বাসমতী ছাড়া অন্য চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত আরোপ করেছে ভারত। শর্ত হলো-এখন থেকে বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি করতে হলে অবশ্যই কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এপিইডিএ) নিবন্ধন নিতে হবে।

গতকাল ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর (ডিজিএফটি) এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। নতুন শর্ত অনুযায়ী, এ ধরনের চাল (নন বাসমতী) কেবল এপিডিএর সঙ্গে চুক্তি নিবন্ধনের পরই রপ্তানি করা যাবে।

বাংলাদেশ হলো ভারত থেকে নন বাসমতী বা সাধারণ চালের অন্যতম বড় আমদানিকারক দেশ। গত অর্থবছরে ৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন বাংলাদেশ সরকার। আমদানি করা চালের সিংহভাগই এসেছে ভারত থেকে।

ভারতের নতুন শর্তের কারণে চাল আমদানিতে নতুন করে অশুল্ক বাধা সৃষ্টি হতে পারে। যা চাল আমদানিতে প্রভাব পড়তে পারে। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকেও চাল আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ।

এমন একসময় ভারত চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত দিল, যখন দেশটির চালের মজুত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সম্প্রতি রয়টার্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর হিসাব অনুযায়ী, ভারতের সরকারি গুদামে চালের মজুত গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সময়ে গমের মজুতও গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে।

ভারত গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেমন-বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিকসহ বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবন্দরগুলো দিয়ে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে স্থলপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এসব পণ্য রপ্তানি করা যাবে না।

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে নতুন করে ৯ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। পণ্যগুলো হলো ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য, কাঁচা পাট, পাটের রোল, ফ্ল্যাক্স সুতা, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতা, লিনেন কাপড়, লিনেন ও তুলার সুতা মিশ্রিত কাপড় এবং কম প্রক্রিয়াজাত বোনা কাপড়। সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব বাংলাদেশি পণ্য ভারতে যেতে হবে।

ভারত কত চাল রপ্তানি করে

ইকোনমিক টাইমসের তথ্যানুসারে, বিশ্বে চালের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ ভারত চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে ৪৭০ কোটি ডলারের চাল রপ্তানি করেছে। এ সময় দেশটির চাল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমন থাকবে, তা অনেকটা নির্ভর করে ভারতের ওপর। বিশ্ববাজারের ৪০ শতাংশ চাল রপ্তানি করে ভারত।

এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ নিশ্চিত ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ১৪ মাস পর তারা সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

সরকারের ওই সিদ্ধান্তে ভারতের চাল রপ্তানিকারকেরা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এটিকে তাঁরা চালের বাজারের জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ বা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেন।

মূলত ভারতে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে গত বছর রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। এরপর থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমতে শুরু করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। ফলে কিছুদিন আগে চালের দাম আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এখন আবার ভারতের এই সিদ্ধান্তে চালের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ল আমদ ন ব সমত বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি

চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।

এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।

আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%
  • কংগ্রেসে অর্থ বিল নাকচ, সংকটে ট্রাম্প প্রশাসন
  • দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ
  • বাজারে এখনো কদর ইনস্ট্যান্ট কফির
  • শুল্কছাড়েও দেশি বিনিয়োগ নেই কনটেইনার পরিবহন খাতে
  • বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বাড়ছে
  • চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি