পাঁচ টনের বেশি ওঠা নিষেধ, ব্রিজে উঠেছিল ২০ টনের কয়লাবোঝাই ট্রাক
Published: 20th, June 2025 GMT
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে নিয়ে পড়েছে কয়লাবোঝাই ট্রাক। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়নের বাঘারহাট চণ্ডিপুর বাজারের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পিরোজপুর-সন্ন্যাসী আঞ্চলিক সড়কের ওই সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেখানে পাঁচ টনের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার নোটিশ দিয়ে রেখেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। কিন্তু ট্রাকটিতে ২০ টন কয়লা ছিল বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ট্রাকটিতে করে ২০ টন কয়লা নেওয়া হচ্ছিল আরওয়ান ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায়। সেটি বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে বাঘারহাট চণ্ডিপুর বাজারের কাছের বেইলিব্রিজে উঠে। মাঝামাঝি গিয়েই পুরো ব্রিজসহ ট্রাকটি নিচের মালবাড়ী খালে পড়ে যায়।
আরওয়ান ব্রিকসের মালিক মারুফ বিল্লাহর ভাষ্য, তার ভাটার জন্য খুলনার নওপাড়া থেকে ২০ টন কয়লা ট্রাকে করে পাঠানো হয়। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দেখেও চালক ট্রাক নিয়ে সেটিতে উঠে পড়লে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তার সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জুর ভাষ্য, ওই সেতু ভেঙে যাওয়ার কলারণ ফেরিঘাট থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, একই সড়কে এমন আরও তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ আছে। এগুলো ফকিরহাট, চণ্ডিপুর মিলবাড়ী ও ১ নম্বর পাড়েরহাট ইউনিয়নের চালনায় অবস্থিত। সবগুলো সেতুই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে নির্মিত। দীর্ঘদিন আগেই এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে চলছে যানবাহন। গার্ডার বসিয়ে এসব জায়গায় সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা থাকলেও বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান বিন মুহাম্মদ আলী জানান, সওজের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কয়লাবোঝাই ট্রাকটি ওই সেতুতে উঠে পড়েছিল। সেটি ভেঙে খালে পড়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে। এ বিষয় পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পিরোজপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহম্মেদ জানিয়েছেন, তারা ট্রাকটি উঠানো ও সেতুটির সংস্কারে চেষ্টা করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ২০ টন
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে আজ শুক্রবার বিকেলে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের ৩ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের সময় বিএনপির এক পক্ষের একটি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে। এ ছাড়া আশপাশের কয়েকটি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়ার নেতৃত্বে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। দুই নেতাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী, তবে বিএনপি এখনো এই আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বেলা তিনটার দিকে শামসুদ্দীন মিয়ার সমর্থকেরা ওয়াপদার মোড় এলাকায় ও নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ধানের শীষ বাঁধা ছিল। বিকেল চারটার দিকে নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে ওয়াপদার মোড়ের দিকে এগোতে থাকেন। তখন শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা কলেজের দিকে যেতে থাকেন। উভয় পক্ষ বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে এলে পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। তবে নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এ সময় বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিব্বির আহমেদ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নাসিরুলের সমর্থকদের হামলার এক পর্যায়ে তাঁরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর নাসিরুলের সমর্থকেরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁরা ওই ভবনের নিচতলায় শামসুদ্দিন মিয়ার কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এ ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর চালান। এ সময় হামলাকারীদের হাতে রামদা, চায়নিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি আগুন নেভাতে এলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে অবস্থান নিলে ফায়ার সার্ভিস আবার এসে আগুন নেভায়।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা শামসুদ্দীন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনকে জানিয়ে আমরা ওয়াপদার মোড়ে অনুষ্ঠান করছিলাম। এ সময় নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। আমার কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় আমার ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। কার্যালয়ে থাকা খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।’
তবে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়েছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের ওপরে উঠে আমার সমর্থদের ওপর ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন আহত হন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সে হামলা করেন।’
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।