পাঁচ দফা দাবি‌তে ১ অক্টোবর থে‌কে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে ১১ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা ক‌রে‌ছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জামায়া‌তে ইসলামীসহ অন‌্যদলগু‌লোর স‌ঙ্গে মি‌লি‌য়ে যুগপৎ কর্মসূ‌চি দেয় দল‌টি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দ‌লের এক যৌথ বিবৃতিতে দল‌টির আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এ কর্মসূ‌চি ঘোষণা ক‌রেন।

কর্মসূচি হলো, ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ, ১০ অক্টোরব ঢাকায় ও বিভাগীয় শহরে গণমিছিল, ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান। দেশের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা উৎসবের কারণে প্রথম দিকে রাজপথে কোন কর্মসূচি রাখা হয় নাই।

বিবৃ‌তি‌তে তারা ব‌লেন,  “দেশ আজ ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। জনগণের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে পুরনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করায় জাতি আজ রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের গভীর খাদে পতিত হচ্ছে। ইসলামী শক্তিকে দমিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশি প্রভুদের খুশি করার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছি—জনগণের ঈমানি চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের গণআকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করার যেকোনো ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে।”

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ‌নেতারা বলেন, “জনগণের দাবিকে অবজ্ঞা করবেন না। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে নতজানু হয়ে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার গভীরে ঠেলে দেবেন না। জনগণের ধৈর্যের সীমা শেষ হয়ে গেছে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি—আর কোনো ছলচাতুরি বা কালক্ষেপণের সুযোগ নেই।”

দ‌লের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে উক্ত কর্মসূচি সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তারা।

পাঁচ দফা দা‌বি:
১) জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
২) নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪) গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।
৫)বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনগণ র

এছাড়াও পড়ুন:

নেতারা বলবেন, জনতা শুনবে—এই সংস্কৃতি বদলাতে চায় মানুষ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশের মানুষ এখন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়। আগে নেতারা বলতেন আর জনতা শুনত। কিন্তু এখন জনগণ সেই পরিস্থিতির বদল চায়। তারা চায়, জনপ্রতিনিধিরা শুধু বলবেন না, জনগণের কথাও শুনবেন।’

আজ শনিবার রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়াতে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত প্রাক্‌-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথাগুলো বলেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও দাবিগুলো তুলে ধরতে এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে বার্তাটি পরিষ্কারভাবে উঠে আসছে তা হলো, জনগণ এমন একটি নির্বাচন দেখতে চায়, যেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। মানুষ এখন নির্বাচনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ এবং দলগুলোকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের ওপর জোর দিচ্ছে। জনগণ মনে করে, নির্বাচনের ব্যয় যদি কমানো না যায়, তাহলে দুর্নীতি কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির ওপর গুরুত্বারোপ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মানুষ চায়, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি তাঁর কাজের বার্ষিক হিসাব দেবেন। এই জবাবদিহির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’ রাজশাহীর স্থানীয় সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের জন্য চারটি প্রধান বিষয় উঠে এসেছে। এগুলো হলো—রাজশাহীর মরুকরণ ও তিস্তাসহ পানির সংকট, জ্বালানি সংকট, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের অভাব।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো—নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি খুব জোরালোভাবে এসেছে। এই নিরাপত্তা কেবল অর্থনৈতিক নয়; এর সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও জড়িত। সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনের দক্ষতার সঙ্গে এই নিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাও কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। ‘আগামী নির্বাচনে কী প্রত্যাশায় ভোট দেবেন?’, ‘নবনির্বাচিত সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা?’ এই শিরোনামে মুক্ত আলোচনা হয়। এতে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, কৃষকসহ নানা শ্রেণির মানুষ অংশ নেন। তবে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।

সভায় আগামী নির্বাচন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, সুশাসন এবং স্থানীয় নানা সংকট নিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁদের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা তুলে ধরেন। তাঁরা আগামী সরকারের কাছে নানা বিষয়ের বাস্তবায়ন চান।

সংলাপে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ভূমি হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেন এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাঁদের আশ্রয়ণ প্রকল্প দখল ও কর্মসংস্থানে বাধার অভিযোগ তোলেন। একজন রাজনৈতিক কর্মী প্রশাসনের দলীয়করণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারাও রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আচরণ করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলম মাসুদ বলেন, ‘আমরা এমন প্রতিশ্রুতি চাই না, যা বাস্তবায়ন হয় না। আমরা এমন ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে চাই, যাঁরা একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন।’

জবাবদিহির অভাবকে দুর্নীতির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান। তিনি বলেন, একজন প্রার্থী নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন, যা তার পাঁচ বছরের বেতনের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এই টাকা তুলে আনার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নেন। তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও প্রার্থীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে এই দুর্নীতি কমানো সম্ভব।

সভা শেষে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সংগঠক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলন আমাদের বলে দেয়, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থাকলে আমরা পরিবর্তন করতে পারি। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই আলোচনা থেকে উঠে আসা বিষয়গুলো নিয়ে একটি “নাগরিক ইশতেহার” তৈরি করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করে একটি চাপ সৃষ্টি করা হবে। কারণ, তাদের ছাড়া এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
  • ইকুয়েডরে গণভোটে ‘না’ এগিয়ে, বিদেশি সামরিক ঘাঁটিতে সায় নেই মানুষের
  • ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করলে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
  • ‘বিহারে ভোট কিনতে ব্যবহার হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ১৪ হাজার কোটি রুপি’
  • নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে: খন্দকার মোশাররফ
  • গণভোট ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করবে: রিজভী
  • ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত জেনে একটি দল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে: দুলু
  • নেতারা বলবেন, জনতা শুনবে—এই সংস্কৃতি বদলাতে চায় মানুষ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদ প্রত্যাবর্তনের ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিতে হবে
  • আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের