সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধে গাফিলতি: গঠন হচ্ছে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি
Published: 4th, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জে হাওরে ৩০৮ কোটি টাকার স্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের পাশের গর্ত ভরাট প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্তে যাঁদেরই গাফিলতি বা অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) আব্দুল লতিফ মোল্লা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব আব্দুল লতিফ মোল্লা।
‘হাওরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ: ৩০৮ কোটি টাকার কাজ শেষ করতে তাড়াহুড়া’ শিরোনামে আজ প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সুনামগঞ্জের ১৪টি হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩০৮ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের এই কাজে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সময় আছে মাত্র দুই মাস, কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজ হয়নি। বর্ষা চলে আসায় এখন কাজ করা কঠিন হবে, আবার যেটুকু হয়েছে তা–ও টিকবে কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এসব তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটির প্রসঙ্গ টেনে সভায় অতিরিক্ত সচিব আব্দুল লতিফ মোল্লা বলেন, তিনি সুনামগঞ্জে থেকেই বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় কথা বলেছেন। আজ শক্তিশালী তদন্ত কমিটি হবে। প্রতিটি বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে। এতে যদি পাউবোর কোনো কর্মকর্তাও জড়িত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
গত শুক্রবার থেকে সুনামগঞ্জে অবস্থান করছেন জানিয়ে আব্দুল লতিফ মোল্লা বলেন, এটি তাঁর নিয়মিত প্রকল্প পরিদর্শন। কোনো তদন্ত নয়। তিনি জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখেছেন। প্রকল্পের ভুলত্রুটি যা রয়েছে, সেগুলো শোধরানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ঠিকাদারদের পক্ষে নন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশে তাঁরা খুশি জানিয়ে আব্দুল লতিফ মোল্লা বলেন, ‘এতে আমরা কাজে নজরদারি বাড়াব। ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে শুধরে নেব। স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে নিয়েই কাজগুলো করতে হবে বলে জানান তিনি।’
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ–১) মো.
সভায় জানানো হয়, সুনামগঞ্জে এবার হাওরের ফসল রক্ষায় ৬৮৪টি প্রকল্পে ৫৯৩ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে। এতে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা আছে ১২৮ কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, হাওরের ৯৭ শতাংশ ধান কাটা শেষ। এবার নির্বিঘ্নে কৃষকেরা তাঁদের ধান গোলায় তুলতে পেরেছেন। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুনহাওরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ: ৩০৮ কোটি টাকার কাজ শেষ করতে তাড়াহুড়া৮ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ ৩০৮ ক ট প রকল প তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)