিগাররা

শ্রীলঙ্কার বিমান ধরতে হবে আগামীকাল। উদ্দেশ্য নারী বিশ্বকাপ। তার আগে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর হওয়া সফর-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে একটা আফসোসই শোনা গেল বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠে। আফসোসটা বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের আগে কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারা।

কোচ সারওয়ার ইমরানের পাশে বসেই সেই আফসোসের কথাটা বললেন নিগার, ‘অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো। আদর্শ প্রস্তুতি হয়তো হয়নি।’

সঙ্গে অবশ্য বলেছেন, অনুশীলন ক্যাম্পের ঘাটতিটা দূর করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা, ‘বাংলাদেশে যত ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সব কটি আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা যতগুলো ক্যাম্প করেছি, সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’

বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে না পারা নিয়ে যদিও–বা আক্ষেপ থেকে যাচ্ছে, তবু বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ জিততে চায় বাংলাদেশ নারী দল।

কোচ সারওয়ার ইমরান তাঁর দলের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়েই বললেন সেটা, ‘আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা ও ভালো খেলা। আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও…। আমরা কাউকে বড় করে দেখছি না। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরও কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে হেরেছে নিগারের দল। নিগার অবশ্য বলেছেন, তাঁরা অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেদের দলের বিপক্ষে পূর্ণশক্তির দল নামাননি। সঙ্গে স্বীকার করেছেন, তাঁরা নিজেরাও পারেননি প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে।

তবে কোচ সারওয়ার বলেন, ‘আমরা কিন্তু ওদের সঙ্গে ৪৯ রানেও অলআউট হয়েছি, বিকেএসপিতে। দিনে দিনে আমাদের উন্নতি হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের যে ফিল্ডিং, সেখানে আমরা ধরা খেয়েছি বলা যায়। ওদের বোলিং, ফিল্ডিং খুব ভালো ছিল।’

খুব বেশি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারার হতাশাটা নিগার বলেছেন অন্য এক প্রসঙ্গেও, ‘আমরা একটি সিরিজ খেলেছি, এরপর তিন-চার মাস আর খেলিনি। একটি ব্যাটিং ইউনিটকে ভালো উইকেটে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে হয়। পাকিস্তানে যখন খেলেছিলাম, এক ম্যাচ বাদে আমরা সব ম্যাচে দুই শর বেশি রান করেছি, যদিও সাধারণত আমাদের গড় ১৮০।’

নিগারের চোখে এর অর্থ—বাংলাদেশের ব্যাটারদের ভালো উইকেটে বড় রান করার সামর্থ্য আছে। সঙ্গে দলের বোলিং আক্রমণের ওপরও ভরসা রাখছেন তিনি। ‘সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো উইকেটে খেলার জন্য এটা দারুণ সুযোগ’, বলেছেন অধিনায়ক।

৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু নারী বিশ্বকাপ এবার হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। ২ অক্টোবর কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা। লিগ পর্বে বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ম্যাচই ভারতে। মূল বিশ্বকাপ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মেয়েরা।

কোচ বলেছেন, ‘সেখানে আমরা দলকে আবার পর্যালোচনা করতে পারব, ভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করতে পারব। আমরা দলের প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা দুর্বলতাগুলো কাটানোর চেষ্টা করছি। অধিকাংশ ট্রেনিং সেশনে ম্যাচ সিনারিও নিয়েও কাজ করেছি।’

বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিসিবির পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে মেয়েদের। নিগার ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন সেটাকে, ‘এত অল্প সময়ে অত বেশি কাজ করা যায় না। তবু বলব যে ভালো অভিজ্ঞতা। উনি পাওয়ার হিটিং শেখাতে চেয়েছেন। তবে এত অল্প সময়ে আসলে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন। আমরা যে ফরম্যাট খেলতে যাচ্ছি, অবশ্যই সেখানেও পাওয়ার হিটিং দরকার আছে। ছোট-ছোট কিছু কাজ, যেগুলো তিনি করে গেছেন, ক্রিকেটাররা সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচে অনেক কাজে লাগবে।’

বিশ্বকাপের দল থেকে অফ স্পিনার সুমনার বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কোচ আজ সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘সুমনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দিন লেগেছে আমাদের। নির্বাচকদের সঙ্গে আমি এবং অধিনায়কও ছিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে যখন আমরা খেলি, তখন ওদের বাঁহাতি ব্যাটার অপরাজিত ছিল। ওই সময় অধিনায়ক যখন সুমনাকে বল করতে বলল, সুমনা বোলিং করেনি। ঢাকাতে হোক বা প্রস্তুতি ম্যাচে হোক, বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ও বোলিং করতে পারে না। আমাদের মূল খেলা হলো পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। আমাদের একজন অফ স্পিনার লাগবে, যে বাঁহাতি ব্যাটারকে বল করতে পারে।’

এ ব্যাপারে নিগারের কথা, ‘আমরা সুমনা আর নিশিতাকে অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে পর্যবেক্ষণ করেছি। নিশিতাকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, কারণ, সে আমাদের কাছে ভালো মনে হয়েছে। সে খুব নির্ভুল অফস্পিনার। দলের যা চাহিদা, তা দিতে পারে। এটা নয় যে সুমনা ভালো খেলোয়াড় নয়, তার সামনে আরও অনেক সুযোগ আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ