ইসরায়েলের তেল আবিবে অবস্থিত প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে ভয়ানক এক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েলের

আজ রোববার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছেই আঘাত হেনেছে। 

হামলার বেশ কয়েকটি ভিডিও ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমানবন্দরের পাশে বিশাল একটি ধোঁয়ার কুণ্ডলী উপরের দিকে উঠছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের স্পষ্ট প্রমাণ।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) নিশ্চিত করেছে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এলাকায় আঘাত হানা ইয়েমেনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। বিমান বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এ ব্যর্থতায় তদন্তও শুরু করেছে তারা। 

আইডিএফের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের প্রভাবের বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে এবং দুই সেনা সদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী ও অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করছে।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেন যদি সত্যিই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত হানে, তাহলে তা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার সূচনা করবে। ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ বা ‘অ্যারো’ প্রযুক্তি সাধারণত সাবসনিক বা সুপারসনিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা এখনো অনেক দেশের জন্যই কঠিন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেখানে এমন একটি হামলা ইসরায়েলের জাতীয় মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হামলা কেবল ইসরায়েলের ভেতরের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়; এটি একটি বৃহৎ আঞ্চলিক সংকটের ইঙ্গিত, যেখানে ইয়েমেন, লেবানন, ইরানসহ একাধিক পক্ষ জড়িত হতে পারে। 

অন্যদিকে ইয়েমেনি হামলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, মিসর এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ, এটি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর, আরব সাগর, বাবেল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী ইসরায়েল ও এর মিত্র দেশগুলোর জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে হুতিরা। প্রায় ১৫ মাসের সংঘাতের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরাও হামলা স্থগিত করে। তবে গত মাসে ইসরাইল নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করলে আবারও ইসরায়েল ও সাগরে পশ্চিমা জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে হুতিরা। 

হুতিদের এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় নিয়মিত তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ইয়েমেনেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। হুতি বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন এসব হামলায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র প রসন ক

এছাড়াও পড়ুন:

হাতে ধরলেই উঠে যাচ্ছে পিচ

ছাতক উপজেলার বড়কাপন ভায়া দোয়ারাবাজারে কপলা-শ্রীপুর সড়ক সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার আগেই হাতের টানে পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়ক সংস্কারে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এরই মধ্যে পান্ডারগাঁও ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ওই কর্মসূচিতে স্থানীয়রা বলেছেন, অবিলম্বে সড়ক সংস্কারকাজ সঠিকভাবে করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা। এ বিষয়ে এলজিইডির দায়সারা ভাব তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় প্রকৌশলীকে উপজেলা থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের বড়কাপন এলাকা থেকে কপলাবাজার হয়ে সড়কটি দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপুর এসেছে। এ সড়কটি দিয়ে দুটি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সুড়িরগাঁও, পান্ডারগাঁও, নোয়াগাঁও, হরিপথনগর, আফসরনগর, পলিরচর, হিম্মতেরগাঁও, শ্রীপুর, মাছিমপুর, বাউসা, দোহালিয়া আইন্দারীগাঁও, বিয়ানীবাজারসহ অন্তত ৩০টি গ্রামের হাজার হাজার লোকজন যাতায়াত করেন। সড়কটি বেশ কয়েক বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সড়কটি সংস্কারকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর কার্যাদেশ দেওয়া হয় মেসার্স সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
এক মাস আগে ঠিকাদার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করে। কাজের শুরুতেই ব্লক ও গাইডওয়াল নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এতে পিচ ঢালাইয়ের আগেই গাইডওয়াল ও ব্লকগুলোতে ফাটল ধরে এবং অনেক জায়গা ভেঙে যায়। ওই সড়কে কপলা থেকে শ্রীপুর বাজার পর্যন্ত পিচ ঢালাই করা সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।
সড়ক সংস্কারকাজের ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার অনেকাংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। কোথাও বৃষ্টির পানি জমে আছে। রাস্তার পাশে দেওয়া ব্লকগুলো এলোমেলো করে রাখা হয়েছে। বাঁশের লাঠি দিয়ে খোঁচা দেওয়ায় ঢালাইয়ের টুকরাগুলো উঠে যাচ্ছে। সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণে করা হয়েছে অনিয়ম।
হরিপথনগর গ্রামের হাফিজ আমিন উদ্দিন বলেন, কাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়কের কয়েকটি অংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয় পান্ডারগাঁও ইউপি সদস্য আলী হোসেন বলেন, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজার সড়কের প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারকাজে নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তদারকি না করার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি ফয়সল আহমদ বলেন, কাজে অনিয়ম হয়নি। সড়কের কিছু জায়গায় ফাটল এবং পিচ উঠে গেছে। এগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বলেন, সংস্কারকাজ তো এ রকম হওয়ার কথা নয়। কাজের তদারকি করেছেন নিজেই। কাজের ত্রুটি থাকলে ঠিকাদার তা ঠিক করে দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ