হিন্দুদের ওপর সহিংসতা বাড়েনি, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 1st, October 2025 GMT
মেহদি হাসান: বাংলাদেশের বাইরে থেকে মানুষ কিছু বিষয়ে সমালোচনা করছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই। এর জবাব দেওয়ার একটি সুযোগ আমি আপনাকে দিতে চাই। গত নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ হাজার হিন্দু আপনার সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জন্য সমবেত হয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেছিলেন, তাঁদের সম্প্রদায়ের ওপর হাজার হাজার হামলা হয়েছে। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও সে সময় বাংলাদেশে সহিংসতাকে ‘বর্বর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। আমার মনে হয়, এই শব্দই তিনি ব্যবহার করেছিলেন। এ ধরনের সহিংসতা—তা ছোট বা বড় যা–ই হোক না কেন, নিয়ন্ত্রণে আনতে কী প্রয়োজন? নাকি আপনার মতে এটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে?
অধ্যাপক ইউনূস: প্রথমত, এগুলো সব ভুয়া খবর। আপনি সেসব ভুয়া খবরের ওপর ভিত্তি করে চলতে পারেন না।
আরও পড়ুনআওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে যা বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস৩ ঘণ্টা আগেমেহদি হাসান: আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা উদ্ধৃত করলাম। তারপর আপনি বললেন ভুয়া খবর?
অধ্যাপক ইউনূস: হ্যাঁ। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আদৌ এমন কিছু বলেছিলেন? বাংলাদেশে কী ঘটছে, সে বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা ছিল কি না.
মেহদি হাসান: আপনি বলছেন, এটা শুধু অতিরঞ্জিত নয়...। আপনি বলছেন, সেখানে হিন্দুদের ওপর কোনো সহিংসতা হচ্ছে না? এমনকি নিউইয়র্ক টাইমসও সম্প্রতি ভাঙচুর, মব ভায়োলেন্স (বিশৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং গত নভেম্বরে কেবল বাংলাদেশি পতাকার ওপর হিন্দু পতাকা উত্তোলনের জন্য একজন হিন্দু পুরোহিতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এগুলো তো ঘটছে, ঠিক না? আপনি এটা অস্বীকার করতে পারেন না।
অধ্যাপক ইউনূস: এখন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর। বন্যার মতো ভুয়া খবর।
মেহদি হাসান: না, না, আমি সেটি বুঝি। ওটা অতিরঞ্জিত করা। তবে আমি বলছি যে আপনি বলছেন, হিন্দুবিরোধী কোনো সহিংসতা হচ্ছে না।
অধ্যাপক ইউনূস: এটি সত্য নয়। একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক চলমান রয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু সংঘাত হয়, নারীদের বিষয়ে কিছু সমস্যা হয়, জমিসংক্রান্ত সমস্যা এবং আরও কিছু বিষয় আছে। আপনি আমার প্রতিবেশী হতে পারেন। আপনি একজন হিন্দু প্রতিবেশী। আমি একজন মুসলিম প্রতিবেশী। আমাদের জমির সীমানা নিয়ে সমস্যা আছে। এটা শুধুই দুজন প্রতিবেশীর মধ্যকার সমস্যা। আপনি একে হিন্দু-মুসলিম সমস্যা বললে এটা তা নয়।
মেহদি হাসান: কিন্তু আপনার অবস্থান হলো বিপ্লবের পর থেকে এটা বাড়েনি। যদিও টাইমস ও অন্যান্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বলছে, বেড়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস: না, এটি বাড়েনি। আমি বলব, সরকার এ বিষয়ে খুব সতর্ক। কারণ, এটি একটি বিষয়, যেটি নিয়ে ভারত সব সময় বলতে থাকে যে আমরা...চাপ তৈরি করে।
মেহদি হাসান: বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালনকারী নেতা বা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা—যেভাবেই আপনি বলতে চান না কেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা, যাঁরা হুমকির মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের প্রতি আপনার বার্তাটা কী? তাঁদের আপনি কী বলবেন?
অধ্যাপক ইউনূস: আমি আসার আগে মাত্রই তাঁদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। সামনে বড় দুর্গাপূজা আসছে, তাই আমি তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। যখন একটি সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের নেতাদের দল হিসেবে তাঁদের সঙ্গে আমি দেখা করি, সব সময় আমার বার্তা এটাই থাকে—ফিরে গিয়ে বলবেন না যে আমি হিন্দু, তাই আমাকে সুরক্ষা দিন। সব সময় বলবেন, আমি এই দেশের একজন নাগরিক। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একজন নাগরিককে যেসব সুরক্ষা দেওয়ার কথা, সেগুলো পাওয়ার অধিকার আমার আছে। তখন আপনি আরও বড় পরিসরে সুযোগ–সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত সব মানুষ আপনার সঙ্গে থাকবে। নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলবেন না। আমরা একই সম্প্রদায়ের, একই দেশের মানুষ। তাই রাষ্ট্রের কাছে আপনার ন্যায্য অধিকার দাবি করুন যে আপনাকে নিরাপদ রাখতে হবে।
মেহদি হাসান: বৃহত্তর বাংলাদেশি সম্প্রদায়, শুধু হিন্দু বা মুসলিম নয়, সার্বিকভাবে বাংলাদেশিরা সহিংসতা, অপরাধ নিয়ে অনিরাপদ বোধ করছেন। হাসিনার বিদায়ের সময় কয়েক ডজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট লোকজনের ওপর প্রতিশোধমূলক বেশ কিছু হামলা হয়েছে। আমি মনে করি, অপহরণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ছয় বছরের মধ্যে ডাকাতির ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিপ্লবের পর বিশৃঙ্খলা হয়। আপনি তত্ত্বাবধায়ক (অন্তর্বর্তী) সরকারের প্রধান হয়ে এলেন। আপনি কি মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আপনার সরকার ভালো কাজ করেছে?
অধ্যাপক ইউনূস: যে কেউ তার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বলবে, আপনি আরও ভালো করতে পারতেন। এটা সব সময়ই হয়। সেই স্পিরিটে আপনি বলবেন আরও ভালো করুন। কল্পনা করুন, একটা অভ্যুত্থান হলো, সব কিছু ভেঙে পড়ল। সরকার চলে গেছে। যেসব লোক গতকাল আপনার দিকে গুলি করেছে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে আপনি জানেন না ওই ব্যক্তি কোন পক্ষের। সুতরাং আপনি এমন একটি সময়ের মধ্যে থাকবেন, যখন আপনি পুরোপুরি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বেন। তাই ওই সময় একটি পরিবর্তনের সময়। যখন এটা ঠিক হয়ে গেছে...।
মেহদি হাসান: এটা ঠিক হয়েছে?
অধ্যাপক ইউনূস: অবশ্যই, এটা হয়েছে।
মেহদি হাসান: বাংলাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে?
অধ্যাপক ইউনূস: অবশ্যই, নিশ্চিতভাবেই।
নিউইয়র্কে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম জিটিও’র মেহদি হাসানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর বলব ন সরক র সমস য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে