আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করপোরেট করের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। শর্ত শিথিল হলেও করপোরেট করের হার কমানো হচ্ছে না। অন্যদিকে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি যাদের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওতে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে করপোরেট কর রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি, প্রতি একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বার্ষিক মোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রান্সফারের মাধ্যমে হতে হবে। এ শর্ত পূরণ না হলে ওই কোম্পানির করপোরেট কর হবে সাড়ে ২২ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের কম শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে কর হার সাড়ে ২২ শতাংশ হবে। শর্ত পূরণ না করতে পারলে ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে সরকার ইতিবাচক। বাজেটে শর্ত শিথিল হবে, অর্থাৎ করদাতাবান্ধব করা হবে।

সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। গত অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা আর বাড়েনি। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির সভায় ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করার জোর দাবি জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ ছাড়া গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। ফলে বর্ধিত মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। বিদ্যমান বার্ষিক করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হতে পারে। 
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ অর্থনীতি এখনও ব্যাংকের লেনদেনের বাইরে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকনির্ভর নয়। বড় এবং মাঝারি কোম্পানির ক্ষেত্রে লেনদেনের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয় না। সেজন্য তারা কর কমানোর সুবিধা নিতে পারছেন না। তাদের ভাষ্য, কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আয় বা প্রাপ্তি এবং ব্যয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক লেনদেনের সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের অনেক ব্যয়কে করের আওতায় ধরা হয়। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কর ২০ শতাংশ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সমকালকে বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য করপোরেট কর কমানো হলেও কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লেনদেন এখনও ব্যাংকের বাইরে। যেমন একটি কারখানায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী আছে। তাদের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের টিএ, ডিএ বা তাদের পেছনে অন্য যেসব খরচ হয়, সেগুলো নগদে সম্পন্ন হয়। ফলে বড় আকারের এসব লেনদেন ব্যাংকের আওতার বাইরে থেকে যায়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: করপ র ট কর ব যবস য় ল নদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য

সরকারের কাছ থেকে সেবা নিতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের মানুষকে এখনকার চেয়ে একটু বাড়তি খরচ করতে হবে। কারণ, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন ধরনের মাশুল (ফি), সুদ, মুনাফা, স্ট্যাম্প বিক্রি, টোল, ইজারা, ভাড়া ইত্যাদির হার বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ক। এ উৎসগুলো থেকে আয় সংগ্রহের দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এর বাইরেও অন্যতম একটি খাত রয়েছে সরকারের রাজস্ব আয় সংগ্রহের, যেটাকে সরকার বলে কর ছাড়া প্রাপ্তি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ), সংক্ষেপে যা এনটিআর নামে পরিচিত।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনটিআর থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে সরকারের। তবে এই খাত থেকে শেষ পর্যন্ত কত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়, তা জানার জন্য অর্থবছর শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে আগামী অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়ে বলেছে, সেবা মাশুল তিন বছর পরপর অথবা প্রয়োজনের নিরিখে যথাসময়ে হালনাগাদ হবে। তবে সেগুলো করা হবে সেবা দেওয়ার খরচ, জীবনযাত্রার মান, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় রেখে।

আগামী ২ জুন টেলিভিশনের পর্দায় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাতে এনটিআর থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের কথা বলা থাকবে। তবে মাশুল বৃদ্ধির কথা বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করবেন না তিনি।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত হাটবাজারের ইজারা মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে। মোবাইল কোর্টসহ যেসব খাতে সরকার জরিমানা ও দণ্ড আরোপ করে, বাড়তে পারে সেগুলোও। এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসড়কসহ বিভিন্ন সেতু পারাপারের টোল, সেবা ও প্রশাসনিক মাশুল ইত্যাদির হারও কিছুটা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দিক থেকে বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার ৮ শতাংশের কম। দেশে ডলার-সংকট দেখা দিলে ২০২২ সালে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারের আবেদনে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ঋণ কর্মসূচি অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলে দিয়েছিল, বাংলাদেশকে রাজস্ব-জিডিপির হার বছরে দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। এনটিআরের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার সময় আইএমএফের এই শর্তের কথাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।

অর্থ বিভাগ অসন্তুষ্ট

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, এনটিআর থেকে ভালো রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এ ব্যাপারে সংস্থাগুলোর যেমন অসহযোগিতা আছে, মন্ত্রণালয়গুলোরও তেমন তাগিদ নেই। বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগ অসন্তুষ্ট। কারণ, অন্য মন্ত্রণালয় শুধু অর্থ বরাদ্দ পেতে চায়, অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, কাঁচা পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে সামান্য রাজস্ব মাশুল ছিল, যা ৩০ বছর আগে ধার্য করা। সম্প্রতি হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়ায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় নিজেই তা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। অথচ আগামী বাজেট প্রণয়নের অংশ হিসেবে কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন টোল ও মাশুল বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ বিভাগ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

সামান্য কিছু মাশুল বাড়ালেই সমালোচনা হয়। বছর যাচ্ছে, অর্থনীতি বড় হচ্ছে, সরকারকেও তো চলতে হবে। আবার সরকার তো সংগৃহীত অর্থ জনগণের জন্যই ব্যয় করেমাহবুব আহমেদ, সাবেক অর্থসচিব

এনটিআরের মধ্যে বড় ১০টি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লভ্যাংশ ও মুনাফা। ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে সরকার লভ্যাংশ ও মুনাফা পায়। চলতি অর্থবছরে লভ্যাংশ ও মুনাফা থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৭ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।

সরকার, সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন আর্থিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পাওয়া যায়। চলতি অর্থবছরে এই খাত থেকে ৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো হচ্ছে।

আইন ও নিয়মনীতির পরিপন্থী বিভিন্ন কাজের জন্য সরকার জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ করে প্রতিবছর কিছু অর্থ আয় করে থাকে। চলতি অর্থবছরে ৬৪৩ কোটি টাকা আদায় লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় ধরা হচ্ছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে দেওয়া সেবার বিপরীতে আয় করে। যেমন আমদানি-রপ্তানি সনদের মাশুল, কোম্পানি নিবন্ধন মাশুল, বিমা প্রিমিয়াম, সমবায় সমিতিগুলোর নিরীক্ষা মাশুল, নিবন্ধন ও নবায়ন মাশুল ইত্যাদি। এসব সেবার বিপরীতে সরকার আগামী অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

এ ছাড়া সরকার আগামী অর্থবছরে হাট-ঘাট ভাড়া ও ইজারা দিয়ে হাজার কোটি টাকা, টোল ও লেভি থেকে আরও হাজার কোটি টাকা, মূলধন রাজস্ব অর্থাৎ পুরোনো গাড়ি বা আসবাব নিলামে বিক্রি থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আদায় করতে চায় বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াবে ঠিক আছে, কিন্তু এনটিআর থেকে সংগ্রহ বৃদ্ধির যথাযথ পরিকল্পনাও থাকা চাই। এমনকি এনবিআরের বাইরেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ক্ষেত্র আছে। মাহবুব আহমেদ বলেন, সামান্য কিছু মাশুল বাড়ালেই সমালোচনা হয়। বছর যাচ্ছে, অর্থনীতি বড় হচ্ছে, সরকারকেও তো চলতে হবে। আবার সরকার তো সংগৃহীত অর্থ জনগণের জন্যই ব্যয় করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ মাসে মুনাফা ১,১৩৫ কোটি টাকা মুনাফা করল ইউনাইটেড পাওয়ার
  • চাঙ্গা রেমিট্যান্স প্রবাহে কাটছে ডলার সংকট
  • ঈদের পরের মাসে প্রবাসী আয় কমেছে, এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার
  • এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার
  • এপ্রিলে এলো ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
  • ৩২ কোটি টাকা মুনাফা কমেছে সামিট পাওয়ারের
  • করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে
  • তেলে নয়, সুদে পোয়াবারো পদ্মা, মেঘনা, যমুনার
  • বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য