৮ মাস পর খুলনায় জেলা আওয়ামী লীগে ঝটিকা মিছিল
Published: 20th, April 2025 GMT
খুলনায় জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। রোববার সকাল ৭টার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় এই মিছিল হয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর খুলনায় এটাই আওয়ামী লীগের প্রথম কোনো কর্মসূচি পালিত হলো। এরই মধ্যে ঝটিকা মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ৫ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ‘টেলিগ্রামে’ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নির্দেশনা অনুসারে আজ সকালে জিরো পয়েন্টে মিছিল করেছে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা যায়, একদল নেতাকর্মী ব্যানার নিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। ওই বিক্ষোভ থেকে স্লোগান দেওয়া হয়- ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘শেখ হাসিনা ফিরবে আবার বীরের বেশে’।
জেলা আওয়ামী লীগের কেউ এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা ছিল মিছিলে পরিচিত কোনো মুখ থাকবে না। এ কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অপরিচিত মুখের নেতাকর্মীদের দিয়ে মিছিল করানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ র ন ত কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভয়হীন ন্যায্য মানবিক মর্যাদার দেশ গড়ার প্রত্যাশা
দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীরা ভয়হীন ন্যায্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। গতকাল শনিবার জাতীয় জাদুঘরে ‘দৃশ্যমাধ্যম সমাজ সম্মিলন ২০২৫: কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁরা এই প্রত্যাশার কথা জানান।
আলোচনা, স্মৃতিচারণা, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাজানো হয় এই সম্মিলন। সারা দিন ধরে চলে এই অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যায় সম্মিলনের আলোচনা সভায় অধ্যাপক ও চিন্তক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করার জন্য নতুন ভাষার প্রয়োজন। মজলুমের পক্ষে থাকতে হবে, শুধু জুলুমের বিরুদ্ধে নয়, জালিমের বিরুদ্ধে থাকতে হবে।’ দেশের চলমান সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ভবিষ্যতে জাতির জন্য আরেকটি বিপর্যয় আনতে যাচ্ছে। তারা আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের মতো নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল না।
বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করার জন্য নতুন ভাষার প্রয়োজন। মজলুমের পক্ষে থাকতে হবে, শুধু জুলুমের বিরুদ্ধে নয়, জালিমের বিরুদ্ধে থাকতে হবে। সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক ও চিন্তকসলিমুল্লাহ খান বলেন, মূল বিষয় হলো জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। সেই কাজ না করা গেলে এই দ্বিকক্ষ, রাষ্ট্রপতির হাতে সংরক্ষিত আসন থাকা—এসবই ভবিষ্যতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যে নারীরা রাজপথে সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা যেন হারিয়ে গেছেন। কমিশনকে তাঁদের অনেকই বলছেন অভ্যুত্থানের পর তাঁদের আর জায়গা দেওয়া হয়নি। প্রয়োজন হলে নারীকে ব্যবহার, প্রয়োজনের শেষে ছুড়ে ফেলার এই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করতে হবে।
অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তির অনেক চাকচিক্যময়, উচ্চকণ্ঠ উদ্যাপন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভেতরটা মনে হচ্ছ অন্তঃসারশূন্য। সব আগের মতেই আছে উন্নয়নের বয়ান, ড্রোন শো উদ্যাপন। শুধু মুখ পরিবর্তন হয়েছে। এই রকমভাবে নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সংঘবদ্ধ সন্ত্রাস হচ্ছে। চলছে ‘ট্যাগ দেওয়া’। আগে বলা হতো ‘স্বাধীনতাবিরোধী’, ‘রাজাকার’। এখন বলা হচ্ছে ‘স্বৈরাচারের দোসর’। এই এখন সাংস্কৃতিক কর্মীদের একটি বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘সাংস্কৃতিক কর্মীরা জনতার অব্যক্ত বাসনাকে ভাষা দেন। কিন্তু আমাদের একটি পুরো প্রজন্মের সংস্কৃতিজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা ইতিহাসের একরৈখিক বয়ান তৈরি করেছেন। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কারিগরদের মতো কাজ করেছেন। এখন সংস্কৃতিজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের কর্তব্য মুক্তিযুদ্ধকে নতুন আলোয় ব্যাখ্যা করা। ক্ষমতার সঙ্গে নয়, জনতার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ফিরোজ আহমেদ,শিল্পী ও শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ, পরিবেশকর্মী ও সংগঠক আমিরুল রাজীব। শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এর আগে ছিল নির্মাতা জাহিন ফারুক আমিনের সঞ্চালনায় ‘কথামালা’ শীর্ষক জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীদের স্মৃতিচারণা। এতে আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী ড. শহীদুল আলম বলেন, ‘আমরা এখন অনেকে ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করছি। কিন্তু সেই সরকার টিকে থাকার সময় সাহস করে কিছু বলিনি। যখন যা বলা দরকার, তখনই তা বলতে হবে।’
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘গত বছর সবাই একত্র হতে পেরেছিলাম বলে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছি। অনেকের সঙ্গে পথেই নতুন করে পরিচয় হয়েছিল। এখন এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।’ কথামালায় আরও অংশ নেন শিল্পী ও নির্মাতা ঋতু সাত্তার, আলোকচিত্রী ও রাজনৈতিক কর্মী তাসলিমা আখতার, পোশাক পরিকল্পক ইদিলা ফরিদ, প্রযোজক মুশফিকুর রহমান, নির্মাতা আল হাসিব খান, সংগীতশিল্পী হাসান ইথার ও নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়।
এর আগে সকালে ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে দিনভর সম্মিলনের কার্যক্রম শুরু হয়। আয়োজনের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, জুলাই গণমানুষের অভ্যুত্থান। মানুষকে সম্পৃক্ত রাখা না গেলে জুলাইকে ধরে রাখা যাবে না। অন্যায়-অবিচার হলে মানুষ মেনে নেয় না।
নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল বসবাসের উপযোগী একটা নগর, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু এই প্রান্তিক মানুষ, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোনো সংস্কার আলোচনায় নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, ৫ আগস্টের আগে জনগণ বয়ান তৈরি করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তা উল্টে গেছে। যারা ক্ষমতায় আছে, তারা নিজেদের মতো করে বয়ান তৈরি করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ ভাইয়ের স্মৃতিচারণা করেন। এতে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান, অধ্যাপক হাসান আশরাফ, অধ্যাপক দীনা এম সিদ্দিকী, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুনমানুষকে বাদ দিয়ে জুলাইয়ের চেতনা ধরে রাখা যাবে না৬ ঘণ্টা আগে