চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবন একসময় শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল কেবল ‘ভাতের হোটেল’। দুপুরে ৩০ টাকার মোরগ পোলাও, ৫ টাকার চা, ৫ টাকার শিঙারা খেতে শিক্ষার্থীদের ভিড় জমত প্রতিদিন। সেই ভবনেই এখন অন্য দৃশ্য—৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচনের হইচই।

ক্যাম্পাসের জারুলতলার পাশে তিনতলা চাকসু ভবন এখন ব্যস্ততম জায়গা। নিচতলায় ক্যানটিন, তার ওপরে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমিশনের সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই, তালিকা প্রস্তুত, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা তৈরি—সবই চলছে ‘মহাসমারোহে’। প্রার্থীদের আনাগোনায় ভবনের সিঁড়ি এখন যেন এক ছোট্ট রাজনৈতিক মঞ্চ।

গতকাল সোমবার গিয়ে দেখা গেল, নতুন করে সাজানো হচ্ছে চাকসু ভবন। দেয়ালে রঙের প্রলেপ, মেরামত করা হচ্ছে ভাঙা দরজা-জানালা। ক্যানটিনের টেবিলে বসে এবার শুধু খাবার নয়, চলছে প্রার্থী আর ভোটারদের টান টান আড্ডা।

গতকাল চাকসু ভবনেই পাওয়া গেল যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী দোস্ত মোহাম্মদকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকসু নির্বাচন হবে, এটা কখনো ভাবিনি। অবশেষে হচ্ছে। তবে প্রতিবছর নির্বাচন না হলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ বদলাবে না। এই এক নির্বাচনও কাজে আসবে না।’

ভোটের মঞ্চ

চাকসু ভবন এত দিন ছিল মূলত ক্যানটিন আর কমিউনিটি সেন্টার। কর্মচারীদের সন্তানের বিয়ে থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে এখানে। এ কারণে গত ৩০ জুন শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে নামফলকের ওপর ব্যানার টাঙিয়েছিলেন—‘জোবরা ভাত ঘর ও কমিউনিটি সেন্টার’। যদিও পরে প্রশাসন ব্যানার সরিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের কাছে তাই চাকসু ভবন মানেই ছিল সস্তায় ভাত খাওয়ার জায়গা। এবার সেই ভবন ভোটের মঞ্চে রূপান্তরিত হলো।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘এবারের চাকসু নির্বাচন ভাতের হোটেলের দুর্নাম মুছে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। আমি চাইব, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে এ নির্বাচন স্থায়ীভাবে যুক্ত হোক।’

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর চাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সে নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা আর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় দীর্ঘ বিরতি ছিল।

এবারের চাকসু নির্বাচন ভাতের হোটেলের দুর্নাম মুছে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। আমি চাইব, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে এ নির্বাচন স্থায়ীভাবে যুক্ত হোক।অধ্যাপক মনির উদ্দিন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার

এ শূন্যতা ভরাটের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর আন্দোলন জোরালো হলে প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়। সংশোধন করা হয় চাকসুর গঠনতন্ত্র। একপর্যায়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। আর ভোট হবে আগামী ১২ অক্টোবর।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসফা তানিশা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই এত বড় ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হব, ভাবিনি। পরিচিত অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। তবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব, পড়াশোনা আর যোগাযোগ—সবই দেখব।’

নতুন করে সাজানো হচ্ছে চাকসু ভবন। দেয়ালে রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচন পেছানোর প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ পেছানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ সম্মেলন শেষে রাকসু কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে জোহা চত্বরে মিলিত হন তারা।

আরো পড়ুন:

রাবিতে বহাল থাকছে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন

রাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনে ইবির জিয়া পরিষদের সংহতি

এর আগে রাত ৯টায় রাকসু নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাকসু কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। তারা অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট একটি দলকে সুযোগ দিতেই বারবার রাকসু নির্বাচন পেছাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিক্ষোভ শেষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের এমন একতরফা সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। একটি দলকে সুযোগ দিতেই বারবার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচনের যে তারিখ তারা দিয়েছেন, সেটি যে পরিবর্তন হবে না, তাতেও সন্দেহ আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের এমন একচেটিয়া সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এর আগেও দফায় দফায় রাকসু নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করেছেন তারা। ছাত্রদলকে সুবিধা দিতে এর আগেও মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল। আজকেও ছাত্রদলের অবস্থান দেখে তারা রাকসু নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করেছেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেছেন, “সবদিক চিন্তা করেই আমাদের তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে। রাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী। পোষ্য কোটা ইস্যুতে শাটডাউন থাকায় আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। আমরা আশা করছি, ১৬ অক্টোবর উৎসবমুখর পরিবেশে রাকসু নির্বাচন হবে।”

বিক্ষোভ মিছিলে রাবি শাখা ছাত্রশিবির ও বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতাকর্মী মিলে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।

ঢাকা/ফাহিম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ