ভারতের সঙ্গে নতুন করে পাকিস্তানের সম্পর্ক অবনতি হওয়ার মূল কারণ কাশ্মীর সমস্যা। কয়েক দশকের পুরোনো এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শান্তি সম্ভব নয়। তাই এই সমস্যার সমাধান করতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ। আজ শনিবার ফক্স নিউজ ডিজিটালে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

রিজওয়ান সাঈদ শেখ বলেন, ‘সাময়িক কোনো সমাধান নয়, কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। প্রেসিডেন্ট [ডোনাল্ড] ট্রাম্প কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে অংশ নিয়ে তাঁর [চুক্তির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের] উত্তরাধিকারকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।’ কাশ্মীর ইস্যু ‘পারমাণবিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে’ পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে দাবি করেছে ভারত। তবে নিজেদের দাবির পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেয়নি নয়াদিল্লি। পাকিস্তান সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে পেহেলগাম হামলার নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

পেহেলগামের হামলার পর থেকে উভয় দেশ ধারাবাহিকভাবে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে বৈরী দেশ দুটি আবার সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসলামাবাদের শঙ্কা, ভারত যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে। তাই তারা বিভিন্ন ধরনের সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ইরান, সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ফক্স নিউজকে রিজওয়ান সাঈদ বলেন, কাশ্মীর পরিস্থিতি ‘এর আগেও যখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখনো আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টির প্রতি নজর দিয়েছিল। কিন্তু সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হওয়ার আগেই তারা চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’ তাই কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেকোনো ভুল পদক্ষেপ বা ভুল হিসাব পারমাণবিক সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমন জনবহুল অঞ্চলে সেটি অবশ্যই কাম্য নয়।’ পাকিস্তান এই অঞ্চলে কোনো অস্থিরতা চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী চাই।’

গত বৃহস্পতিবার নিউজউইক সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন রিজওয়ান সাঈদ। তখন তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ‘বিশ্বে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে’, যা গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে কাশ্মীর বিষয়ের চেয়ে ‘আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নেই’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

ওই সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, গত জানুয়ারির শপথ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘শান্তির দূত ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমি গর্বের সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চাই।’

ট্রাম্প এরই মধ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছেন। যদিও তা পরবর্তীতে ভেঙে গেছে। তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ থামাতেও জোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে ইরানের সঙ্গেও নতুন করে পারমাণবিক চুক্তি করতে চাইছেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সুবিধামতো সময়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন আসিম ইফতিখার আহমদ। জাতিসংঘে নিয়োজিত পাকিস্তানের এই রাষ্ট্রদূত শুক্রবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ ম র সমস য সমস য র স

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি দেশবাসী মেনে নেবে না: বাম গণতান্ত্রিক জোট

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গোপন বাণিজ্যচুক্তির’ খবরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ জোটের নেতারা বলেছেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি দেশবাসী মেনে নেবে না। একই সঙ্গে জনগণের সামনে চুক্তির খসড়া প্রকাশ এবং তাদের সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি না করার আহ্বান জানানো হয়।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এর আগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাম জোটের নেতারা বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, তথাকথিত ‘ছাড়’-এর বিপরীতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে গম ও এলএনজি কিনতে হবে, ২৫টি বোয়িং বিমান কিনতে হবে। ১১০টি মার্কিন পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে হচ্ছে এবং বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রের খনিজসম্পদের ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হচ্ছে, যা নিয়ে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নেতারা আরও বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক সমঝোতা জোরদার করা হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এতে করে দেশের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। এসব বিষয় পরিষ্কার করার দায়িত্ব সরকারের। অবিলম্বে চুক্তি প্রকাশ করে জনগণের সংশয় সরকারকেই দূর করতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। আলোচনায় অংশ নেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্ল্যা, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু।

এ ছাড়া ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান দিবসে বিকেল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট সমাবেশ করবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ