ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা আরোপ করল স্লোভেনিয়া
Published: 25th, September 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়া। আজ বৃহস্পতিবার সরকারি এক বিবৃতিতে এ খবর জানানো হয়। এর আগে গত জুলাইয়ে দেশটির দুই কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
স্লোভেনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাষ্ট্র। দেশটি গত বছর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে দেশটি ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। একই সঙ্গে ইসরায়েল-অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উৎপাদিত পণ্য আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০২৪ সালের নভেম্বরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এর আগে গত আগস্টে স্লোভেনিয়া প্রথম ইইউ দেশ হিসেবে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারও আগে দেশটির দুই মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচকে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছিল দেশটি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধনমূলক’ মন্তব্য করায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
২০২৪ সালের জুনে নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ডের পথ অনুসরণ করে স্লোভেনিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সবচেয়ে সোচ্চার ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে স্লোভেনিয়া অন্যতম।
দেশটির প্রেসিডেন্ট নাতাশা পির্ক মুসার গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট মুসার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি গাজায় জাতিগত নিধন বন্ধ করতে সব দেশকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সঠিক কাজটি করা উচিত। আমরা হলোকাস্ট থামাতে পারিনি, রুয়ান্ডার গণহত্যা থামাতে পারিনি, স্রেব্রেনিৎসার জাতিগত নিধনও থামাতে পারিনি। আমাদের অবশ্যই গাজায় জাতিগত নিধন বন্ধ করতে হবে। এখন আর কোনো অজুহাত নেই। কোনো অজুহাতই চলবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত গত ন গত ন ধ র ওপর ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।