চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চারটি বিদেশি পিস্তল ও একটি রিভলবারসহ বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশের একটি দল। আজ সোমবার ভোরে এসব অস্ত্র-গুলি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন রাউজানের নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির মুহাম্মদ শওকতের ছেলে মো.

সাকিব (২০) ও মুহাম্মদ সোবহানের ছেলে মো. শাহেদ (২৫)। সম্প্রতি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিমকে হত্যার মামলায় দুজনকে ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের তথ্যে এসব অস্ত্র-গুলি উদ্ধার হয়েছে।

পুলিশ জানায়, অভিযানে পিস্তল-রিভলবার ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে ৪২ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, শটগানের ১৬ রাউন্ড কার্তুজ, সাতটি খালি ম্যাগাজিন, একটি রকেট ফ্লেয়ার, দুটি রামদা এবং ৫০টি ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা। এ ছাড়া ৯৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের মাত্র ২০০ মিটার দূরে একটি প্রাইভেট কারে থাকা আবদুল হাকিমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী। তিনি রাউজানে নিজের খামার থেকে চট্টগ্রাম নগরে ফিরছিলেন। মোটরসাইকেলে আসা ওই অস্ত্রধারীদের গুলিতে আবদুল হাকিমের গাড়িটির চালক মুহাম্মদ ইসমাইলও (৩৮) আহত হন। হাকিমের শরীরে ১০টি গুলির আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। এ ছাড়া গাড়িতে ২২টি গুলির চিহ্ন ছিল। গুলিতে গাড়ির সামনের দুটি চাকাও ফুটো হয়ে যায়। ঘটনার দুদিন পর আবদুল হাকিমের স্ত্রী তাসফিয়া আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন।

হত্যার ঘটনায় গত সপ্তাহে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা হলেন আবদুল্লাহ খোকন, মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মুহাম্মদ মারুফ ও মুহাম্মদ সাকলাইন। সে সময় একটি একনলা বন্দুক ও একটি এলজি উদ্ধার হয়। ওই আসামিদের তথ্যেই সাকিব ও শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বিএনপি কর্মী ও ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করানো হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর পাড়ের বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। খুনের ঘটনায় সন্ত্রাসীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে অংশ নেয়।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে গ্রেপ্তার দুজনকে থানা-পুলিশের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হবে। যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা খুনে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গ্রেপ্তার দুজনও হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আবদ ল হ ক ম ম হ ম মদ

এছাড়াও পড়ুন:

ছেলেমেয়েকে ২০ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিলেন বাবা

নিজের দুই সন্তানকে ২০ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ার উপহার দিলেন বাবা। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ক্রাউন সিমেন্টের উদ্যোক্তা–পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল তাঁর দুই সন্তানকে কোম্পানিটির ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ শেয়ার উপহার দিয়েছেন। এরই মধ্যে এই শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে আজ সোমবার উপহারের এই শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি জানিয়েছে ক্রাউন সিমেন্ট উদ্যোক্তা–পরিচালক আলমাস শিমুল। বর্তমানে তিনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছেন। জানা যায়, দ্বিতীয় প্রজন্মকে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের হাতের শেয়ারের একটি অংশ সন্তানদের মধ্যে হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আলমাস শিমুল তাঁর ছেলে সায়হাম সাদিক পিয়াল ও মেয়ে শোভা সোহাকে ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ শেয়ার উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেছেন। ঢাকার বাজারে আজ সোমবার ক্রাউন সিমেন্টের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫১ টাকা। সেই হিসাবে ৪০ লাখ শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

শেয়ার উপহার দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আলমাস শিমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যবসায় সক্রিয় থাকতে থাকতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ব্যবসার উত্তরাধিকার হিসেবে যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে চাই। এ কারণে তাদের মধ্যে শেয়ারের ন্যূনতম মালিকানা হস্তান্তরের পাশাপাশি ব্যবসায়ও যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা দেশ ও কোম্পানির জন্য এখন থেকেই যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের ব্যবসার পরিধিও এখন অনেক বড় হয়েছে। তাই আমরা তাদের ওপর কিছু দায়িত্ব দিয়ে নতুন নতুন ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিতে বেশি মনোযোগী হতে চাই।’

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে উত্তরাধিকার নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সহজে হয়ে থাকে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রাউন সিমেন্টের অন্য পরিচালকেরাও শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে তাঁদের একাধিক সন্তানকে ব্যবসায় যুক্ত করেছেন।

জানা যায়, আলমাস শিমুলের ছেলে সায়হাম সাদিক কানাডা থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে এরই মধ্যে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আর মেয়ে শোভা সোহা মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওই কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। তাই ক্রাউন সিমেন্টের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিদের পর্ষদে আসতে হলে ওই কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার তাঁদের হাতে থাকতে হবে। আর ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের এই শর্ত পূরণ করতে হলে বর্তমানে কোম্পানিটির ২৯ লাখ শেয়ারের দরকার হবে।

ক্রাউন সিমেন্ট ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারের অর্থাৎ মালিকানার ৫২ শতাংশের বেশি রয়েছে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। আর ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ শেয়ার। বাকি প্রায় ১৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ