অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে লড়াই করতে শেখায় আশুরা: জিএম কাদ
Published: 6th, July 2025 GMT
আশুরা মানেই শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা। আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করতে শেখায় আশুরা।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে কারবালার মাঠে পরিবারসহ ইমাম হোসাইনের জীবন দেওয়ার ত্যাগ সমুজ্জল হয়ে থাকবে।’’
আরো পড়ুন:
২৮ জুন বিকল্প স্থানে কাউন্সিলের আহ্বান শীর্ষ নেতাদের
বাজেট পর্যালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাপা
শোকাবহ এই দিনে বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক কারবালার মাঠে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সহচর বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। হিজরী ৬১ সালের ১০ মহররম মাসের এ দিনটিতে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছিল। এটি বেদনাবিধুর শোকাবহ ঘটনা। তারপর থেকেই দিনটি মুসলমানদের কাছে পবিত্র আশুরা বলে পরিচিত। দিনটিতে আরও অনেক ঐতিহাসিক ঘটনাবলি রয়েছে। কিন্তু তারপরও ইমাম হোসাইনের শাহাদতের স্মরণে মুসলমানরা পবিত্র আশুরার দিনটি অত্যন্ত গুরত্ব দিয়ে শোকের সঙ্গে পালন করেন।
অত্যন্ত শোকাতুর এই দিনে হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণকারী প্রত্যেক বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁদের রফয়ে দারাজাত কামনা করেছেন জিএম কাদের।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই শহীদদের সনদ সম্ভব, যোদ্ধাদের সনদ একটু কঠিন: উপদেষ্টা শারমীন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শহীদ শিক্ষার্থী নাফিসা হোসেন মারওয়ার বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে আমি নিজেও মাঠে ছিলাম। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি এক বছর হলো। এতদিনের মধ্যে আমরা তাদের কাছে যেতে পারিনি। আমরা যতটুকু অনুদান দিতে পেরেছি শহীদ নাফিসার বাবা তা পেয়েছেন। এখানে আর একজন শহীদের বাবা আছেন তিনিও অনুদান পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকে, আমরা সময়মতো শহীদদের পারিবারের কাছে পৌঁছাতে পারছি না। অনেক দেরি হলেও আপ্রাণ চেষ্টা করছি সবার কাছে পৌঁছানোর। নাফিসার বাবা ও জুলাই কন্যাদের দাবি হচ্ছে জুলাই সনদ। এখানে শহীদদের সনদ সম্ভব কিন্তু যোদ্ধাদের সনদ একটু কঠিন কারণ যোদ্ধাদের সংখ্যা অনেক।
শুক্রবার আড়াইটায় উপদেষ্টা গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকায় শহীদ নাফিসার বাড়িতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ নাফিসার বাবা আবুল হোসেন। এসময় তিনি বলেন, বেঁচে থাকতে মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার দেখে যেতে চাই। খুনিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।
নাফিসার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার এবং স্থানীয়রা। মারা যাওয়ার এক বছর পরও তার স্মৃতি আঁকড়ে কাঁদছে তার পরিবার। এ সময় উপদেষ্টাকে পেয়ে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নাফিসার মা কুলসুম বেগম পারিবারিক সমস্যার কারণে দুই মেয়েকে নিয়ে সাভারের দক্ষিণ বক্তারপুরে কোর্টবাড়ি এলাকায় চলে আসেন। এরপর তিনি মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশে পাড়ি জমান। নাফিসাকে ভর্তি করা হয় সাভারের বেসরকারি ল্যাবরেটরি কলেজে। পরে নাফিসার বাবা আবুল হোসেন নাফিসাকে টঙ্গীতে নিয়ে যান। তিনি নাফিসাকে সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। তবে নাফিসা অধিকাংশ সময়ে সাভারে মামা হযরত আলীর বাসায় থাকতেন। গত ২৮ জুলাই ধামরাইয়ে বড় মামার বাসায় আসেন। পরে ৩০ জুলাই ছোট মামা হযরত আলীর বাসায় যান। এরপর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সাভারে আন্দোলনে অংশ নিতেন।
আগস্টের ৩ তারিখ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নাফিসা। ৫ আগস্ট সকালে মামাকে জানিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গাবতলীতে যাবেন।
বিষয়টি ভেবে মামা হযরত আলী আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু নাফিস নিষেধ শোনেননি। কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর মামা নাফিসার মুঠোফোনে কল দিলে জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আছেন। তখন মামা তাকে রেডিও কলোনি হয়ে বাসায় ফিরতে বলেন। বেলা ১১টার দিকে আবার কল দিলে আর ফোন ধরেননি নাফিসা।
বেলা আড়াইটার দিকে নাফিসার ছোট বোন সাফা হোসেন কল দিলে অপরিচিত একজন কল ধরে ‘নাফিসা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন’ জানিয়ে ল্যাবজোন হাসপাতালে যেতে বলেন। বিষয়টি জানতে পেরে হযরত আলী ল্যাবজোন হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে নাফিসাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পান। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকেরা নাফিসাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আন্দোলনকারীরাসহ লাশ বাসায় নেওয়ার পথে মুক্তির মোড় এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এতে হযরত আলীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে বিকেল চারটার দিকে লাশ তার মামার বাসায় নেওয়া হয়।
রাত নয়টার দিকে সাভারে জানাজা শেষে নাফিসার মায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানির বাসায় নাফিসার ছোট ভাইয়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নাফিসার বাবা টঙ্গীর এরশাদনগরে লাশ নিয়ে নিজ বাড়ির একটি কবরস্থানে দাফন করেন।