ফিলিস্তিনের গাজা যখন ইসরায়েলি হামলায় সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত, তখন হামলা আরও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে নেতানিয়াহুর সরকার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরায়েল পুরো গাজা দখল করতে চায়। এ ছাড়া গাজায় ত্রাণ সহায়তা দিতে একটি নতুন ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। 

তবে এ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে একজন মন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। গাজায় হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা তলব করার কয়েক ঘণ্টা পরই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের এ পরিকল্পনাকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, ইসরায়েল সম্পূর্ণ গাজা দখল করবে ও বিজয় ঘোষণা করবে। এ ক্ষেত্রে হামাসের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। হামলা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করা হবে দক্ষিণ গাজায়। এভাবে পুরো গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। আলজাজিরা জানায়, বর্তমানে গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল। 

রয়টার্স জানায়, এরই মধ্যে গাজায় হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৮ মাসে অন্তত ৫২ হাজার ৫৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১৮ হাজার ৬১০ জন জন আহত হয়েছেন। 

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সফরের আগেই গাজায় হামলা সম্প্রসারণ করা হবে।  

এদিকে রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সামনেই তর্কে জড়ান জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির। তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন নেতানিয়াহু। বেন গভির যখন বলেন, গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের কোনো দরকার নেই, বরং হামাসের খাদ্যভান্ডারে বোমা হামলা করা উচিত। এ কথা শুনে ক্ষেপে যান সেনাপ্রধান ইয়াল জামির। তিনি বলেন, আপনি আমাদের সবাইকে বিপদে ফেলতে চাইছেন। এ সময় নেতানিয়াহু দু’জনকে থামিয়ে দেন। ইয়াল জামির যুক্তি দেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গাজায় ত্রাণ সহায়তা দিতে ইসরাইল বাধ্য। 

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র দপ্তরও স্বীকার করেছে, হামাসকে এড়িয়ে গাজায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে গাজায় কর্মরত মানবিক সংস্থাগুলো নতুন ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, ওষুধ-পানিসহ জীবন রক্ষাকারী পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসরায়েল নতুন পথ খুঁজছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা এমন কোনো পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন দেব না, যা মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে।  

এদিকে গাজায় নতুন করে অভিযানের জন্য হাজার হাজার সেনা তলবের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে ইসরায়েলি জনগণ। সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন পিঙ্কাস মনে করেন, সেনা অনেকেরই অভিযানে যোগ না দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ১৮ মাসে যা অর্জিত হয়নি; হামলা বাড়িয়ে তা অর্জন সম্ভব না। ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিডও নেতানিয়াহুর ১০ হাজার রিজার্ভ সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।  
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শিশুদের জন্য একটি উপহার রেখে গেছেন প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস। সেই উপহার এরই মধ্যে ফিলিস্তিনে পৌঁছে গেছে। উপহারটি মূলত প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের পাঠানো একটি গাড়ি (পোপমোবাইল)। তিনি গাজার শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কাজে গাড়িটি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষভাবে নকশা করা ওই গাড়িতে পোপ জনসমক্ষে আসতেন।

হামাস জানিয়েছে, তারা গাজার জনগণকে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে দেবে না। খাদ্য সংকটের মধ্যে লুটপাট চালানোয় একটি সশস্ত্র গ্রুপের ৬ জনকে হত্যা করেছে তারা। কাসসাম ব্রিগেড দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর বড় হামলার দাবি করেছে। খান ইউনিসে তারা ‘আল-ইয়াসিন ১০৫’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে দুটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং একটি সামরিক বুলডোজার ধ্বংস করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল গ জ য় ত র ণ সহ ইসর য় ল র মন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট

সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। প্রস্তাবে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে মামলা দায়েরের আগেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ–সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ–সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।

বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ