ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আজ শনিবার ভোর থেকে পাল্টা হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতের বিয়াস অঞ্চলে ‌‘ব্রাহ্মোস মিসাইলের সংরক্ষণাগার উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। ভারতের আরও কিছু স্থাপনাতেও হামলা চালানো হচ্ছে। পাকিস্তান জবাব দিচ্ছে। ভারত যেসব ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের নাগরিক ও মসজিদের ওপর হামলা চালিয়েছে, সেসব জায়গা আমাদের পাল্টা হামলার মূল লক্ষ্য। খবর-বিবিসি 

পাকিস্তান জানিয়েছে, তিন বিমানঘাঁটিতে হামলার পাল্টা জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। দেশটি এই পাল্টা হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’। আরবি শব্দ বুনইয়ান–উন–মারসুস –এর অর্থ হলো ‘সুদৃঢ় প্রাচীর’।

পাকিস্তানের তিন বিমানঘাঁটিতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারত আমাদের দেশ, জনগণ ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাই আমরা এই জবাব দিয়েছি।’ এ হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে উত্তর ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগারসহ একাধিক স্থাপনাকে।

এর আগে পাকিস্তান অভিযোগ করেছিল, শনিবার সকালেই ভারত তিনটি বিমানঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালিয়েছে, যার একটি রাজধানী ইসলামাবাদের কাছেই। তবে পাকিস্তান বলেছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ মিসাইল সফলভাবে প্রতিহত করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে হামলা করার এই অভিযোগ আনার কিছুক্ষণ পরই এই পাল্টা আক্রমণ চালাল পাকিস্তান। 

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতের বিয়াস অঞ্চলে ‘ব্রাহ্মোস মিসাইলের সংরক্ষণাগার উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। ব্রাহ্মোস হচ্ছে দীর্ঘ পাল্লার সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। দেশটির সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তারা ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটি এবং ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। 

অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছে, ভারতকে এখন পাকিস্তানের জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী মাতৃভূমি, আকাশসীমা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

তবে ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এই ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খুব শিগগিরই গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবে ভারতের সেনাবাহিনী। দীর্ঘদিনের কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে বুধবার থেকে প্রতিদিনই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে দুই প্রতিবেশী। ভারত বুধবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোর পর থেকেই উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেখানে সাইরেন বাজানো হয়েছে। গত রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক টিভি বিবৃতিতে বলেন, ভারত বিমান থেকে সারফেস মিসাইল নিক্ষেপ করেছে…লক্ষ্যবস্তু ছিল নুর খান ঘাঁটি, মুরীদ ঘাঁটি ও শোরকোট ঘাঁটি। এই বিমানঘাঁটিগুলোর একটি রাজধানী ইসলামাবাদের ঠিক বাইরে রাওয়ালপিন্ডিতে, অন্য দুটি ঘাঁটি পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবে—যা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা।

প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়েছেন বলে দুই দেশের পক্ষ থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জনদুর্ভোগ এড়াতে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ইন্টারপোল তো আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে না! এক্ষেত্রে তারা (ইন্টারপোল) তাদের আইন-কানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’

এ সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন,  ‘প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জেলা ডিএসবির আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দাবি-দাওয়ার বিষয়ে রাস্তায় আন্দোলন করলে জনদুর্ভোগ হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়।’

এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করার জন্য সাংবাদিকদের সাহায্য চান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার যমুনার সামনে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে বলার পর তারা শাহবাগে গেছেন। সেখানেও দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে তারা ইমার্জেন্সিগুলো দেখছেন।

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাতভর অবস্থান এবং মিন্টো রোডের মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। পরে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তারা ‘শাহবাগ ব্লকেড’ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

একই দাবিতে আজ বেলা তিনটায় শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের জুলাই অভ্যুত্থানের স্থানগুলোতেও গণজমায়েত কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ