তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় নিজের সমাবেশে পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন  তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) দলের প্রধান থালাপতি বিজয়।

অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া বিজয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে; আমি অসহনীয়, ভাষায় বর্ণনা করা যায় না এমন যন্ত্রণা ও শোকে কাতর। কারুরে প্রাণ হারানো আমার প্রিয় ভাই-বোনদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কারুর-ইরোড মহাসড়কের ভেলুসামাইপুরামে থালাপতি বিজয়ের ‘ভেলিচাম ভেলিয়েরু’ নামের এক জনসভায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে তিনি বক্তৃতা বন্ধ করতে বাধ্য হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত পৌনে আটটার দিকে বিপুলসংখ্যক লোক থালাপতি বিজয়কে একনজর দেখার জন্য মঞ্চের ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যান। ওই সময় ঘটনার সূত্রপাত হয়। লোকজন হুড়োহুড়ি করে সামনে যাওয়ার সময় অনেকেই অচেতন হয়ে পড়েন।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি লোক সমাগম হয়। এতে ৩০ হাজারের মতো মানুষকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০ হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।

তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম.

কে. স্টালিন শনিবার রাতে কারুরে পৌঁছে পদদলিত হয়ে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের প্রত্যেককে ১ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, পদদলনের ঘটনায় কীভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো তা তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদেশনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছে তামিলনাডু সরকার।  তিরুচিরাপল্লি ও সেলেম জেলা থেকে অন্তত ৪৪ জন চিকিৎসককে কারুরে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যম জানিয়েছে।

এম.কে. স্টালিন বলেন, বিজয়ের নির্বাচনী প্রচারণার সমাবেশে পদদলিত হয়ে অন্তত ৩৬ জন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৮ শিশু ও ১৬ নারী রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাডুর কারুর জেলায়, যেখানে বিজয়ের রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্রি কাজহাগাম (টিভিকে)-এর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।
রাজ্যের এক আইনপ্রণেতা সেন্টিল বালাজি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় ৫৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজয়কে দেখতে অনেক জড়ো হয়

গত তিন দশকে তামিল সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা বিজয় ২০২৪ সালে দল গঠনের পর থেকে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে আসছেন। তাঁর দল টিভিকে রাজ্যের ক্ষমতাসীন ডিএমকে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টিকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি ২০২৬ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় রাজ্য নির্বাচনের আগে প্রচারে নেমেছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ একটি বড় গাড়ির চারপাশে জড়ো হয়েছেন। সেই গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন বিজয়। ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাঁকে পুলিশের সহায়তা চাইতে দেখা যায়।

এটি প্রথমবার নয় যে বিজয়ের সমাবেশে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত বছর অক্টোবর মাসে দলের প্রথম সমাবেশে অন্তত ৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

পুলিশের আরোপিত বিধিনিষেধ—যেমন মিছিলের আকার সীমিত রাখা ও ভেন্যু পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ—সত্ত্বেও বিপুল জনসমাগম স্থানীয় অবকাঠামোকে বারবার বিপর্যস্ত করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে লিখেছেন, কারুরে রাজনৈতিক সমাবেশে ঘটে যাওয়া এই দুঃখজনক ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

আরও পড়ুনভারতে থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে ৩৬২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারতে থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে অন্তত ৩১ জন নিহত৪ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব জয় র

এছাড়াও পড়ুন:

জনসভায় প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় কী বললেন থালাপতি বিজয়

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে জনসভায় পদদলিত হয়ে ৪১ জন নিহত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া থালাপতি বিজয়। আজ মঙ্গলবার এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে চলচ্চিত্রের ভঙ্গিমায় দীর্ঘ বিরতি দিয়ে দিয়ে বক্তব্যে থালাপতি বিজয় বলেন, ‘আমার জীবনে আগে কখনো এমন বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।’ তিনি সমর্থকদের তাঁদের ‘অপরিসীম ভালোবাসা ও প্রত্যাশার’ জন্য ধন্যবাদ জানান। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান।

বিজয় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়, আপনি যদি আমাদের দোষ খুঁজে বের করতে মরিয়া হন, সেটা আমার সঙ্গে করুন। তাঁদের (আমার সমর্থকদের) এতে জড়াবেন না। আমি বাড়িতে বা অফিসে থাকব। আমার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিতে চান, তা-ই করুন।’

দক্ষিণের চলচ্চিত্রের এই শক্তিমান অভিনেতা বলেন, ‘আমার জীবনে আগে কখনো এতটা বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। এটি সত্যিই বেদনাদায়ক। লোকজন আমার প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসার কারণে সেখানে ভিড় করেছিলেন। আমি পুলিশ বিভাগকে নিরাপত্তার ব্যর্থতা নিয়ে তদন্তের জন্য অনুরোধ করব। এমন একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় প্রাণহানির কারণে আমি গভীর শোকে আচ্ছন্ন।’

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মর্মান্তিক এ ঘটনায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন থালাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত পাঁচটি জেলায় প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু প্রাণহানির ঘটনা শুধু করুরেই ঘটল কেন? মানুষ সত্য ঘটনা জানে। মানুষ সব কিছু দেখছে। যখন করুরের মানুষ নিজেরাই সত্য উন্মোচন করা শুরু করল, তখন আমি অনুভব করলাম, যেন ঈশ্বর নিজেই সত্য বলছেন।’

থালাপতির বক্তব্যে কিছুটা শোক, অভিযোগ ও চ্যালেঞ্জের মিশ্রণ ছিল। তিনি বলেন, সমাবেশটি সরকার নির্ধারিত স্থানেই হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কিছুই ভুল করিনি।’

অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া থালাপতি পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর দলকে অন্যায়ভাবে নিশানা করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা বন্ধুদেরও নামেও মামলা করা হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনসভায় প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় কী বললেন থালাপতি বিজয়