Samakal:
2025-06-21@01:55:53 GMT

নবাবগঞ্জে পালকির গ্রাম

Published: 20th, June 2025 GMT

নবাবগঞ্জে পালকির গ্রাম

বিদায় দেন বিদায় দেন মাগো, চলছি নতুন শ্বশুরবাড়ি, বিদায় লইয়া যাব আমি শ্বশুরবাড়ি/ বিদায় দেন কন্যার মা বিদায় দেন, কন্যা যেন ভালো থাকে শ্বশুরবাড়ি, এই দোয়া চাই– বর ও কনেপক্ষের হয়ে এ গানগুলো গেয়ে থাকেন পালকি বহনকারীরা। পালকি আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও পুরোনো বাহন। পালকি কাঁধে নিয়ে বয়ে চলা ব্যক্তি কাহার বা বেহারা নামে পরিচিত। পালকি নিয়ে চলার সময় ছন্দের তালে তালে উহুম না-উহুম না শব্দ করে এগিয়ে চলেন তারা গন্তব্যের পথে।
বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রতীক এই পালকি। এক সময় পালকির যুগ ছিল। পালকি ছিল প্রধান বাহন। কালের বিবর্তে কত কিছুই না পাল্টায়। পাল্টায় সংস্কৃতি, সভ্যতা, সেই সঙ্গে পাল্টায় মানুষের জীবনধারা। এই পরিবর্তনের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় সংস্কৃতির সুপরিচিতির পুরোনো ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের অন্যতম পালকি। এক সময় জমিদার-নবাবসহ সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল পালকি। তাদের সামান্য পথ চলতেও প্রয়োজন হতো পালকির। 
পালকির ব্যবহার আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে জীবন-জীবিকা ও প্রয়োজনীয়তার তাগিদে পালকি এখনও টিকে আছে কোনো কোনো জায়গায়। এমনই দেখা মেলে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী এলাকায়। বারুয়াখালী বাজারে গেলে দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় এই পালকির। বাজারে পালকি রাখা হয়েছে বর-কনে আনা-নেওয়ার কাজে। শৌখিন ব্যক্তিরা বিয়ের বাহন পালকি খুঁজে থাকেন। তাদের জন্যই বারুয়াখালীর বেহারাদের এই আয়োজন। বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন এই গ্রামের সরদারপাড়ার মানুষ। মাত্র দুই যুগ আগেও দোহার, নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার পালকি যেত এখান থেকে। 
দক্ষিণ বারুয়াখালী গ্রামের মো.

হাসেম দেওয়ান জানান, উপজেলার বক্তারনগর এলাকার জমিদার খোকা মিয়া জমিদারি দেখাশোনা ও খাজনা আদায়ের জন্য এ এলাকায় প্রথম পালকি ব্যবহার করেন। পালকি বহনের জন্য তিনি বারুয়াখালী এলাকার আকমত সরদার, মিলন সরদার, গইজুদ্দিন সরদার ও নছুরুদ্দিন সরদারকে নিয়োগ দেন। পরে আকমত সরদার নিজেই পালকি তৈরি করে বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্র ও পাত্রীকে আনা-নেওয়ার কাজ শুরু করেন।
বারুয়াখালী এলাকার হালেম মোল্লা জানান, বর্তমানে ২১০টির মতো পরিবারের বসবাস সরদারপাড়ায়। এক সময় এ গ্রামের কমবেশি সবাই এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পালকির ব্যবহার কমতে থাকায় পেশা বদলেছেন অনেকে। কেউ কেউ প্রবাসে কাজ করতে গেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, তিনটি পালকি বারুয়াখালী বাজারের বটতলায় রাখা আছে। কারও পালকির প্রয়োজন হলে এখানে এসে পালকির বেহারাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিয়ে যান।
পালকির মালিক দুলাল সরদার জানান, বংশপরম্পরায় তারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এক সময় পালকির ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখন পালকির ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। তার পরও শখের বশে অনেকে পালকি খোঁজেন। তাদের জন্য তারা এ সেবা চালু রেখেছেন।
আকমত সরদারের নাতি সিরাজ সরদার জানান, তাঁর দাদা প্রথম পালকি দিয়ে বর-কনেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের কাজটি করেন। ২০-২৫ বছর আগেও এই গ্রামে ১২-১৩টি পালকি ছিল। দুখু সরদার একজন বেহারা। তাঁর নিজস্ব একটি পালকিও রয়েছে। তিনি নিজে এবং অন্য তিনজন বেহারা নিয়ে পালকি চালান। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিয়ে থাকেন। ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় পালকি ভাড়া দেন। পালকির ব্যবহার কমে গেলেও নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালীতে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এখনএ পালকি টিকিয়ে রেখেছেন নিজেদের তাগিদে। সেখানে আমাদের অতীত ঐতিহ্য আজও বর্তমান। v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প লক প লক র ব য এক সময় র জন য সরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

নবাবগঞ্জে পালকির গ্রাম

বিদায় দেন বিদায় দেন মাগো, চলছি নতুন শ্বশুরবাড়ি, বিদায় লইয়া যাব আমি শ্বশুরবাড়ি/ বিদায় দেন কন্যার মা বিদায় দেন, কন্যা যেন ভালো থাকে শ্বশুরবাড়ি, এই দোয়া চাই– বর ও কনেপক্ষের হয়ে এ গানগুলো গেয়ে থাকেন পালকি বহনকারীরা। পালকি আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও পুরোনো বাহন। পালকি কাঁধে নিয়ে বয়ে চলা ব্যক্তি কাহার বা বেহারা নামে পরিচিত। পালকি নিয়ে চলার সময় ছন্দের তালে তালে উহুম না-উহুম না শব্দ করে এগিয়ে চলেন তারা গন্তব্যের পথে।
বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রতীক এই পালকি। এক সময় পালকির যুগ ছিল। পালকি ছিল প্রধান বাহন। কালের বিবর্তে কত কিছুই না পাল্টায়। পাল্টায় সংস্কৃতি, সভ্যতা, সেই সঙ্গে পাল্টায় মানুষের জীবনধারা। এই পরিবর্তনের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় সংস্কৃতির সুপরিচিতির পুরোনো ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের অন্যতম পালকি। এক সময় জমিদার-নবাবসহ সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল পালকি। তাদের সামান্য পথ চলতেও প্রয়োজন হতো পালকির। 
পালকির ব্যবহার আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে জীবন-জীবিকা ও প্রয়োজনীয়তার তাগিদে পালকি এখনও টিকে আছে কোনো কোনো জায়গায়। এমনই দেখা মেলে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী এলাকায়। বারুয়াখালী বাজারে গেলে দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় এই পালকির। বাজারে পালকি রাখা হয়েছে বর-কনে আনা-নেওয়ার কাজে। শৌখিন ব্যক্তিরা বিয়ের বাহন পালকি খুঁজে থাকেন। তাদের জন্যই বারুয়াখালীর বেহারাদের এই আয়োজন। বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন এই গ্রামের সরদারপাড়ার মানুষ। মাত্র দুই যুগ আগেও দোহার, নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার পালকি যেত এখান থেকে। 
দক্ষিণ বারুয়াখালী গ্রামের মো. হাসেম দেওয়ান জানান, উপজেলার বক্তারনগর এলাকার জমিদার খোকা মিয়া জমিদারি দেখাশোনা ও খাজনা আদায়ের জন্য এ এলাকায় প্রথম পালকি ব্যবহার করেন। পালকি বহনের জন্য তিনি বারুয়াখালী এলাকার আকমত সরদার, মিলন সরদার, গইজুদ্দিন সরদার ও নছুরুদ্দিন সরদারকে নিয়োগ দেন। পরে আকমত সরদার নিজেই পালকি তৈরি করে বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্র ও পাত্রীকে আনা-নেওয়ার কাজ শুরু করেন।
বারুয়াখালী এলাকার হালেম মোল্লা জানান, বর্তমানে ২১০টির মতো পরিবারের বসবাস সরদারপাড়ায়। এক সময় এ গ্রামের কমবেশি সবাই এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পালকির ব্যবহার কমতে থাকায় পেশা বদলেছেন অনেকে। কেউ কেউ প্রবাসে কাজ করতে গেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, তিনটি পালকি বারুয়াখালী বাজারের বটতলায় রাখা আছে। কারও পালকির প্রয়োজন হলে এখানে এসে পালকির বেহারাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিয়ে যান।
পালকির মালিক দুলাল সরদার জানান, বংশপরম্পরায় তারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এক সময় পালকির ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখন পালকির ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। তার পরও শখের বশে অনেকে পালকি খোঁজেন। তাদের জন্য তারা এ সেবা চালু রেখেছেন।
আকমত সরদারের নাতি সিরাজ সরদার জানান, তাঁর দাদা প্রথম পালকি দিয়ে বর-কনেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের কাজটি করেন। ২০-২৫ বছর আগেও এই গ্রামে ১২-১৩টি পালকি ছিল। দুখু সরদার একজন বেহারা। তাঁর নিজস্ব একটি পালকিও রয়েছে। তিনি নিজে এবং অন্য তিনজন বেহারা নিয়ে পালকি চালান। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিয়ে থাকেন। ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় পালকি ভাড়া দেন। পালকির ব্যবহার কমে গেলেও নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালীতে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এখনএ পালকি টিকিয়ে রেখেছেন নিজেদের তাগিদে। সেখানে আমাদের অতীত ঐতিহ্য আজও বর্তমান। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ