বিদায় দেন বিদায় দেন মাগো, চলছি নতুন শ্বশুরবাড়ি, বিদায় লইয়া যাব আমি শ্বশুরবাড়ি/ বিদায় দেন কন্যার মা বিদায় দেন, কন্যা যেন ভালো থাকে শ্বশুরবাড়ি, এই দোয়া চাই– বর ও কনেপক্ষের হয়ে এ গানগুলো গেয়ে থাকেন পালকি বহনকারীরা। পালকি আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও পুরোনো বাহন। পালকি কাঁধে নিয়ে বয়ে চলা ব্যক্তি কাহার বা বেহারা নামে পরিচিত। পালকি নিয়ে চলার সময় ছন্দের তালে তালে উহুম না-উহুম না শব্দ করে এগিয়ে চলেন তারা গন্তব্যের পথে।
বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রতীক এই পালকি। এক সময় পালকির যুগ ছিল। পালকি ছিল প্রধান বাহন। কালের বিবর্তে কত কিছুই না পাল্টায়। পাল্টায় সংস্কৃতি, সভ্যতা, সেই সঙ্গে পাল্টায় মানুষের জীবনধারা। এই পরিবর্তনের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় সংস্কৃতির সুপরিচিতির পুরোনো ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের অন্যতম পালকি। এক সময় জমিদার-নবাবসহ সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল পালকি। তাদের সামান্য পথ চলতেও প্রয়োজন হতো পালকির।
পালকির ব্যবহার আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে জীবন-জীবিকা ও প্রয়োজনীয়তার তাগিদে পালকি এখনও টিকে আছে কোনো কোনো জায়গায়। এমনই দেখা মেলে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী এলাকায়। বারুয়াখালী বাজারে গেলে দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় এই পালকির। বাজারে পালকি রাখা হয়েছে বর-কনে আনা-নেওয়ার কাজে। শৌখিন ব্যক্তিরা বিয়ের বাহন পালকি খুঁজে থাকেন। তাদের জন্যই বারুয়াখালীর বেহারাদের এই আয়োজন। বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন এই গ্রামের সরদারপাড়ার মানুষ। মাত্র দুই যুগ আগেও দোহার, নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার পালকি যেত এখান থেকে।
দক্ষিণ বারুয়াখালী গ্রামের মো.
বারুয়াখালী এলাকার হালেম মোল্লা জানান, বর্তমানে ২১০টির মতো পরিবারের বসবাস সরদারপাড়ায়। এক সময় এ গ্রামের কমবেশি সবাই এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পালকির ব্যবহার কমতে থাকায় পেশা বদলেছেন অনেকে। কেউ কেউ প্রবাসে কাজ করতে গেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, তিনটি পালকি বারুয়াখালী বাজারের বটতলায় রাখা আছে। কারও পালকির প্রয়োজন হলে এখানে এসে পালকির বেহারাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিয়ে যান।
পালকির মালিক দুলাল সরদার জানান, বংশপরম্পরায় তারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এক সময় পালকির ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখন পালকির ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। তার পরও শখের বশে অনেকে পালকি খোঁজেন। তাদের জন্য তারা এ সেবা চালু রেখেছেন।
আকমত সরদারের নাতি সিরাজ সরদার জানান, তাঁর দাদা প্রথম পালকি দিয়ে বর-কনেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের কাজটি করেন। ২০-২৫ বছর আগেও এই গ্রামে ১২-১৩টি পালকি ছিল। দুখু সরদার একজন বেহারা। তাঁর নিজস্ব একটি পালকিও রয়েছে। তিনি নিজে এবং অন্য তিনজন বেহারা নিয়ে পালকি চালান। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিয়ে থাকেন। ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় পালকি ভাড়া দেন। পালকির ব্যবহার কমে গেলেও নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালীতে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এখনএ পালকি টিকিয়ে রেখেছেন নিজেদের তাগিদে। সেখানে আমাদের অতীত ঐতিহ্য আজও বর্তমান। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প লক প লক র ব য এক সময় র জন য সরদ র
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর নীতিমালায় পরিবর্তন চায় ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে পিএচইডি-এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার এবং প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন–বিষয়ক সম্পাদকসহ ৯টি পদ সংযুক্তি এবং অর্থ সম্পাদক পদ বিলোপ করে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদনপত্রে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানায় শাখা ছাত্রদল।
আবেদনপত্রে নতুন করে ৯টি পদ যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল। পদগুলো হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী সম্পাদক, মিডিয়া ও যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক, দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক।
অর্থ সম্পাদক পদ বিলোপের দাবির বিষয়ে ছাত্রদল নেতারা বলেছেন, অর্থ সম্পাদক পদ বাদ দিতে হবে। কারণ, কোষাধ্যক্ষ রাখার বিপরীতে অর্থ সম্পাদক রাখা একটি পুনরাবৃত্তিমূলক পদ এবং অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক ক্ষেত্র তৈরি করে। পাশাপাশি মর্যাদার বিষয়ে একটি ব্যত্যয় ঘটানোর মতো উপলক্ষ তৈরি হয় এবং হবেও। সে ক্ষেত্রে এটি না রাখাই ভালো। পাশাপাশি কোনো বিষয়ে দ্বিমত তৈরি হলে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি তৈরি হবে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করতে জকসুতে ৯টি পদ সংযোজন করা অত্যন্ত জরুরি। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ছাত্রদল ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক’ পদ সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছে।
শামসুল আরেফিন বলেন, বিশেষ করে সংস্কৃতি, দক্ষতা উন্নয়ন, আইন ও মানবাধিকার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক পদে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া শক্তিশালী জকসু গঠন সম্ভব নয়। নীতিমালা সংস্কারের মাধ্যমে নতুন ৯টি পদ সংযোজন করতে হবে। অন্যথায় এই জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারবে না।
১৭ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ২৭ নভেম্বর এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।