মানিকগঞ্জে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. অন্তর মিয়া (৩৩)। এ সময় তাকে অন্যের থুথু চেটে খেতে বাধ্য করেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. নবীন (৩৫)। 

সোমবার (১৯ মে) দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নবীনের ব্যক্তিগত অফিসে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। মারধরে আহত সেই চালক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

অন্তর মিয়া মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালা গ্রামের মৃত বাবু মিয়ার ছেলে। তিনি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জ-সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক সড়কে অটোরিকশা চালান। 

অভিযুক্ত নবীন যুবদল নেতা পরিচয় দিলেও ওই সংগঠনে তার কোনো পদ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তুহিনুর রহমান তুহিন। নবীন ছাত্রদলের সাবেক নেতা। 

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিবহনের একাংশ (সিএনজি স্ট্যান্ড) নিয়ন্ত্রণ করছেন নবীন। এর অংশ হিসেবে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, সিরিয়াল বাণিজ্য‌ এবং পরিবহন সংগঠনের নামে জিপি আদায় করছেন তিনি। এসব কাজের জন্য গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী বাহিনী। 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ১০ হাজার টাকা চাঁদার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশাচালক অন্তরকে চাপ দিচ্ছিলেন নবীন। ১৮ মে অন্তরকে ফোন দিয়ে পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে চাঁদার টাকা নিয়ে নবীনের ব্যক্তিগত অফিসে আসতে বলা হয়। সময়মতো টাকা নিয়ে না আসায় অন্তরকে পুনরায় ফোন দিয়ে গালিগালাজ করা হয় এবং সিএনজি অটোরিকশার মালিককে সঙ্গে নিয়ে অফিসে দেখা করতে বলা হয়। অন্তর দুপুর দেড়টায় অটোরিকশার মালিকসহ নবীনের অফিসে উপস্থিত হন। ঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়া এবং চাঁদার টাকা না দেওয়ায় নবীন ও তার অনুসারীরা অন্তরকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে থুথু ফেলে অন্তরকে দিয়ে তা চাটানো হয়। এরপর তা পানি দিয়ে গিলে খেতে বাধ্য করা হয়। 

ভুক্তভোগী অন্তর মিয়া বলেছেন, “মাঝে-মধ্যেই আমার কাছে চাঁদার টাকা দাবি করে। আমি গরিব মানুষ, ভাড়ায় গাড়ি চালাই। অনেকবার তারে আমি বলছি, ভাই আমার পক্ষে এত টাকা একসাথে দেওয়া সম্ভব না। আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে লোকজনের সামনে রড দিয়ে হাত বেঁধে পিটাইছে। আমার গাড়ির মালিক তার কাছে আমার হয়ে মাফ চাইছে, চাঁদার টাকাও দিতে রাজি হইছে, তার পরেও মাইর থামায় নাই। আরেকজনের মুখের থুথু আমারে খাওয়াইছে সবার সামনে। মানুষের মধ্যে কি কোনো দয়া-মায়া নাই? আড়াই ঘণ্টা পর আমাকে সেখান থেকে ছাড়লে গাড়ির মালিক হাসপাতালে ভর্তি করে।”

প্রত্যক্ষদর্শী অটোরিকশার মালিক ওমর ফারুক (৪০) বলেছেন, “আয়নাঘরের মতো অবস্থা সেখানে। আমার ড্রাইভারকে দুই ঘণ্টা ধরে বেধড়ক মারধর করেছে। তাদের হাত-পা ধরে মাফ চেয়েছি। বলেছি, আর আমি ব্যবসা করব না, ওরে ছাইড়া দেন। কেউ আমার কোনো কথা শোনে নাই। রড দিয়া বেধড়ক মারছে। এর চেয়েও নৃশংস ছিল অন্যের মুখের থুথু চেটে খাওয়ানো। এখনো বিষয়টা মনে পড়লে আমার গা শিউরে ওঠে। আমি গ্রামের মানুষ। ব্যবসা করে খাই। তাদের ওই নৃশংসতার ভয়ে থানা পুলিশ করতে পারি নাই।”

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে মো.

নবীন বলেন, “পরিবহনের সিরিয়াল নিয়ে অন্য চালকদের সাথে তার (অন্তর) দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য তাকে অফিসে ডাকা হয়। পরে বিষয়টা মিটমাট হয়েছে। এর বাইরে আর তার সাথে অন্য কিছুই ঘটেনি।” 

পরিবহন নেতা না হয়ে ঝামেলা সমাধানে কেন তাকে অফিসে ডাকা হলো, তা জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি নবীন। 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদিন কায়সার বলেছেন, “দল থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, কোথাও কোনো ধরনের অনিয়ম আমাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা করে থাকলে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা সত্যতা যাচাই করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি বলেছেন, “বিএনপি তো এখনো ক্ষমতায় যায়নি। তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আচরণ যদি এমন হয়, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং আমরা সকলে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে চাই। তার আইনগত সহায়তা নিশ্চিতের জন্য আমরা সবাই তার পাশে থাকব।”

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, “আমরা এ-সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/চন্দন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন কগঞ জ পর বহন র জন য বল ছ ন ব যবস স গঠন ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ছেড়ে যাব না

‘মেয়র হওয়াই মূল লক্ষ্য নয়, পদ পেতে এ আন্দোলন না’ এ মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন। বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। পরে বিএনপির এই তরুণ নেতা তার সমর্থকদের সঙ্গে যমুনার সামনে সড়কে বসে পড়েন। এর আগে বুধবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরাসরি রাজপথে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। 

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একটা পদ নিয়েই তারা যা করলো, নির্বাচনে তারা কী করবে তা বোঝাই যাচ্ছে।’ অন্তর্বর্তী সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্নের আহ্বান জানান বিএনপির এ তরুণ নেতা।  

ইশরাক বলেন, ‘নতুন একটি দল নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সরকারের দু’জন উপদেষ্টা মদদ দিচ্ছেন, যেন বিএনপি নির্বাচনে আসতে না পারে, নির্বাচন করতে না পারে। এ অবস্থায় আসিফ মাহমুদকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আরেক উপদেষ্টাকেও পদত্যাগ করতে হবে।’

এ উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা পদত্যাগ করে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করুক। এই সরকারের মধ্যে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, কোনোদিনও শপথ নেওয়ার উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আমার প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে, রায় পেয়েও আমি বসতে পারিনি। তাই এটা কোনো একজনের পদের আন্দোলন নয়, জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন।

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন ছেড়ে কেউ যাব না।’

নির্বাচন কমিশনকে জিম্মি করা হচ্ছে উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, এটার রায় মেনে নিতে হবে।

ইশরাকের মতে, নির্বাচন কমিশনকে জিম্মি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে কি এই ইসি নিরপেক্ষতা রাখতে পারবে? আমরা আরেকটা স্বৈরাচারের জন্ম এই বাংলার মাটিতে হতে দেব না। 

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি হয়, তবে যেকোনো সময় শেখ হাসিনার পরিণতির মতো উচিত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ