কোরআনের প্রতি রাসুলের সীমাহীন ভালোবাসা
Published: 10th, November 2025 GMT
প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়লে চোখ ভিজে আসে। প্রিয় বইয়ের পাতা উল্টালে মন ভালো হয়ে যায়। ভালোবাসা এমনই—যা ভালোবাসি, তার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই, তার কথা শুনতে চাই, তাকে জানতে চাই।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের সবচেয়ে বড় ভালোবাসা ছিল কোরআন। এটা কোনো বাড়িয়ে বলা কথা নয়—তাঁর পুরো জীবনই এর সাক্ষী।
রাতের নামাজে কান্নাভেজা কণ্ঠরাত যখন গভীর হতো, মানুষ যখন ঘুমে আচ্ছন্ন থাকত, তখন নবীজি (সা.
কখনো একটি আয়াত পড়তে পড়তে থেমে যেতেন। সেই আয়াত নিয়ে ভাবতেন, কাঁদতেন, বারবার পড়তেন। তাঁর দাড়ি ভিজে যেত অশ্রুতে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৭৬৩)
ভাবুন তো, যিনি কোরআন নিয়ে এসেছেন, যাঁর কাছে জিবরাইল (আ.) আয়াত নিয়ে আসতেন, সেই মানুষটি কোরআন পড়ে কাঁদছেন! এর চেয়ে বড় ভালোবাসা আর কী হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কিতাব পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, তারা এমন এক ব্যবসার আশা করে, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ২৯)
অন্যের কণ্ঠে কোরআন শোনার আনন্দআমরা যাকে ভালোবাসি, তার কণ্ঠে গান শুনতে চাই, তার মুখে গল্প শুনতে চাই। নবীজি (সা.) অন্যের মুখে কোরআন শুনতে খুব পছন্দ করতেন।
একবার তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বললেন, ‘আমাকে কোরআন পড়ে শোনাও।’ ইবনে মাসউদ (রা.) অবাক হয়ে বললেন, ‘আপনার কাছে তো কোরআন নাজিল হয়েছে, আপনাকে আমি কীভাবে পড়ে শোনাব?’
নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি অন্যের মুখে শুনতে ভালোবাসি।’
তখন ইবনে মাসউদ (রা.) সুরা নিসা পড়তে লাগলেন। যখন তিনি ৪১ নম্বর আয়াতে পৌঁছালেন, যেখানে কিয়ামতের দিন প্রতিটি উম্মত থেকে সাক্ষী ডাকা হবে—তখন নবীজি (সা.)-এর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিনি বললেন, ‘যথেষ্ট, থামো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৫০)
এই ছিল কোরআনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা—শুধু পড়তেন না, শুনতেও ভালোবাসতেন। কোরআনের প্রতিটি শব্দ তাঁর হৃদয়কে নাড়া দিত।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর জীবনী লেখার জটিলতা ও সম্ভাবনা১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫কোরআন শেখানোর আগ্রহযাকে ভালোবাসি, তার কথা অন্যদেরও বলতে ইচ্ছা করে। নবীজি (সা.) সাহাবাদের কোরআন শেখাতেন অসীম ধৈর্য ও ভালোবাসা নিয়ে। কেউ ভুল পড়লে কোমলভাবে শুধরে দিতেন।
তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেরা সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২৭)
খেয়াল করুন, শুধু ‘যে কোরআন পড়ে’ বলেননি—বলেছেন ‘যে শেখে এবং শেখায়।’ মানে শুধু নিজে তিলাওয়াত নয়, বরং অন্যকে শেখানো, নিজে কোরআনকে বোঝা অন্যকে বুঝতে বলা এবং জীবনে কোরআনের সর্বজনীন শিক্ষা কাজে লাগানোর কথা বলেছেন।
মাসউদ (রা.) সুরা নিসা পড়তে লাগলেন। যখন তিনি ৪১ নম্বর আয়াতে পৌঁছালেন, যেখানে কিয়ামতের দিন প্রতিটি উম্মত থেকে সাক্ষী ডাকা হবে—তখন নবীজি (সা.)-এর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।জীবন্ত কোরআনআয়েশা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর সবচেয়ে কাছের মানুষ। তিনি তাঁকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন। একবার কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘রাসুলের চরিত্র কেমন ছিল?’
আয়েশা (রা.) এক বাক্যে উত্তর দিলেন, ‘তাঁর চরিত্রই ছিল কোরআন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৪৬)
ভাবুন তো, কোরআনে যা লেখা আছে, তিনি তাই ছিলেন। কোরআন বলে ক্ষমা করতে—তিনি ক্ষমা করতেন। কোরআন বলে সবর করতে—তিনি সবর করতেন। কোরআন বলে দান করতে—তিনি দান করতেন।
হাফিজ ইবনুল কাইয়িম (রহ.) লিখেছেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জীবন দেখলে বোঝা যায়, তিনি ছিলেন কোরআনের জীবন্ত রূপ।’ (জাদ আল-মাআদ, ১/২৪৭)
একটা মজার ব্যাপার হলো, নবীজি (সা.) সফরে গেলেও কোরআন থেকে দূরে থাকতেন না। উটের পিঠে চড়ে যাওয়ার সময়ও তিলাওয়াত করতেন। হাঁটতে হাঁটতেও কোরআন পড়তেন। নিজে পড়তেন অন্যদেরও পড়তে বলতেন।
আরও পড়ুনপ্রতিদিনের কাজে লাগবে কোরআন থেকে এমন কিছু২২ ঘণ্টা আগেআমাদের জন্য শিক্ষাকোরআন হলো আল্লাহর কালাম। এটি আমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা। অনেকটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ফরমান বা চিঠির মতো। কিন্তু আমরা কী করছি? অনেকে চিঠিটা পেয়ে খাম খুলছি না। কেউ খুললেও পড়ছি না। কেউ পড়লেও বুঝছি না। আর কেউ বুঝলেও মানছি না। অধিকাংশ মানুষই না খুলে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখছে।
একবার ভাবুন তো, আপনার প্রিয় মানুষ দূর থেকে একটা চিঠি পাঠাল। চিঠিতে লিখেছে—কীভাবে সুখে থাকবেন, কীভাবে সমস্যা সমাধান করবেন, কীভাবে জীবন সাজাবেন। আপনি কি সেই চিঠি না পড়ে রেখে দেবেন?
কোরআন ঠিক এমন একটা চিঠি। আল্লাহ পাঠিয়েছেন আমাদের জন্য। এতে আছে জীবন চলার সব দিকনির্দেশনা। নবীজি (সা.) এই চিঠি পড়েছেন, বুঝেছেন এবং জীবনে মেনেছেন। তাই তাঁর জীবন হয়েছে সফল, শান্তিময়।
ভালোবাসার পথযদি আমরা সত্যিকার অর্থে নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসি, তবে তাঁর প্রিয় জিনিসকেও ভালোবাসতে হবে। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিল কোরআন।
যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়ে, তার জন্য একটি নেকি। আর প্রতিটি নেকি ১০ গুণ হিসেবে।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৯১০তাহলে শুরু করুন আজ থেকেই। প্রতিদিন অন্তত একটি পৃষ্ঠা অর্থসহ পড়ুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে মনে শান্তি আসছে, জীবনে দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন, সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হচ্ছে। সুযোগ পেলে শব্দে শব্দে আরবি বোঝার চেষ্টা করুন।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়ে, তার জন্য একটি নেকি। আর প্রতিটি নেকি ১০ গুণ হিসেবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৯১০)
মানে শুধু পড়াটাই যথেষ্ট নয়, কিন্তু এটা শুরু। এরপর বুঝুন, তারপর মানুন। তখন দেখবেন জীবন পাল্টে যাচ্ছে।
কোরআন শুধু একটি কিতাব নয়—এটি জীবন বদলের হাতিয়ার। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সুরা ইয়াসিন পড়ুন। মাগরিব নামাজের পর সুরা ওয়াকিয়া পড়ুন। এশার নামাজের পর সুরা মুলক পড়ুন। আপনার জীবন প্রশান্তিময় হবে। জীবনের হতাশা দূর হবে। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাবেন।
যার ওপর কোরআন নাজিল হয়েছে, তিনি কোরআনকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন। আমরাও যদি তাঁকে ভালোবাসতে চাই, তাঁর অনুসরণ করতে চাই, তবে কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে হবে। আজই শুরু করুন—একটি সুরা, একটি পৃষ্ঠা একটি আয়াত দিয়ে।
[email protected]
মুহাম্মাদ মুহসিন মাশকুর: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আরবি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনব্যস্ত জীবনেও কোরআন খতমের কার্যকর কৌশল০৩ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র ছ ল ক রআন ক রআন র ক রআন শ ন নব জ র জ বন র জন য বল ছ ন আম দ র আল ল হ সবচ য করত ন ম সউদ বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘কালো হেলমেট পরা দুজন বাইকে এসে ককটেল ফাটিয়ে চলে যায়’
প্রবর্তনার সামনে আজ সোমবার সকালে যখন ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠানে ককটেল বিস্ফোরণ হয় সকাল সাতটার একটু আগে। এর মূল ফটকের সামনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। রাস্তায় লোকজনও ছিল কিছু। সেই সময় ইকবাল রোডের দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি ককটেল ফাটিয়ে চলে যান। যদিও তার আগে এই দুই ব্যক্তি কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সিসিটিভির ফুটেজ দেখে, বিস্ফোরণের আগে–পরের পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রবর্তনার ফাইন্যান্স ম্যানেজার মো. তানভীর আহমেদ। আজ বেলা দেড়টার দিকে তিনি জানান, এ ঘটনার পরপরই পুলিশ আসে। তারা তদন্ত করছে। এরপর প্রবর্তনার পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।
‘প্রবর্তনা’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান।
মো. তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে যা দেখেছি, সকাল সাতটার একটু আগে দুজন প্রবর্তনার মূল ফটকের পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর দুজন দুই পাশে তাকাতে থাকে। এ সময় প্রবর্তনার একজন নিরাপত্তারক্ষী ফটকের উল্টো দিকে ছিলেন। দেখা যায়, এ সময় দুই যুবক কোনো কিছু না করে বাইক নিয়ে চলে যায়। খানিকক্ষণ পরে ইকবাল রোডের দিক থেকে তারা বাইক চালিয়ে আসতে থাকে। প্রবর্তনার ফটকের কাছাকাছি এসে ককটেল বা এ রকম কোনো বস্তু ফেলে। সেখানে ধোঁয়া ওঠে এবং প্রচণ্ড শব্দ হয়।’
মো. তানভীর আহমেদ বলেন, বিস্ফোরণের এ সময় রাস্তায় লোকজন চলাচল করছিল। এতে যে কেউ আঘাত পেতে পারত। কিন্তু কিছু হয়নি।
প্রবর্তনার সামনের অংশ