এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিসে ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এক পক্ষ ঈদে যানজট এড়ানোসহ নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। আরেক পক্ষ বলছে, শুধু ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাসের তিনভাগের একভাগ সময় বন্ধ রাখা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। রোজার ঈদ উপলক্ষে দুই মাস আগে ৯ দিন বন্ধ ছিল সব কিছু।
জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আমাদের দেশে মানুষ এত বেশি গ্রামে যায় যে, সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তিন দিনের ঈদের ছুটিতে এক দিনে অনেক মানুষ বের হওয়ার চেষ্টা করলে, যাত্রাপথে ভোগান্তি হবেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দে বাধা হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি যেন সহজ হয়, সে চেষ্টা করতে উপদেষ্টা পরিষদ ঈদের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছুটি একটু বেশি হলে মানুষের হাতে বিকল্প থাকবে। তখন যার যার সুবিধা মতো আসা-যাওয়া করতে পারবে। টানা বেশি দিন বন্ধ থাকলেও লাভ আছে। প্রত্যেক পেশাজীবীর বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রাম নিয়ে তারা নবউদ্যমে কাজে নামতে পারে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে ৭ জুন, শনিবার। সরকারি ছুটি শুরু হবে ৫ জুন বৃহস্পতিবার, শেষ হবে ১৪ জুন শনিবার। ঈদুল আজহায় সাধারণত তিন দিন ছুটি থাকত। অন্তর্বর্তী সরকার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছুটি বাড়িয়ে দেয়। সে অনুযায়ী এবারের ঈদুল আজহায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল ছয় দিন। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। অবশ্য ঈদের ছুটি শুরুর আগে আজ শনিবার ও ২৪ মে শনিবার সব সরকারি অফিস খোলা থাকছে।
যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়ানো হয়েছে ছুটি
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, কোরবানির ঈদে একটি অতিরিক্ত সমস্যা আছে। রাস্তার পাশে গরুর হাট বসে। দেশের সব মানুষের সুবিধার জন্য এবার ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে ঈদের আগে দুই শনিবার অফিস খোলা থাকবে। তিনি আরও বলেন, ঈদে ছুটি না থাকলেও অনেকে অফিসে আসেন না। অযথা অফিস খোলা থাকে। জনগণও সেবা পায় না। তিনি বলেন, তবে জরুরি সব সেবা খোলা থাকবে। যেমন– কোরবানির সময় যারা কাজ করেন, তারা সবাই কাজে থাকবেন। অফিস বন্ধ থাকবে; কিন্তু মাঠে কাজ করবেন। আসলে তারা বাইরে অফিস করবেন। যাত্রা নির্বিঘ্ন ও দুর্ঘটনা কমাতে আগেই এমন প্রস্তাব ছিল। সেই প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, ঈদে দীর্ঘ ছুটিতে অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি। তবে নিশ্চিত করতে হবে, সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের যেন কোনো সমস্যা না হয়। আর ছুটি থাকলেও জরুরি কাজ চলবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বন্দর খোলা থাকবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জরুরি প্রয়োজনে ঈদের দিনেও কাজ করে। তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে প্রায় ১৫ দিন ছুটি থাকে। ওই সময় জরুরি কাজ ছাড়া অন্য কিছু করা হয় না। আমাদের দেশের মানুষও ঈদের ছুটিতে গ্রামে যেতে চায়।
ছুটি বাড়ানোর আলোচনা ছিল ২০১৫ সালে
ঈদের ছুটি নিয়ে গত ১০ বছর ধরে আলোচনা চলছে। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বরের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এজেন্ডায় ছিল পরের বছরের ছুটির তালিকা অনুমোদনের বিষয়টি। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২০১৬ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন করার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চান। তখন প্রায় সব মন্ত্রী ছুটি বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। যুক্তি ছিল, মানুষ শহর ছেড়ে বের হওয়ার ঝক্কিঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে। সড়কের ওপর চাপ কমবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। মানুষও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করে কর্মস্থলে ফিরতে পারবে। তিন দিনের ছুটি বাড়িতে যেতে-আসতে শেষ হয়ে যায়। ওই সময় আলোচনায় উঠে আসে চীনের বসন্ত উৎসবের কথা। চীনা নববর্ষ এবং বসন্ত উৎসবে টানা ১৫ দিন ছুটি দেওয়া হয়। আর ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে ক্রিসমাসের ছুটিও প্রায় দুই সপ্তাহের।
এর পরও একাধিকবার ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, নৈমিত্তিক ছুটি ২০ থেকে কমিয়ে ১৪ দিন করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে তিন দিন করে সমন্বয় করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঈদের সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল হবে।
এ ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটির সঙ্গে দু’দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটির প্রস্তাব করা হয়। ঈদে ছুটি বাড়ানো হলে মোট ছুটির সময় ঠিক থাকবে। ফলে সরকারি কাজের জন্য সময় কমবে না। এতে সরকারি কাজেরও ক্ষতি হবে না। অন্য ধর্মের মানুষের জন্যও ছুটির ভারসাম্য থাকবে।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর বলেন, লম্বা ছুটি সবার জন্য ভালো। কর্মমুখী মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে। কম ছুটিতে অনেকের কষ্ট হয়। ছুটি বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের।
১০ দিনের ছুটি ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে
এসিআই মোটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী সমকালকে বলেন, ছুটির ১০ দিন যদি ব্যাংক বন্ধ থাকে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সেটা হলে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। এ ছাড়া আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। কৃষিপণ্য সরবরাহ করতেও সমস্যা হবে। ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, গতবার ঈদের আগেই পণ্যগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল, সে জন্য পুনরুদ্ধার করা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ঈদ র ছ ট ব র ঈদ দ ন কর র ঈদ ল র জন য ক জ কর ১০ দ ন মন ত র সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
পাঠাও নিয়ে এলো ‘চলো দেশি ভাইবে-এ’ ক্যাম্পেইন
বাংলাদেশের মানুষের হাত ধরে তৈরি বহুল জনপ্রিয় দেশীয় ব্র্যান্ড ‘পাঠাও’ এবার নিয়ে এল ‘চলো দেশি ভাইবে-এ’ ক্যাম্পেইন। ১৪ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে চলবে এই উৎসব, যেখানে পাঠাও দিচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট, ফ্রি ডেলিভারি, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গিফট জেতার সুযোগসহ অনেক আকর্ষণীয় অফার।
মে মাসজুড়ে পাঠাও ব্যবহারকারীরা রাইড এবং ফুডের ওপর সর্বমোট ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট উপভোগ করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘পাঠাও বাইক’-এ ৩টি রাইডে মোট ৩০০ টাকা ডিসকাউন্ট (প্রতি রাইডে ১০০ টাকা করে), ‘পাঠাও কার’-এ ৩টি রাইডে মোট ৩০০ টাকা ডিসকাউন্ট (প্রতি রাইডে ১০০ টাকা করে) এবং ‘পাঠাও ফুড’-এ পাঁচটি অর্ডারে সর্বমোট এক হাজার টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট, প্রতি অর্ডারে ২০০ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট।
এ ছাড়া ‘পাঠাও কার’ ইন্টারসিটি রাইডে রয়েছে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। সঙ্গে থাকছে প্রতিদিন নতুন অফার, সারপ্রাইজ ফ্ল্যাশ ডিলসহ আরও অনেক কিছু।
‘চলো দেশি ভাইবে-এ’ ক্যাম্পেইনে পাঠাও অ্যাপে প্রতিটি লেনদেনে পাওয়া যাবে ডাবল পাঠাও পয়েন্টস, মানে প্রতিটি অর্ডার বা রাইডেই আপনার পয়েন্ট বাড়বে দ্বিগুণ!
উৎসবের আনন্দ আরও বাড়াতে পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসেও থাকছে দারুণ অফার। ফ্রি ডেলিভারির পাশাপাশি পাঠাও বাইক, কার ও ফুড-এর কুপন, পার্টনার ব্র্যান্ডদের ডিসকাউন্ট এবং লাকি ইউজারদের জন্য রয়েছে মেগা ভাউচার ও স্পেশাল পুরস্কার।
‘পাঠাও শপ’-এ পেয়ে যাবেন হেডগিয়ার এর মতো দেশীয় পছন্দের ব্র্যান্ড থেকে পাঠাও-এর কোলাবরেশনে দেশি মার্চেন্ডাইজ।
আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে ‘বিগ বক্স’। এতে থাকবে একটি পাবলিক উইশবোর্ড, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাঁদের সব ইচ্ছা লিখতে পারবেন। এই উইশবোর্ড থেকে নির্বাচিত ১০ জন ভাগ্যবান ব্যবহারকারীর ইচ্ছা পূরণ করবে ‘পাঠাও’!
দেশি আনন্দকে আরও জমজমাট করতে ‘পাঠাও’ নিয়ে আসছে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ কুইজ গেম। ‘পাঠাও কার’-এর ফ্ল্যাপে এবং বিগ বক্স-এর পাশে থাকবে একটি কিউআর কোড। স্ক্যান করলেই পাওয়া যাবে মজার মজার প্রশ্ন। সঠিক উত্তর দিলেই পাবেন পয়েন্ট, আর সেই পয়েন্ট দিয়ে থাকবে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের উপহার জেতার সুযোগ।
ক্যাম্পেইনটি প্রসঙ্গে পাঠাও–এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (মার্কেটিং) আবরার হাসনাইন বলেন, দেশি অ্যাপ হিসেবে পাঠাও ১০ বছর ধরে আমাদের দেশের মানুষের প্রয়োজনগুলো মেটানোর চেষ্টা করে আসছে। ‘চলো দেশি ভাইবে-এ’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা সেলিব্রেট করছি আমাদের দেশি প্রাইড, কালচার আর একসঙ্গে থাকার আনন্দ। যা ফুটে উঠছে আমাদের রাইড শেয়ারিং, ফুড আর প্রোডাক্ট ডেলিভারিসহ প্রতিদিনের ছোট ছোট গল্পগুলোতে।
‘চলো দেশি ভাইবে-এ’ হলো দেশীয় প্রাইড আর একসঙ্গে উদ্যাপনের আনন্দ। এই মে মাসে রাইড দিন, খাবার অর্ডার করুন, প্রিয়জনকে পার্সেল পাঠান, আর পাঠাও-এর সঙ্গে চলুন দেশি ভাইবে।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পাঠাও’ এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, যা অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি সবার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি এবং ই-কমার্স লজিস্টিকসে পাঠাও শীর্ষস্থানে রয়েছে। ১০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী, ৩ লাখ ড্রাইভার ও ডেলিভারি এজেন্ট, ২ লাখ মার্চেন্ট এবং ১০ হাজার রেস্টুরেন্ট নিয়ে পরিচালনা করছে পাঠাও। প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশে ৫ লাখেরও বেশি কাজের সুযোগ তৈরি করেছে, যা দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।