চুয়েটে তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের হুঁশিয়ারি
Published: 10th, November 2025 GMT
প্রকৌশলীদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকারসংক্রান্ত তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এই মিছিল-সমাবেশ করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও সরকারের পক্ষ থেকে তিন দফা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা।
রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর থেকে মিছিল শুরু হয়। এরপর পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে মিছিলটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে এসে শেষ হয়েছে। পরে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলে।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তিন দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চললেও সরকার বারবার আশ্বাস দিয়ে আসছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর আগে রাজধানীমুখী লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশি বাধা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। অনেকে গুরুতর আহত হন। পরে সরকারের পক্ষ থেকে চাপের মুখে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়। সেই অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে পরে ডিপ্লোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে ছয় সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। চুয়েট শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, এই নতুন কমিটির পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে। আগের কমিটির সুপারিশ ৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশের কথা ছিল। অথচ নির্ধারিত সময় পার হলেও সরকার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার কথা বলেন তাঁরা। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এ সমাবেশে।
সমাবেশে চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহি আল ওয়াহিদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে মেধাবী প্রকৌশলীদের ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের আন্দোলন কোটা প্রথার বিরুদ্ধে এবং মেধার মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের তিন দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করি। এর ফলশ্রুতিতে সরকার একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে। কিন্তু দিনের পর দিন পার হলেও কোনো দৃশ্যমান ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধসহ আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত তিন দফা দাবিগুলো হলো সহকারী প্রকৌশলী (নবম গ্রেড) পদে নিয়োগ সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে হতে হবে, কোনো প্রমোশন কোটা থাকবে না। উপসহকারী প্রকৌশলী (দশম গ্রেড) পদে শতভাগ ডিপ্লোমা কোটা পরিহার করে বিএসসি ডিগ্রিধারীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। আর বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাহানারা ইমামের বই বিক্রি: বাংলা একাডেমির বক্তব্য এবং প্রতিবেদকের ব্যাখ্যা
সংগ্রহশালায় দেওয়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই বিক্রি করা নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
তাতে দাবি করা হয়েছে, প্রতিবেদনে কিছু ‘আংশিক সত্য’ উপস্থাপন করা হয়েছে; কিছু অংশ এমনভাবে হাইলাইট করা হয়েছে, যাতে পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন।
৮ নভেম্বর প্রকাশিত ‘জাহানারা ইমামের দেওয়া বই বিক্রি করেছে বাংলা একাডেমি, এখন দাম হাঁকা হচ্ছে লাখ টাকা’ শিরোনামের প্রতিবেদন নিয়ে ৯ নভেম্বর একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম ‘বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারের জাহানারা ইমাম সংগ্রহের বই–সম্পর্কিত বিতর্ক বিষয়ে বাংলা একাডেমির বক্তব্য’ পাঠান।
‘অনলাইনে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম এবং হাইলাইটস ব্যাপকভাবে টেমপ্লেট আকারে প্রচারিত হয়েছে’ জানিয়ে লিখিত এই বক্তব্যে বলা হয়, এটি বহুজনের মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠার কারণে বাংলা একাডেমি শুধু সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রে বক্তব্য না পাঠিয়ে সাধারণ বিবৃতি আকারে দিয়েছে।
বই বিক্রির ব্যাখ্যায় বাংলা একাডেমির বক্তব্যে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মজুত থাকা কয়েক হাজার বই ও অন্য কাগজপত্র গত ২৫ জুন থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিধি অনুযায়ী নিলামে বিক্রি করা হয়। কারণ, মজুত রাখার ঘরটি সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল।
কয়েক বছর আগে থেকে জাহানারা ইমামসহ অন্যদের দেওয়া বইগুলো যেভাবে ছিল, ঠিক সেভাবেই আছে জানিয়ে বাংলা একাডেমি বলেছে, এ বিষয়ে কোনো নতুন কমিটি গঠিত হয়নি বা সংগ্রহশালা পুনর্মূল্যায়নের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। অন্তত এক দশক ধরে জমা হওয়া পরিত্যক্ত বইগুলোই কেবল বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে নতুন যুক্ত হয়েছে কেবল গত বছরের বইমেলায় প্রাপ্ত মানহীন ও পরিত্যক্ত ঘোষিত বইগুলো।
জাহানারা ইমামকে নিজের সংশপ্তক বইটি উপহার দিয়েছিলেন শহীদুল্লা কায়সার, তা এখন ফেসবুক পেজে বিক্রির তালিকায় উঠেছে