রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে: আলী রীয়াজ
Published: 8th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণকে ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। তবেই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে যেসব রাজনৈতিক শক্তি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তাদের সবারই চাওয়া এমন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে নাগরিক অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকবে। সেই সঙ্গে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থাও থাকবে। একজন ব্যক্তি, যিনি প্রধানমন্ত্রী হন কিংবা যা-ই হন না কেন, তিনি যেন ক্ষমতার ঊর্ধ্বে বা ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত হয়ে না যান।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলাদেশকে একটি আদর্শ জায়গা বলে বিবেচনা করতে পারে। এ দেশের জনগণকে কিংবা তরুণ প্রজন্মকে যেন আর কখনোই অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ দিতে না হয়।’
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেন।
আরও পড়ুনআশা করি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেবে: আলী রীয়াজ০৩ মে ২০২৫আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেকে কিছু কিছু ছাড় দেবে, প্রত্যাশা আলী রীয়াজের০৭ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার পক্ষে এনসিপি
দেশে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে নতুন করে বিভাগ ঘোষণা করার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিপির সঙ্গে ‘বর্ধিত আলোচনায়’ বসে। আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।
জেলা পরিষদ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বাতিলের বিপক্ষে এনসিপি মত দিয়েছে উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়টিতে তাঁরা জোর দিয়েছেন। কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা বলেছে, কিন্তু এনসিপি জনগণের সরাসরি ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান করার কথা বলেছেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিপক্ষে এনসিপির অবস্থান জানিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সহিংসতা ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। এই নিয়ম আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তাদের স্বার্থে চালু করেছিল, যেটা সমাজে ভয়াবহ সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। দলীয় প্রতীক না থাকলে সমাজের ভালো মানুষগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সেটা তদন্ত করার প্রস্তাব দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এনসিপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত জানায়। সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা মনে করি, সংসদীয় কমিটির কাছে এই ক্ষমতা দেওয়া হলে রাজনীতিকীকরণ হতে পারে; বরং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটি তদন্ত করা যেতে পারে।’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এনসিপি আগে অর্থ বিল এবং অনাস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার পক্ষে মত দেয়। আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে এনসিপির অবস্থানকে পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বান জানায়।
সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার পক্ষে আমরা এখনো অনড় রয়েছি। তবে এই অবস্থানের বিষয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করব।’
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে বিরোধী দলের সদস্যকে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। সারোয়ার তুষার বলেন, সব মন্ত্রণালয় না হলেও জনপ্রশাসন, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্বে বিরোধী দলের সদস্যদের রাখতে আলোচনা হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের প্রসঙ্গে সারোয়ার তুষার বলেন, এনসিপি এই প্রস্তাবের পক্ষে। তবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া সংবিধানের ছোট সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা রাখার প্রয়োজন নেই। কোন ধারায় গণভোটের বাধ্যবাধকতা থাকবে, সেটাও সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে মত দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের ভোটের কথা বলেছে। এনসিপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সারোয়ার তুষার বলেন, ভোটারের আওতা আরও বাড়ানো জরুরি। সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদেরও ভোটার হিসেবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
এনসিপির পক্ষ থেকে বৈঠকে যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ছাড়াও অংশ নেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জাবেদ রাসিন ও আরমান হোসাইন। এর আগে সকালে বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা তুলে দেন এনসিপির প্রতিনিধিরা।
সকালে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করতে এই আলোচনা কার্যকরী হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
এনসিপির দেওয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সেই পথরেখা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আশা করছি, এই পথরেখা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাও এগিয়ে যাবে।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেয় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।