পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দিয়েছেন। 

মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নের ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিমের বাড়িতে গিয়ে তার দলে যোগ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কলাপাড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেডএম কাওসার। 

এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মো.

মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করছেন সাধারণ মানুষ। দলবদল ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া- রাঙ্গাবালী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সাল থেকে ৯৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ সালে কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে তিনি উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ২ নাম্বার সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

অ্যাডভোকেট জেডএম কাওসার বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য ফরম পূরণ করে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ ফজলুল করিমের হাতে হাত রেখে মো. মোস্তাফিজুর  রহমান যোগদান করেছেন। ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং ইসলামের পক্ষে কাজ করার লক্ষ্যে তিনি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।’’

মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমি বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন সঠিক রাজনীতি করছে। জীবনের শেষ বয়সে মানুষের জন্য যাতে কিছু করে যেতে এজন্য আমি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছি।’’

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনে নির্বাচন করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। 

ইমরান//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম স ত ফ জ র রহম ন কল প ড় ইসল ম ব এনপ সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ, উন্মুক্ত বিতর্কে অংশ নেওয়ার আহ্বান ছয় নারীর

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দ চয়নে দুঃখ প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। এ দুঃখ প্রকাশকে সাধুবাদ জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতকে আইনি নোটিশ দেওয়া ছয় নারী। এতে ‘ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি’ বন্ধ এবং হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে কিংবা উন্মুক্ত বিতর্কে নারীর সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর বিবৃতিতে নারী শিক্ষায় কওমি মাদ্রাসা এবং আলেম-ওলামাদের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে তারাও আগ্রহী। নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দ চয়ন হেফাজত সমর্থন করে না জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। 

এই হুঁশিয়ারির জবাবে ছয় নারীর বিবৃতিতে বলা হয়, নারীকে প্রকাশ্যে গালি দেওয়ার পর আইনি নোটিশের উত্তরে ক্ষমা চাওয়াকে সাধুবাদ জানাই এবং গ্রহণ করি। তবে হেফাজত ‘নারীকে পণ্য’ বানানোর পশ্চিমা এজেন্ডা না মেনে নেওয়া, ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় না দেওয়া, উগ্র নারীবাদীদের লেলিয়ে দেওয়ার যেসব কথা বলেছে– এমন ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই। দ্বিমতের কারণে কাউকে ট্যাগ দেওয়া যাবে না। 

গত শনিবার চার দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত হেফাজতের মহাসমাবেশ থেকে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করা হয়। কমিশন বাতিলের দাবি করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনটি। দু’জন বক্তা কমিশন সদস্যদের ‘বেশ্যা’ ‘হিজড়া’ গালি দিলে আইনি নোটিশ দেন ছয় নারী। তাঁরা হলেন– এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া।

গালির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহাসমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দু’জন বক্তা আপত্তিকর শব্দ চয়ন করেছেন, যা আমরা সমর্থন করি না। কেউ এতে আহত হলে তাদের প্রতিও আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। 

আলেম-ওলামাদের প্রতি বিদ্বেষ-কটাক্ষ থেকেও বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে হেফাজত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যারা এতকাল আলেম-ওলামাকে বিদ্বেষমূলকভাবে ‘জঙ্গি’, ‘মৌলবাদী’, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে কটাক্ষ করে এসেছেন, তাদেরও আমরা এ ধরনের আপত্তিকর শব্দ চয়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আর শাপলা চত্বরের গণহত্যায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে কারা উৎসাহ দিয়েছিল, তা আমরা ভুলে যাইনি। 
এতে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি ঘৃণার প্রশ্নই আসে না। মতাদর্শিক লড়াইকে ‘নারীর প্রতি ঘৃণা’ হিসেবে দেখানো মূর্খতা। যার যার ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষায় এবং সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে হেফাজতও আগ্রহী। কিন্তু আলেম-ওলামা ও অন্যান্য ধর্মীয় বিশেষজ্ঞকে বাদ দিয়ে একদল ‘এনজিওবাজ নারীবাদীকে’ নিয়ে গঠিত কমিশন যে একচেটিয়া প্রতিবেদন দিয়েছে, যেখানে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারী সমাজের ধর্মীয় চিন্তা ও বিবেচনা উপেক্ষিত হয়েছে। এই বৈষম্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। 

আজিজুল হক বলেন, উগ্র ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক হেফাজতকে ‘নারীবিদ্বেষী’ অপবাদ দেওয়ার অপরাজনীতি অনেক পুরোনো। অথচ কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রী প্রতিবছর বাড়ছে। সরকারি বরাদ্দমুক্ত এসব মাদ্রাসায় সমাজের হাজারো প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেয়ের থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে হেফাজতেরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

ছয় নারীর বিবৃতিতে হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে কিংবা উন্মুক্ত বিতর্কে নারীর সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, নারীর সমঅধিকার কোনোভাবেই পশ্চিমা এজেন্ডা নয়। হেফাজতের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের আহ্বান, নারীর সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার বিষয় নারীই বুঝবে এবং তারা যেন সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। সব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করাই আমাদের সবার লক্ষ্য। কাজেই নারীদের ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করে সামাজিক চাপ সৃষ্টি অনুচিত।

চব্বিশের অভ্যুত্থানকে নারীদের শক্তি বোঝার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পেছনে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোনো দ্বিমতে এক টেবিলে বসে কথা বলার পরিস্থিতি বজায় রাখবেন। আশা করি, নতুন বাংলাদেশ সবার হবে।

৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে সমাজে নারীবিদ্বেষ ছড়ানোর মতো অপরাধ বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট ৪৯ জন নাগরিক। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ধর্মীয় নামধারী সংগঠনের এই দাবি শুধু আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্যই নয়, একই সঙ্গে তা জনমনে নারীবিদ্বেষ উস্কে দিচ্ছে। নারী কমিশন বাতিলের দাবির বিষয়ে সরকার ‘নীরব’ ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকারকর্মী ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আলোকচিত্রী ও লেখক ড. শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।
এদিকে হেফাজতে ইসলামসহ নারী অবমাননা, লাঞ্ছনা, কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নারীমুক্তি কেন্দ্র। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করারও দাবি জানান নেতারা।

এ ছাড়াও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যের শিকার হিসেবে নারীর ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তির জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ