বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠলেও কূটনৈতিকভাবে তার নিশ্চিত পথ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। আবেদন করলেও স্বচ্ছ তথ্যের ভিত্তিতে করতে হবে। কিন্তু উত্তরণের তিনটি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ওপরে।

এই পরিস্থিতিতে আবেদন করা হলে অন্য দেশগুলো বিরোধিতা করবে। তাতে বাংলাদেশের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান। তারপরও ব্যবসায়ীসহ কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়া দরকার।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া চেম্বারের আয়োজনে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। সংগঠনটির সভাপতি সাব্বির এ খানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পরেও আমরা তিন বছর সময় পাব। তারপরও আমাদের অবস্থা পর্যালোচনা করার অনুরোধ করেছি। পর্যালোচনার জন্য তিনজনের একটি দল এসেছে। সব ব্যবসায়ী ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা অনুরোধ করেছি।’

বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি কমেছে বৈশ্বিক কারণে; নয়তো এখন তা কমার কথা নয়। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রধান বাজারের সঙ্গে আমরা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা করছি। উত্তরণ আমাদের বাস্তবতা—এটা করতেই হবে। তিন থেকে পাঁচ বছরের সুবিধা দেওয়ার কথা বলছি আমরা। মানে ২০৩১ সালে হলেও উত্তরণ করতে হবে।’

মূল প্রবন্ধে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকটপূর্ণ সময় পার করছি আমরা। রাজনৈতিক রূপান্তর আমাদের চ্যালেঞ্জ কিছুটা কমাতে সহায়তা করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণ উদ্‌যাপন থেকে উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। এখন “ন্যারেটিভ” পরিবর্তন হয়েছে। তবে এটা পিছিয়ে দেওয়া কূটনৈতিকভাবে নিশ্চিত নয়। কেননা স্বচ্ছ তথ্যের ভিত্তিতে এর আবেদন করতে হবে। কিন্তু তিনটি সূচকেই আমরা অনেক ওপরে। আবেদন করলে অন্যরা বিরোধিতা করবে। তাও আবেদন করা হলে অন্যরা মনে করবে, বাংলাদেশ দুর্বল।’

আলোচনায় অংশ নেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তরণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এটা কাঠামোগত পরিবর্তন, আবেগপূর্ণ কিছু নয়। অজুহাত দেখানোর কিছু নেই। এখন প্রস্তুত না হলে কখনোই হবো না। কিছু ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটেছে। তাই এটাকে ভবিষ্যতের বাধা মনে না করে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন।’

সময় পেলে প্রস্তুতি ভালো হবে

এলডিসি উত্তরণের জন্য অতিরিক্ত সময় পেলে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে অনেক অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের তিন বছর সময় দরকার। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নিজেই কোমায় আছে। নিয়মমতো তারা চলতে পারছে না।’

এলডিসি উত্তরণ অবশ্যই পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে বলছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু বেসরকারি খাতকে প্রস্তুতি নিলে হবে না, সরকারেরও অনেক প্রস্তুতির বিষয় আছে। ব্যবসার ব্যয় কমাতে হবে। আমাদের লজিস্টিক খরচ যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি। জ্বালানি সমস্যা, সুদের হার বেশি। সবকিছুতেই মাথাব্যথার কারণ আছে, সে জন্য সময় দরকার।’

এদিকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তরণের বিপক্ষে নই। প্রস্তুতির জন্য উত্তরণের সময় কিছুটা বাড়ানোর জন্যে বলছি। সময় পেলে আমাদের প্রস্তুতি ভালো হবে। গত তিন মাসে রপ্তানি কমেছে। আগামী তিন মাসও কমতে পারে। কেননা বৈশ্বিক চাহিদা কমছে। আমরা কঠিন সময়ে আছি।’

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার। তাই এখন উত্তরণের অবস্থায় নেই আমরা। নিশ্চয়তা না থাকলেও আমরা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।

সভায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত আম দ র র জন য ব যবস সরক র এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

বিবিসির দুই কর্মকর্তার পদত্যাগকে স্বাগত জানালেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবিসির ‘খুব অসৎ’ কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভির পদত্যাগকে স্বাগত জানান। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর গতকাল রোববার রাতে টিম ডেভি পদত্যাগ করেন।

টিম ডেভির পদত্যাগের কারণ হচ্ছে বিবিসির প্যানোরামা তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের বক্তৃতার একটি অংশ সম্পাদনা করা। এটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যাতে দর্শক বিভ্রান্ত হতে পারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্যচিত্র দেখে মনে হয়েছিল, ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি বক্তৃতায় তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে ‘তুমুল লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্প্রচারমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিতর্ক ও তাদের কেলেঙ্কারির সর্বশেষ ঘটনা ছিল। এই একই কারণে টিম ডেভির পাশাপাশি নিউজ বিভাগের সিইও ডেবোরা টারনেসও পদত্যাগ করেছেন।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘বিবিসির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা, বস টিম ডেভিসহ সবাই পদত্যাগ করছেন বা বরখাস্ত হচ্ছেন। কারণ, তাঁরা ৬ জানুয়ারির আমার খুব ভালো বক্তৃতাটিকে “বিকৃত” করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন।’

ট্রাম্প আরও যোগ করেন, এই দুর্নীতিগ্রস্ত ‘সাংবাদিকদের’ মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য দ্য টেলিগ্রাফ সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ। এরা খুব অসৎ লোক, যাঁরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

পদত্যাগের পরে এক বিবৃতিতে টিম ডেভি বলেন, ‘কিছু ভুল হয়েছে এবং মহাপরিচালক হিসেবে আমাকেই চূড়ান্ত দায়িত্ব নিতে হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই পদত্যাগ সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ