কারও দল গোছানো জন্য নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে না: নজরুল ইসলাম খান
Published: 16th, May 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কারও দল গোছানোর জন্য সময় দরকার হতে পারে। কারও বন্ধু জোগাড় করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সে কারণে জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান এ কথাগুলো বলেন।
গত আগস্টে ঘোষিত এক দফা আন্দোলনের একটি ধাপ ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাঁদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। অনেক তরুণ আছে, যাঁদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন বহু বছর আগে, তবু আজ পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা চান, এই অধিকার প্রয়োগ করতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে। এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকার আদায়ের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারাবরণ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, তাঁরা বলেছেন, লেবার পার্টি বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। তাহলে প্রশ্ন, যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বলুক, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট গ্রহণে কোনো বাধা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। প্রশ্ন হলো, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন?’
সংস্কারের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭৬-৭৭ সালেই জিয়াউর রহমান ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে খালেদা জিয়া দিয়েছেন ২০৩০ ভিশন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা, আর ২০২৩ সালে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষের অংশগ্রহণে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বিপক্ষে না, বরং শতভাগ সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কার একটি প্রক্রিয়া। পরিবর্তনের দুটি পথ—একটি বিপ্লব, অন্যটি সংস্কার। বিপ্লব ঘটে হঠাৎ করে, আর সংস্কার হয় সবার সম্মতিতে, ধাপে ধাপে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি প্রস্তাবের কথা শোনা যাচ্ছে, যেখানে মে মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বোঝাপড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জুনের মধ্যেই একটি সনদ তৈরি হতে পারে, যেটিতে সব দল স্বাক্ষর করবে। তাৎক্ষণিক যেসব সংস্কার সম্ভব, তা আইনের মাধ্যমে কার্যকর হবে। সংবিধান সংশোধন দরকার—এমন বিষয়গুলো নতুন সংসদে তোলা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই পুরো কাজ যদি জুনেও শেষ না হয়, জুলাইয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে অসুবিধাটা কোথায়?’
জনগণের নির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো পদ্ধতি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। তাই গণতন্ত্রই আমাদের একমাত্র পথ। আমাদের সহযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন এই গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য। সেই পরিবর্তনের পথেই আমাদের এগোতে হবে।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় ড স ম বর জনগণ র র জন য কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যত বাধাই আসুক জনগণ তা প্রতিহত করবে। এটাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সরকারের বৈধতা ও জনগণের সামাজিক চুক্তি।
বুধবার (১ অক্টোবর) সকালে ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঝিনাইদহ ডায়াবেটিস হাসপাতাল চত্বরে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
বিসিবি নির্বাচন করবেন না তামিম
দোকানের ঠিকানায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ‘যোগ্য’ তালিকায় ‘ইসিয়া’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, অনেকেই বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আপনাদের বলতে চাই, ২০০৯ সাল থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজনৈতিক হামলা মামলার শিকার হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ গুম হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিদায়ে সাংবিধানিক সকল পথ যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন দেশের ছাত্র-জনতা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ছাত্র-জনতার এই বিজয় দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ উন্মুক্ত করেছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিই বর্তমান সরকারের বৈধতা দিয়েছে। জনগণ এই সরকারকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর যত সভ্যতা আছে, সকল সভ্যতায় যেসব সরকার অতীতে গঠিত হয়েছে, তার মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে বৈধ সরকার। যারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল, তারা আগামী নির্বাচন বানচালে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ, ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতির সহ-সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
ঢাকা/সোহাগ/রফিক