বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কারও দল গোছানোর জন্য সময় দরকার হতে পারে। কারও বন্ধু জোগাড় করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সে কারণে জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান এ কথাগুলো বলেন।

গত আগস্টে ঘোষিত এক দফা আন্দোলনের একটি ধাপ ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাঁদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। অনেক তরুণ আছে, যাঁদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন বহু বছর আগে, তবু আজ পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা চান, এই অধিকার প্রয়োগ করতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে। এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকার আদায়ের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারাবরণ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, তাঁরা বলেছেন, লেবার পার্টি বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। তাহলে প্রশ্ন, যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বলুক, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?

নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট গ্রহণে কোনো বাধা নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। প্রশ্ন হলো, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন?’

সংস্কারের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭৬-৭৭ সালেই জিয়াউর রহমান ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে খালেদা জিয়া দিয়েছেন ২০৩০ ভিশন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা, আর ২০২৩ সালে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষের অংশগ্রহণে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বিপক্ষে না, বরং শতভাগ সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কার একটি প্রক্রিয়া। পরিবর্তনের দুটি পথ—একটি বিপ্লব, অন্যটি সংস্কার। বিপ্লব ঘটে হঠাৎ করে, আর সংস্কার হয় সবার সম্মতিতে, ধাপে ধাপে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি প্রস্তাবের কথা শোনা যাচ্ছে, যেখানে মে মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বোঝাপড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জুনের মধ্যেই একটি সনদ তৈরি হতে পারে, যেটিতে সব দল স্বাক্ষর করবে। তাৎক্ষণিক যেসব সংস্কার সম্ভব, তা আইনের মাধ্যমে কার্যকর হবে। সংবিধান সংশোধন দরকার—এমন বিষয়গুলো নতুন সংসদে তোলা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই পুরো কাজ যদি জুনেও শেষ না হয়, জুলাইয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে অসুবিধাটা কোথায়?’

জনগণের নির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো পদ্ধতি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। তাই গণতন্ত্রই আমাদের একমাত্র পথ। আমাদের সহযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন এই গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য। সেই পরিবর্তনের পথেই আমাদের এগোতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় ড স ম বর জনগণ র র জন য কম ট র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, “আজ এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা চলছে। আলোচনার বিস্তারে না গিয়ে আমি শুধু এতটুকুই বলব-আমরা বলেছি, লেবার পার্টি বলেছে, যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। আমি এখানে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে প্রশ্ন রাখতে চাই-যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা শুধু বলুন, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?”

শুক্রবার (১৬ মে)  জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে গত আগস্টে ঘোষিত এক দফার একটি পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অনেক তরুণ আছেন, যাদের বয়স কম, কিন্তু ভোটার হয়েছেন অনেকদিন আগে-তবুও আজ পর্যন্ত তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তারা সেই অধিকার প্রয়োগ করতে চায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে চায়।এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার।এই অধিকার অর্জনের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারারুদ্ধ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।”

আরো পড়ুন:

পাবনায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, ২৩ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

বিদেশে পালানোর সময় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আটক

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অসুবিধাই থাকার কথা নয়।অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো ১৯৭৬-৭৭ সালেই ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ২০৩০ ভিশন দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটি সমৃদ্ধ করে, আন্দোলনে যুক্ত সবার অংশগ্রহণে ২০২৩ সালে আমরা ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি ঘোষণা করি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই, আমরা পরিপূর্ণভাবে সংস্কারের পক্ষে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে-সংস্কার কি একবারেই সম্পন্ন করার বিষয়? পরিবর্তনের দুটি পথ-একটি বিপ্লব, অন্যটি সংস্কার। বৈপ্লবিক পরিবর্তন দ্রুত ঘটে যায়, আর সংস্কার হয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সবার সম্মতিতে-বিশেষ করে যারা স্টেকহোল্ডার। কারো দল গোছানোর জন্য সময় দরকার, কারো বন্ধু জোগাড় করার জন্য সময় দরকার।কিন্তু তার জন্য জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে-এটা হতে পারে না।”

তিনি বলেন, “অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানিয়েছেন, মে মাসের মধ্যেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে কোন কোন প্রস্তাবে সব দল একমত এবং কোন কোন প্রস্তাবে ভিন্নমত রয়েছে। যদি মে মাসের মধ্যেই এই বোঝাপড়া স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জুন মাসের মধ্যেই তা সংকলন করে একটি সনদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব-যাতে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করবে, একমত হবে। যেসব সংস্কার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা আইনের বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে; যেগুলোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন দরকার, তা নির্বাচিত সংসদে হবে।এই কাজ যদি জুনের মধ্যেও সম্ভব না হয়, জুলাইয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হলো-ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধাটা কোথায়?”

তিনি আরো বলেন,“জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে, কিন্তু এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমাদের এই পথেই এগোতে হবে—জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের সাথীরা, যারা জীবন দিয়েছেন, তারা এই গণতন্ত্রের জন্যই জীবন দিয়েছেন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য জীবন দিয়েছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের সামনে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হবে। আর যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, অবহেলা করবে, তাদের প্রতিস্থাপনের ক্ষমতাও থাকবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই। আমরা সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই যুক্ত হতে চাই।”

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা/এম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেছে নয় মাসের অধিক, এখনো গণতন্ত্র ফিরে আসেনি: বিএনপি নেতা আজিজুল বারী
  • সরকার জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করছে: ফরহাদ মজহার
  • ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
  • কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত
  • রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রতিস্থাপনই মূল সংস্কার
  • শাহরিয়ার হত্যায় ক্ষোভ, এমন বর্বরতা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন
  • গণতন্ত্রই অধিকার নিশ্চিতের একমাত্র পথ: আলী রীয়াজ
  • আ. লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে আগেই অনুরোধ করেছিলাম: আহমেদ আযম খান
  • বাংলাদেশের বিরোধিতাকারীদের আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না: গণতন্ত্র মঞ্চ