‘প্রিলিমিনারি পাস করায় আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত। প্রথম ধাপ পার করেছি, কনফিডেন্স বেড়েছে। আশা করি, সামনেও ভালো কিছু হবে।’ এ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শুভ সরকার। তিনি ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

গত রোববার রাতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার ৯ দিনের মাথায় প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৪৪ জন। পিএসসির ওয়েবসাইটে ফল দেখা যাচ্ছে। ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯ সেপ্টেম্বর একযোগে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ চাকরিপ্রার্থী।

দ্রুত সময়ে ফল প্রকাশিত হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা উচ্ছ্বসিত। এটি আগের যেকোনো বিসিএসের তুলনায় সবচেয়ে কম সময়ের রেকর্ড। এর আগে ৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল ১৩ দিনের মধ্যে। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশ শুধু উত্তেজনা কমায়নি, লিখিত পরীক্ষার জন্য পরিকল্পিত প্রস্তুতির সুযোগও তৈরি করেছে। প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ফলাফল দ্রুত প্রকাশ মানে, লিখিত পরীক্ষার জন্য আরও সময় হাতে এসেছে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো.

শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬–১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বকুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফল দ্রুত হওয়ায় আমরা উচ্ছ্বসিত। প্রিলিমিনারি পাস করেছি, এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এসেছে। এটি আরও কঠিন পরীক্ষা, তবে দ্রুত ফল মানে, প্রস্তুতি শুরু করতে বেশি সময় আছে। প্রতিদিনের ছোট ছোট অধ্যয়ন ও মক টেস্ট আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক হবে বলে মনে করি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রিলির ফলাফল দ্রুত প্রকাশ হলে অন্যান্য প্রক্রিয়াও দ্রুত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পিএসসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করবে। এটি করতে পারলে খুবই ভালো হবে।’

আরও পড়ুনমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, সরাসরি সাক্ষাৎকারে চাকরি২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সরকারি চাকরিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দ্রুত নিয়োগের দাবি এখন তরুণদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে লাখো শিক্ষার্থী সরকারি কর্ম কমিশনে মুখাপেক্ষী থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে ছয়টি বিসিএসের কার্যক্রম চলছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করেছি। ৪৫তম সাধারণ বিসিএস ও ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো। এ ছাড়া ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের কাজও চলছে। পিএসসি আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা পেলে এক বছরে একটি বিসিএস সম্পন্ন করা সম্ভব।’

অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম আরও জানান, দ্রুত ফল প্রকাশ প্রার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, সরাসরি সাক্ষাৎকারে চাকরি২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫লিখিত পরীক্ষার দিকে দৃষ্টি

প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এবার লিখিত পরীক্ষায় মনোযোগ দিচ্ছেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কম সময়ে ফল প্রকাশ হওয়ায় তাঁরা সীমিত সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রার্থীরা সিলেবাসের রূপরেখা তৈরি করছেন, আগের বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করছেন ও অনুশীলন শুরু করছেন। এ ছাড়া প্রার্থীরা মানসিক প্রস্তুতি, সময় ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাতে পরীক্ষার দিনে আত্মবিশ্বাস ও স্থির মনোভাব বজায় থাকে।

পিএসসি ও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এই দ্রুত ফল প্রকাশ নতুন উদ্দীপনা ও আশা সৃষ্টি করেছে। প্রিলিমিনারি পাসের আনন্দের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা এখন লিখিত পরীক্ষার দিকে দৃষ্টি রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আরও পড়ুনআটটির মধ্যে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ এত কম কেন২২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ র চ কর প র র থ স প ট ম বর দ র ত ফল প রস ত ত ব স এস র র জন য করছ ন প রথম প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

৪৭তম বিসিএসে প্রিলিমিনারির পর লিখিত: সফল হবেন কীভাবে

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষার নাম বিসিএস। লাখো পরীক্ষার্থীর ভিড়ে প্রিলিমিনারি পর্যায় অতিক্রম করাই এক বড় সাফল্য। তবে প্রিলিমিনারির পরেই অপেক্ষা করে আসল চ্যালেঞ্জ—লিখিত পরীক্ষা। সময় থাকে খুব কম—মাত্র এক থেকে দেড় মাস। এই অল্প সময়ে কীভাবে পরিকল্পনা করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে, সেটিই আজকের আলোচনা।

প্রিলিমিনারি পেরোনো মানেই অর্ধেক যুদ্ধ জয়?

৪৫তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি দিয়েছিলেন ২ লাখ ৬৮ হাজার প্রার্থী, উত্তীর্ণ হয়েছিলেন মাত্র ১২ হাজার ৭৮৯ জন। ৪৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণের সংখ্যা আরও কম—১০ হাজার ৬৪৪। এই সংখ্যাগুলোই বলে দিচ্ছে, প্রিলিমিনারি অতিক্রম করা সহজ নয়। তবে এখানেই থেমে গেলে হবে না। লিখিত পরীক্ষায় অনেকেই টিকতে পারেন না। কারণ, এই পর্যায়ের জন্য আলাদা প্রস্তুতি দরকার।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কী বলে

যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল অফিসার নিয়োগে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর প্রার্থীরা লিখিত মূল্যায়নে অংশ নেন। সেখানে শুধু তথ্য জানা নয়, বিশ্লেষণী দক্ষতা ও লিখনক্ষমতার ওপর জোর দেওয়া হয়। ইউরোপে, বিশেষ করে ইইউ নিয়োগ পরীক্ষায়। প্রিলিমিনারি পেরোনো প্রার্থীরা অল্প সময়ের মধ্যে নিবিড় প্রস্তুতি শুরু করুন—মক টেস্ট, সময় ব্যবস্থাপনা ও লিখনচর্চাকে গুরুত্ব দিয়ে।

এই অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, প্রিলিমিনারির পরের সময়টুকু কীভাবে কাজে লাগাবেন, তার ওপরই নির্ভর করছে লিখিত পরীক্ষার সাফল্য।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো. শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সময়কে ভাগ করে নিন

প্রিলির ফল প্রকাশের পরই সময়কে ভাগ করে নিতে হবে।

প্রথম সপ্তাহ: সিলেবাসের রূপরেখা তৈরি করুন। আগের বছরের প্রশ্নপত্রগুলো বিশ্লেষণ করুন।

পরের তিন সপ্তাহ: প্রতিদিন নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর পড়াশোনা করুন। উত্তর লেখার অনুশীলন শুরু করুন।

শেষ দুই সপ্তাহ: পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট দিন। সময় বেঁধে উত্তর লিখুন, পরে খুঁটিয়ে মূল্যায়ন করুন।

প্রিলির ফল প্রকাশের পরই লিখিত পরীক্ষার জন্য সময়কে ভাগ করে নিতে হবে প্রার্থীদের

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৭তম বিসিএসে প্রিলিমিনারির পর লিখিত: সফল হবেন কীভাবে