পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টি, শেরপুরের নদীর পানি বিপৎসীমায়
Published: 20th, May 2025 GMT
ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা চার দিনের টানা বৃষ্টিপাতে শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার (১৯ মে) রাত ১০টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এ তথ্য জানায়।
তবে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০ টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অন্য নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আগাম বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। তবে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা সবচেয়ে বেশি পানির চাপে রয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১০ টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি নকুগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৯৭ সেন্টিমিটার নিচে, ভোগাই নদীর নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫৭ সেন্টিমিটার নিচে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ৬৮৭ সেন্টিমিটার মিটার নিচে এবং চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এখনো জেলায় আট শতাংশ ধান কাটা বাকি রয়েছে। এছাড়াও কেটে নেওয়া অনেক ধান মারাই হয়নি। অনেক কৃষকের খড় এখনো কাঁচা। টানা বৃষ্টিপাতে অনেকের কেটে নেওয়া ধান ও খড় বৃষ্টির পানিতে পচে যাচ্ছে। ক্ষেতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ধান কাটতে সময় বেশি লাগায় শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু নিচু এলাকায় পানিতে জোঁকের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়ে পানিতে নামতে পারছেন না কৃষক।
এ ব্যাপারে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে ৯২শতাংশ ধান কর্তন হয়ে গেছে। গতকাল জেলার তিনটি উপজেলায় নিজে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। বৃষ্টির জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ক্ষেতে নামানো যাচ্ছেনা। কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে ইতোমধ্যেই মাইকিং করা হয়েছে। আশাকরি এক সপ্তাহের মধ্যেই সব ধান কাটা শেষ হবে। ’’
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মো আশরাফুল আলম বলেন, ‘‘আমরা ইতোমধ্যে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সাথে জরুরি সভার আয়োজন করেছি। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। অতি দ্রুতই পেয়েও যাবো। এছাড়াও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে বসে বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’
ঢাকা/তারিকুল/টিপু
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নোবেল: গলায় সুর, জীবনে চার্জশিট
গলায় যেন সুর নয়, আগুন, চোখে স্বপ্নের স্ফুলিঙ্গ। বলছি, মাইনুল আহসান নোবেলের কথা। কোনো পুরস্কার নয়, বরং নিজেই এক প্রতিশ্রুতির নাম। তার গাওয়া ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি শুনে অনেকে বলেছিলেন— “নতুন জেমস এসে গেছে।” দুই বাংলার মানুষ যখন তার কণ্ঠের জাদুতে উন্মাদ, তখন কেউ ভাবতেও পারেননি, সেই নাম একদিন জায়গা করে নেবে থানার ডায়েরি, চার্জশিট আর নারীর কান্নায়!
তার গল্পটা যেন ঢালিউডের কোনো বাজে ফ্লপ সিনেমা— শুরুতে বাজেট কম, মাঝখানে কিছু উত্তেজক দৃশ্য, আর শেষে থানা-পুলিশ। এটা কোনো শিল্পীর জীবন নয়, বরং এক জোকারের আত্মজৈবনিক স্ক্রিপ্ট— যেখানে গান মানে শো শুরু হওয়া, আর গ্রেপ্তার মানেই পর্দা নামা।
নোবেল যেন সেই ট্র্যাজিক শিল্পীচরিত্র, যে অহংকারে নিজের শেষ অধ্যায়টাও নিজেই লিখে ফেলেন। জি বাংলার মঞ্চে ছিল তার সূর্যোদয়, কিন্তু আলোয় নয়— সরাসরি আগুনে। ভারতের জাতীয় টেলিভিশনে যখন এক বাংলাদেশি তরুণের গান শুনে কোটি বাঙালির চোখে জল, তখন মনে হচ্ছিল, এই তো শিল্পের জয়। তার গলায় ছিল দেশপ্রেম, প্রতিবাদ আর প্রেম। কিন্তু সেই সুর কোথায় হারিয়ে গেল? কেন তিনি গানের মঞ্চ থেকে নেমে এলেন কাঁটাতারে মোড়া বিতর্কের ভিড়ে?
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার নোবেল, যা বললেন প্রাক্তন স্ত্রী
পরিস্থিতি-ব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: বাঁধন
নোবেল বলেছিলেন— প্রিন্স মাহমুদের ‘বাংলাদেশ’ গানটাই জাতীয় সংগীত হওয়া উচিত। তিনি বোঝেননি—জাতীয় সংগীত কেবল গান নয়, এটি একটি জাতির আত্মা। সেই আত্মায় আঘাত করে হয়তো আলো খুঁজতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফিরে পেলেন শুধুই আগুন।
কভার গান দিয়ে বিখ্যাত নোবেল নিজের গানে অনুপস্থিত। কখনো গাইলেন সামসুল হকের কথায়, কখনো লালনের ভাষা। কিন্তু নিজের লেখা বা সুরে একটি গান দিয়েও মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা তৈরি করতে পারলেন না। জনপ্রিয়তা এলো, কিন্তু স্থায়িত্ব পেল না। হঠাৎ পাওয়া খ্যাতির ঢেউ তাকে এমন এক ঘূর্ণিতে ফেলল, যেখান থেকে ফিরে আসতে হলে দরকার বিনয়, ধৈর্য ও শিল্পসাধনা। কিন্তু তিনি বেছে নিলেন বিতর্ক, অহংকার আর আত্মবিনাশ।
নারী, নেশা আর নষ্ট আলোর পেছনে ছুটেচলা এক ভাইরাল শিল্পীর নাম নোবেল। পতনের গল্প সবসময়ই নাটকীয়। আর তারটা যেন রীতিমতো থ্রিলার! এক কিশোরী ফেসবুকে তাদের সম্পর্কের বিবরণ প্রকাশ করে দিল, সঙ্গে নগ্ন ছবি। পরের অধ্যায়ে এক তরুণীর অভিযোগ, সাত মাস আটকে রেখে ধর্ষণ! যেন গানের নায়ক হয়ে উঠলেন সিনেমার খলনায়ক।
নারীলোভী এই শিল্পী একাধিক অনৈতিক সম্পর্ক, দাম্পত্য কলহ ও মাদকাসক্তির কারণে প্রায়ই বিতর্কে থাকেন! ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন নোবেল। সেই সংসারও টেকেনি। কারণ হিসেবে উঠে আসে তার মাদকাসক্তি। ২০২৩ সালের শেষ দিকে আবার বিয়ের খবরে শিরোনামে আসেন। সাবেক স্ত্রী সালসাবিল বলেন, “নোবেল মাদকাসক্ত”। একটি সম্পর্কের ভাঙন নয়, যেন এক সময়ের সম্ভাবনাময় কণ্ঠের ছিন্ন স্বর।
নোবেল ভুলে গিয়েছিলেন, শিল্পী মানে কেবল তারকা হওয়া নয়। তারকা হওয়া মানে আলোয় থাকা, আর শিল্পী হওয়া মানে সেই আলো নিজেই সৃষ্টি করা। তিনি খুঁজেছিলেন শর্টকাট— গান না গেয়ে কভার, শ্রোতা না গড়ে ফলোয়ার, আর সৃষ্টির বদলে স্ক্যান্ডাল।
ফেসবুক লাইভ, ইউটিউবে অদ্ভুত স্টেটমেন্ট, গড়গড় শব্দে ধোঁয়াশা ছড়ানো বাক্য— সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন ভাইরাল পুরুষ। কিন্তু ভাইরাল জ্বর যেমন সহজে আসে, তেমনি চলে যায়। আর তার সংগীতজীবনও ঠিক সেভাবেই বিলীন হয়ে গেল সময়ের ধুলিতে।
সে ফিরবে কি না— তা কেউ জানেন না। কিন্তু নোবেলের গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয়, গলার জোর থাকলেই শিল্প হয় না, দরকার হৃদয়, বোধ আর মানসিক ভারসাম্য। আলোচনায় নয়, শিল্পী খুঁজে নেয় শিকড়ের মাটি। আর নোবেল সেই শিকড় নিজেই বারবার কেটে দিয়েছেন।
নোবেলের জীবনে গানের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে গ্ল্যামার, বিভ্রান্তি আর বিকৃতি। তবুও যারা শিল্প ভালোবাসেন, জানি— একটি ভাঙা প্রতিভাও কোনো একদিন চোখে জল এনে দিতে পারে। কিন্তু সেই জল যেন এখন আর সুরে নয়, বরং এক নিঃশব্দ আক্ষেপেই ঝরে পড়ে। যদি শিল্প না বুঝে শিল্পে নাম লেখান, তাহলে গলায় সুর থাকবে, কিন্তু মুখে থাকবে শুধুই মামলা নাম্বার।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত